islamic pic

এইচএসসি ২০২৪ এর মানবিক বিভাগের সুপ্রিয় পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের জন্য প্রণীত এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ ইসলাম শিক্ষা প্রথম পত্র ১ম অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা নমুনা উত্তর (সামাজিক অবক্ষয় রােধে ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব বিশ্লেষণ) প্রণয়ন করা হয়েছে। তোমরা যারা সরকারি, বেসরকারি কলেজের এইচএসসি ২০২৪ পরীক্ষার্থী আছো তোমাদের ১ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ইসলাম শিক্ষা প্রথম পত্র বিষয়ের একটি নির্ধারিত কাজ দেয়া হয়েছিল। যথাযথ মূল্যায়ন নির্দেশনা অনুসরণ করে তোমাদের জন্য ইসলাম শিক্ষা প্রথম পত্র ১ম এ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা নমুনা উত্তর দেওয়া হল।

মানবিক বিভাগের যে সকল শিক্ষার্থী নৈর্বাচনিক বিষয় হিসেবে ইসলাম শিক্ষা নিয়েছে তাদের জন্য প্রথম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে ইসলাম শিক্ষা পাঠ বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের ইসলাম শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে।

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ইসলাম শিক্ষা প্রথম পত্র ১ম অ্যাসাইনমেন্ট

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ইসলাম শিক্ষা প্রথম পত্র ১ম অ্যাসাইনমেন্ট (HSC 2024 Islamic Education First Paper 1st Assignment) সম্পন্ন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা ইসলামী শিক্ষার ধারণা, উদ্দেশ্য ও ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।

নিচের ছবিতে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ইসলাম শিক্ষা প্রথম পত্র ১ম অ্যাসাইনমেন্ট (HSC 2024 Islamic Education First Paper 1st Assignment) বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।

https://i.imgur.com/7PgR5lz.jpg

স্তর: এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪, বিভাগ: মানবিক, বিষয়ঃ ইসলাম শিক্ষা, পত্র: প্রথম, বিষয় কোড-২৪৯, অ্যাসাইনমেন্ট নং-১

অধ্যায় ও শিরোনামঃ প্রথম অধ্যায়: ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতি;

অ্যাসাইনমেন্টঃ সামাজিক অবক্ষয় রােধে ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব বিশ্লেষণ

শিখনফলঃ ইসলামি শিক্ষার ধারণা, উদ্দেশ্য ও ইসলামি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা।

নির্দেশনাঃ (সংকেত/ধাপ/পরিধি): নিচের বিষয়গুলাে বিবেচনায় রেখে লিখতে হবে-

  • ১. ইসলামি শিক্ষার ধারণা।
  • ২. ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্য।
  • ৩. ইসলামি শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা।
  • ৪. ইসলামি শিক্ষার অভাবে সামাজিক অবক্ষয়সমূহ চিহ্নিত করণ ও সামাজিক অবক্ষয়সমূহ থেকে উত্তরণের উপায়।

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। বিশ্বের এক মহৎ আদর্শের নাম। বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও ভূখণ্ডের কৃত্রিমতার ঊর্ধ্বে এটি একটি বিশ্বজনীন চেতনা। এক আল্লাহর অকৃত্রিম বন্দেগী ও অখন্ড মানবিক সমতা হচ্ছে এই আদর্শের ভিত্তিভূমি। আর এটাই মুসলিম জাতিসত্তার মূল উপাদান। তাই একটি আদর্শবাদী মুসলিম জাতির শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ইসলামী দর্শনে। আর এর সংস্কৃতিতে হয়ে উঠে ইসলামের সূক্ষ্মতা। এ কারণে মুসলিম জাতিসত্তা বিশ্বের অন্যান্য জাতিসত্তা থেকে গুণগতভাবে পৃথক ও স্বতন্ত্রভাবে সমুজ্জ্বল।

ইসলামি শিক্ষার ধারণাঃ

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। মানব জীবনের সামগ্রিক ও বিভাগের জন্য এর নিজস্ব মূলনীতি ও বিধান রয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও ইসলামের দিক নির্দেশনা রয়েছে। ইসলাম শিক্ষা বলতে বোঝায় যে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন আদর্শ হিসেবে শিক্ষা দেয়ার বন্দোবস্ত থাকে তাই ইসলামী শিক্ষা। এই শিক্ষা লাভ করার ফলে শিক্ষার্থীদের চরিত্র এমনভাবে গড়ে ওঠে যাতে ইসলামের আদর্শে জীবনের সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার যোগ্যতা অর্জিত হয়। এককথায় ইসলাম সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করার শিক্ষা হলো ইসলামী শিক্ষা।

শিক্ষাই জীবনের আলো। জ্ঞান মানুষের মূল্যবান সম্পদ। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ অবদানে মহামূল্যবান জ্ঞানের কল্যাণেই মানবজাতি, ফেরেশতা তথা সমগ্র সৃষ্টিজগতের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে সমাসীন। আর এ কারণে মানুষ মহান আল্লাহর প্রতিনিধি হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ইসলামের শিক্ষা ব্যবস্থা এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের দাