HSC Islam Assignment

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ দ্বিতীয় সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম শিক্ষা ২য় পত্র। এটি অনুসরণ করার মাধ্যমে তোমরা ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রদত্ত অ্যাসাইনমেন্টে মানবিক বিভাগের ইসলাম শিক্ষা পাঠ বইয়ের ২য় এসাইনমেন্ট খুব ভালো ভাবে সম্পন্ন করতে পারবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত 2024 সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য মানবিক বিভাগের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের অ্যাসাইনমেন্ট সমাধান করার কৌশল অবলম্বন করে প্রশ্নসমূহের যথাযথ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে তোমরা নীতি অনুসরণ করে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারো।

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ দ্বিতীয় সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম শিক্ষা ২য় পত্র

বিকল্প পদ্ধতিতে মূল্যায়নের লক্ষ্যে সরকারি বেসরকারি কলেজসমূহের মানবিক বিভাগ থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণই সক পরীক্ষার্থীদের জন্য ইসলাম শিক্ষা পাঠ্য বইয়ের দ্বিতীয় এসাইনমেন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে প্রথম অধ্যায়ঃ আল কোরআন থেকে।

এখানে শিক্ষার্থীরা সূরা আল বাকারা বাংলা অনুবাদ, শানে নুযুল ও শিক্ষা অনুধাবনের মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পন্ন করতে হবে। অ্যাসাইনমেন্ট লেখার সময় শিক্ষার্থীরা অবশ্যই ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ইসলাম শিক্ষা দ্বিতীয় পত্রের দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নির্দেশনাগুলো ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে।

নিচের ছবিতে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ইসলাম শিক্ষা তৃতীয় পত্রের দ্বিতীয় এসাইনমেন্ট বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো

https://i.imgur.com/ZoV5QUe.jpg

অ্যাসাইনমেন্টঃ সূরা আল বাকারার ৮ থেকে ১০ আয়াত এর অর্থ, শিক্ষা ও মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ;

অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি): নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে হবে;

১. সূরা আল বাকারার আট থেকে দশ আয়াত এর অর্থ, ২. শানে নুযুল, ৩. ৮ থেকে ৯ আয়াতের শিক্ষা, ৪. মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য, ৫. বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মুনাফেকি পরিহার করার উপায়;

রুবিক্স অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের যে সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে:

  • ক. সূরা আল বাকারার ৮ থেকে ১০ আয়াত এর অর্থ;
  • খ. সূরা আল বাকারার ৮ থেকে ১০ আয়াতের শানে নুযুল;
  • গ. সূরা আল বাকারা ৮ থেকে ৯ আয়াতের শিক্ষা;
  • ঘ. মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য;
  • ঙ. বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটের মুনাফেকি পরিহার করার উপায়;

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ দ্বিতীয় সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম শিক্ষা ২য় পত্র উত্তর বা সমাধান

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মানবিক বিভাগের ইসলাম শিক্ষা দ্বিতীয় পত্রের দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নির্দেশনাগুলো এবং মূল্যায়ন নির্দেশকগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাছাই করার নমুনা উত্তর প্রদান করা হলো।

এটি অনুসরণ করার করার মাধ্যমে মানবিক বিভাগের ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ইসলাম শিক্ষা দ্বিতীয় পত্রের এসাইনমেন্ট উত্তর লিখলে সর্বোচ্চ নাম্বার পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে মূল্যায়ন রুবিক্স উল্লেখিত পাঁচটি প্রশ্নের ধারাবাহিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট বুঝতে সুবিধা হয়।

প্রশ্ন-ক ও খ: সূরা আল বাকারার ৮ থেকে ১০ আয়াত এর অর্থ ও শানে নুযুল;

প্রশ্ন ক ও খ এর উত্তর

সূরা আল বাকারার ৮ থেকে ১০ আয়াতঃ

আয়াত নং-৮: وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُمْ بِمُؤْمِنِينَ (৮)

বাংলা অনুবাদ (অর্থ): মানুষের মধ্যে এমন লোক রয়েছে যারা বলে, ‘আমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী’, কিন্তু তারা বিশ্বাসী নয়। (সূরা ২ বাকারা: ৮)

শানে নুযুলঃ (সূরার প্রথমে ঈমানদার ও পরে কাফিরদের অবস্থা বর্ননার পর মুনাফিকদের আলোচনা হচ্ছে।)

এখান থেকে সূরার ২০তম আয়াত পর্যন্ত মদীনার সেই সময়ের মুনাফিকদের অবস্থা ও কথা বর্ননা করা হচ্ছে। যাদের মুখের সাথে অন্তরের মিল নেই; যারা প্রকাশ্যে ঈমানের স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে ছিল কাফের।

ইবনে আব্বাস রা.-এর বর্ণনায় তারা হলো আউস ও খাযরাজ গোত্রের কিছু লোক ও কতক ইহুদী। যার প্রধান ছিলো আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল।

নিফাক দুই ধরণের। ১.অন্তরের ও ২.কাজের। বিশ্বাসগত মুনাফিকদের স্খান জাহান্নামের সর্বনিম্ন। আর কর্মগত মুনাফিকরাও বড় জালিম ও পাপাচারী।

আয়াত নং-৯: يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ (৯)

বাংলা অনুবাদ (অর্থ): আল্লাহ এবং বিশ্বাসীগণকে তারা প্রতারিত করতে চায়, অথচ তারা যে নিজেদের ভিন্ন কাউকেও প্রতারিত করে না, এটা তারা অনুভব করতে পারে না। ( সূরা ২ বাকারা: ৯ )

শানে নুযুলঃ কাতাদাহ রহ. বলেন- তাদের মুখ পৃথক, অন্তর পৃথক, কাজ পৃথক, বিশ্বাস পৃথক, সকাল পৃথক, সন্ধ্যা পৃথক, তারা নৌকার মত যা বাতাসে কখনো এদিকে দোলে কখনো ঐদিকে দোলে।

(ইবনে আবী হাতিম) তারা মুসলমানদের ধোঁকা দেয়ার জন্য করলেও আল্লাহ বলেন. তারা নিজেরাই ধোঁকায় পড়ছে।

আয়াত নং-১০: فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّهُ مَرَضًا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ

বাংলা অনুবাদ (অর্থ): তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি বৃদ্ধি করেছেন ও তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাচারী। (সূরা ২ বাকারা: ১০ )

শানে নুযুলঃ ‘ব্যাধি’ বলতে এখানে সন্দেহ, সংশয় উদ্দেশ্য। এখানে কুফরী ও নিফাক্বের (অন্তরের) ব্যাধিকে বুঝানো হয়েছে। এটা ধর্মীয় ব্যধি, দৈহিক নয়। এই ব্যাধি যদি সারানোর চিন্তা না করা হয়, তাহলে তা বাড়তে থাকে।

অনুরূপ মিথ্যা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা, আমানতের খিয়ানত করা মুনাফিক্বদের নিদর্শন; যা হতে দূরে থাকা অপরিহার্য।

প্রশ্ন-গ: সূরা আল বাকারা ৮ থেকে ৯ আয়াতের শিক্ষা;

সুরা বাকারার ৮ নম্বর আয়াতের শিক্ষাঃ সুরা বাকারার ৮ নম্বর আয়াতের প্রধান শিক্ষনীয় বিষয় হলো ঈমান অন্তরের ব্যাপার, মৌখিক কিছু নয়। তাই কোন ব্যক্তিকেই চেনার জন্য শুধু তার মৌখিক বক্তব্যকে যথেষ্ট মনে করা উচিত নয়।

সুরা বাকারার ৯ নম্বর আয়াতের শিক্ষাঃ সুরা বাকারার ৯ নম্বর আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হলো-

প্রথমতঃ মুনাফিকরা ধোকাবাজ। বাহ্যিক চেহারা ও আচরণ দেখে মানুষকে চেনা যায় না। তাই মুসলমানদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।

দ্বিতীয়তঃ অন্যদের সাথে প্রতারণা করা থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। কারণ প্রতারণার কুফল প্রতারকই আক্রান্ত হয়।

তৃতীয়তঃ মুনাফিক ব্যক্তি নিজেকে খুব চালাক বলে মনে করে অথচ সে নির্বোধ। সে জানে না যে তার প্রতিপক্ষ আল্লাহ সবার মনের খবর রাখেন।

প্রশ্ন-ঘ. মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য;

মুখের কথার সঙ্গে অন্তরের ভাবনার যার মিল নেই সে মুনাফিক। হাদিসের ভাষায় এ বদভ্যাসকে বলা হয় ‘নিফাক’ যার অর্থ দ্বিমুখিতা ও কপটাচার। অন্তরে কুফরি রেখে মুখে ইসলাম ঘোষণা করাকে নিফাক বলা হয়। অর্থবিত্ত ও পার্থিব সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের জন্য তারা এ ঘৃণ্যপথ অবলম্বন করে। ধর্ম, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। সুরা বাকারার ৮ থেকে ১০ নম্বর আয়াতের আলোকে মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল।

মুনাফিকরা বিশ্বাসী নয়ঃ মুনাফিকরা প্রকাশ্যে নিজেদেরকে এবং পরকালে বিশ্বাসী বলে দাবি করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ঈমানদার নয়। বরং অন্তরে তারা ইসলামের প্রতি অবিশ্বাস পোষণ করে।

মুনাফিকরা ধোকাবাজঃ মুনাফিকরা ধারণা করে তারা আল্লাহ এবং তার রাসুল সঃ ইসলামের এবং মুমিনদের কে ধোকা দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তারা কেবল নিজেদেরকেই ধোকা এবং প্রবঞ্চনার ছলে আবদ্ধ করে ধ্বংস ও ক্ষতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ তারা এ কথাটি সহজে বুঝতে পারে না।

মুনাফিকরা এ পৃথিবীর বিপর্যয় সৃষ্টিকারীঃ মুনাফিকরা গোপন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পৃথিবীকে অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে রাখে। এ ব্যাপারে যখন যে, তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় অশান্তি সৃষ্টি করো না। তখন তারা সাধু সেজে বলতে থাকে আমরা পৃথিবীতে শান্তি স্থাপন আকারে। প্রকৃতপক্ষে তারাই যত অশান্তি সৃষ্টি মূলে।

মুনাফিকদের হৃদয়ে রয়েছে কপটতা রোগঃ মুনাফিকদের হৃদয়ে রয়েছ গোপনে ও প্রবঞ্চনার রোগ। কখন কাকে ক্ষতি করবে, কখন কার বিরুদ্ধে লাগবে, কখন সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবে। এই চারিত্রিক রোগে তারা সর্বদা তাড়িত থাকে।

মুনাফিকরা নির্বোধঃ মুনাফিকদের খাঁটিভাবে ঈমান আনতে বলা হলে তারা মুখের উপর বলে দেয়, তারা কি নির্বোধের মতো অন্ধভাবে ঈমান আনবে? আল্লাহ বলেন- প্রকৃতপক্ষে তারাই নির্বোধ ও অজ্ঞ। কিন্তু এতোটুকু বাস্তবতা তারা বুঝতে পারে না।

মুনাফিকরা পথ হারা, অন্ধ ও বধিরঃ মুনাফিকরা পথ হারা তাদের অন্তর ঘোর অন্ধকারে আচ্ছন্ন। তাই মহান আল্লাহ তাদের স্পষ্ট ভাষায় বৌদির, মুখ, ও অন্ধ বলে আখ্যায়িত করেছেন। রাসুল (স:) মুনাফিকদের কিছু লক্ষণ তুলে ধরে বলেন- মুনাফিকরা-

  1. ক. কথায় কথায় মিথ্যা বলে,
  2. খ. প্রতিশ্রুতি দিলে ভঙ্গ করে,
  3. গ. আমানতের খিয়ানত করে, এবং
  4. ঘ. ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল গালমন্দ করে।

এসব লক্ষণ ও চরিত্র যাদের মধ্যে পাওয়া যায় তারাই মূলত মুনাফিক। তাদের হীন ষড়যন্ত্র অনিষ্ট হতে সর্বদা সতর্ক থাকতে কুরআন ও হাদীসে হুশিয়ার করা হয়েছে।

প্রশ্ন-ঙ: বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটের মুনাফেকি পরিহার করার উপায়;

একজন মুসলিম নিজকে মুনাফিকী থেকে পূতপবিত্র রাখতে চাইলে তাকে অবশ্যই সদগুণাবলী ও সৎকর্মে বিভূষিত হ’তে হবে। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটের মুনাফিকতা থেকে মুক্তি পাওয়া বা মুনাফেকি পরিহার করার উপায় সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:

১. ছালাতের জামা‘আতে আগেভাগে হাযির হওয়া এবং তাকবীরে তাহরীমা পাওয়া:

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا فِى جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيْرَةَ الأُوْلَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ.

‘যে ব্যক্তি প্রথম তাকবীর প্রাপ্তিসহ একাধারে চল্লিশ দিন (পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত) জামা‘আতে আদায় করবে তার জন্য দু’টি মুক্তিপত্র লিখে দেওয়া হবে। একটি জাহান্নাম থেকে মুক্তি, দ্বিতীয়টি মুনাফিকী থেকে মুক্তি’ (১৪)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি (براءة من النار) অর্থ জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতি লাভ করবে। যেমন বলা হয়, بَرَأَ مِنَ الدِّيْنِ وَالْعَيْبِ : خَلَصَ ‘অমুক ঋণ ও দোষ থেকে মুক্তি পেয়েছে; অর্থাৎ খালাস পেয়েছে। দোষ থেকে তার মুক্তি মিলেছে অর্থাৎ নির্দোষ সাব্যস্ত হয়েছে।

নিফাক থেকে মুক্তি মেলা (براءة من النفاق) প্রসঙ্গে আল্লামা তিবী বলেছেন, ঐ লোকটি তার ছালাতের বদৌলতে দুনিয়াতে মুনাফিকের মত আমল করা থেকে নিরাপদ থাকবে এবং একনিষ্ঠ মুখলিছের মত আমল করার তাওফীক লাভ করবে।

আর আখিরাতে সে মুনাফিকের জন্য বরাদ্দ শাস্তি থেকে নিরাপদে থাকবে। সে যে মুনাফিক ছিল না তৎসম্পর্কে সাক্ষ্য দেওয়া হবে। অর্থাৎ বলা হবে মুনাফিকরা যখন ছালাতে দাঁড়াত তখন আলসেমি করত। কিন্তু এই লোকটা ছিল তাদের বিপরীত। মিরকাত গ্রন্থে এমনটাই বলা হয়েছে। (১৫)

২. সদাচার ও দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান লাভ:

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَصْلَتَانِ لاَ تَجْتَمِعَانِ فِىْ مُنَافِقٍ حُسْنُ سَمْتٍ وَلاَ فِقْهٌ فِى الدِّيْنِ-

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘দু’টি আচার কোন মুনাফিকের মধ্যে মেলে না- সদাচার ও দ্বীন সম্পর্কিত জ্ঞান’।

হাদীছটিতে উদ্ধৃত حُسْنُ سَمْتٍ অর্থ কল্যাণের পথের অনুসন্ধান এবং নেককার লোকদের গুণে গুণান্বিত হওয়া, সেই সঙ্গে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সবরকম দোষ থেকে দূরে থাকা।

وَلاَ فِقْهٌ فِى الدِّيْنِ বাক্যটি لاَ অব্যয় যোগে পূর্বের বাক্যের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। কেননা حُسْنُ سَمْتٍ বাক্যাংশটি নেতিবাচক অর্থের অঙ্গীভূত। এজন্যই وَلاَ فِقْهٌ فِى الدِّيْنِ বাক্যাংশেও لاَ বা নাবাচক অব্যয়টি আগের নাবাচকতাকে জোরদার করেছে মাত্র।

৩. দানশীলতা :

عَنْ أَبِىْ مَالِكٍ الأَشْعَرِىِّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الطُّهُوْرُ شَطْرُ الإِيْمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلأُ الْمِيْزَانَ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلآنِ أَوْ تَمْلأُ مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَالصَّلاَةُ نُوْرٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ، كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوْبِقُهَا.

আবু মালিক আল-আশ‘আরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক। একবার আল-হামদুলিল্লাহ উচ্চারণে দাঁড়িপাল্লা (ছওয়াবে) ভরে যায়;

আর সুবহানাল্লাহ এবং আল-হামদুলিল্লাহ বলায় আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী সমুদয় স্থান (ছওয়াবে) ভরে যায়। (মানুষের জন্য) ছালাত হ’ল আলো, দান হ’ল প্রমাণ এবং ধৈর্য হ’ল জ্যোতি।

আর কুরআন মাজীদ (ক্বিয়ামতে) হয় তোমার পক্ষে প্রমাণ হয়ে দাঁড়াবে অথবা তোমার বিরুদ্ধে। ভোর বেলায় (ঘুম থেকে জাগরণের মাধ্যমে) প্রত্যেকটা মানুষ নিজেকে (আমলের নিকট) বেঁচে দেয়। তারপর ভাল আমলের মাধ্যমে হয় সে নিজকে মুক্ত করে অথবা খারাপ আমলের মাধ্যমে নিজকে ধ্বংস করে’।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেছেন, দান-ছাদাক্বা দাতার ঈমানের প্রমাণ। কেননা মুনাফিক দান-ছাদাক্বা থেকে হাত গুটিয়ে রাখে, সে দান-ছাদাক্বায় বিশবাসী নয়। সুতরাং যে দান করে সে তার দানের মাধ্যমে তার ঈমানের সত্যতা জ্ঞাপন করে।

৪. রাত জেগে ছালাত আদায় :

কাতাদা (রহঃ) বলেন, মুনাফিক খুব কমই রাত জাগে (قلما ساهر الليل منافق)।[20] তার কারণ মুনাফিকরা লোকদের দেখিয়ে দেখিয়ে সৎকাজ করতে আনন্দ পায়। নিরিবিলি থাকাকালে তাই সে সৎ কাজ করার উদ্দীপনা অনুভব করে না।

সুতরাং কোন ব্যক্তি যখন রাত জেগে ছালাত আদায় করে, তখন তা তার মুনাফিক না হওয়ার এবং সত্য মুমিন হওয়ার প্রমাণ বহন করে।

৫. আল্লাহর পথে জিহাদ:

আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ وَلَمْ يُحَدِّثْ بِهِ نَفْسَهُ مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنْ نِّفَاقٍ ‘যে ব্যক্তি যুদ্ধ-জিহাদ না করে অথবা নিজের মনে যুদ্ধ-জিহাদের সংকল্প না করে মারা যাবে, সে মুনাফিকীর একটি শাখার উপর মারা যাবে’

ইমাম নববী বলেছেন, মুনাফিকরা যুদ্ধে যোগদান না করে বাড়ি বসে থাকে। তাই যে উক্ত হাদীছ মত কাজ করবে সে মুনাফিকদের সদৃশ হয়ে যাবে। কেননা জিহাদ তরক করা মুনাফিকীর একটি শাখা বা পর্যায়।

এ হাদীছ থেকে একথাও প্রমাণিত হয় যে, যে ব্যক্তি কোন কাজের নিয়ত বা ইচ্ছা করল কিন্তু তা করার আগেই সে মারা গেল, তার ক্ষেত্রে ঐ নিন্দা-সাজা প্রযোজ্য হবে না যা সেই কাজের নিয়ত না করেই মৃত্যুবরণকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

৬. বেশী বেশী আল্লাহর যিকির করা:

আল্লামা ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলার কথা বেশী বেশী স্মরণ করলে মুনাফিকী থেকে মুক্তি মেলে। কেননা মুনাফিকরা আল্লাহকে কম স্মরণ করে। আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকদের এহেন আচরণ সম্পর্কে বলেছেন, وَلاَ يَذْكُرُوْنَ اللهَ إِلاَّ قَلِيْلاً ‘তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে’ (নিসা ৪/১৪২)।

কা‘ব (রাঃ) বলেছেন, যে আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করে সে মুনাফিকী থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এজন্যই আল্লাহ তা‘আলা সূরা আল-মুনাফিকূন-এর উপসংহার টানতে গিয়ে বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا لاَ تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلاَ أَوْلاَدُكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَمَنْ يَّفْعَلْ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ-

‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির/স্মরণ থেকে অমনোযোগী করে না দেয়। আর যারাই এমনটা করবে তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত’ (মুনাফিকূন ৬৩/৯)।

মুনাফিকরা আল্লাহর স্মরণ সম্পর্কে উদাসীন বনে যাওয়ার কারণে মুনাফিকীর খপ্পরে পড়েছিল। তাই এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদের যিকির থেকে উদাসীন বা বেখেয়াল হওয়া সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

জনৈক ছাহাবীকে খারেজীরা মুনাফিক কি-না জিজ্ঞেস করা হ’লে, তিনি বললেন, ‘না, তারা মুনাফিক নয়; কেননা মুনাফিকরা আল্লাহকে খুব অল্পই স্মরণ করে’। সুতরাং অল্প-স্বল্প যিকর মুনাফিকীর চিহ্ন ও প্রতীক এবং বেশী বেশী যিকরে মুনাফিকীর খপ্পরে পড়া থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

যিকররত অন্তরকে আল্লাহ তা‘আলা মুনাফিকীর পরীক্ষার মুখোমুখি করেন না, এ পরীক্ষা কেবল তাদের জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলার যিকরে উদাসীন।

৭. দো‘আ:

জুবায়ের ইবনু নুফায়ের (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সিরিয়ার হিমছ শহরে আবুদ দারদা (রাঃ)-এর বাড়িতে তাঁর সাথে দেখা করতে গেলাম। আমি যখন সেখানে পৌঁছলাম তখন দেখলাম, তিনি তাঁর ছালাতের জায়গায় দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করছেন।

যখন তিনি বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়া শেষ করলেন তখন মুনাফিকী থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন। তাঁর ছালাত শেষ হ’লে আমি বললাম, হে আবুদ দারদা আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! মুনাফিকী নিয়ে আপনার ভাবনা কেন?

তিনি অবাক সুরে বললেন, আল্লাহ মাফ কর! আল্লাহ মাফ কর! আল্লাহ মাফ কর! বালা-মুছীবতের হাত থেকে কে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে? বালা-মুছীবতের হাত থেকে কে নিশ্চিন্ত থাকতে পারে? আল্লাহর কসম! একজন মানুষ মুহূর্তের মধ্যে বিপদে পড়তে পারে এবং সেজন্যে তার দ্বীন-ধর্মও ত্যাগ করতে পারে।

৮. আনছারদের ভালবাসা:

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, آيَةُ الإِيْمَانِ حُبُّ الأَنْصَارِ، وَآيَةُ النِّفَاقِ بُغْضُ الأَنْصَارِ ‘ঈমানের নিদর্শন আনছারদের প্রতি ভালবাসা এবং মুনাফিকীর নিদর্শন আনছারদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা’।

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ ইসলাম শিক্ষা সকল অ্যাসাইনমেন্ট দেখুন

এ্যাসাইনমেন্ট নং এ্যাসাইনমেন্ট শিরোনাম প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন
০১ সামাজিক অবক্ষয় রােধে ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব বিশ্লেষণ এ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন
০২ সূরা আল বাকারার ৮ থেকে ১০ আয়াতের অর্থ, শিক্ষা ও মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ এ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্ন ও উত্তর দেখুন
I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.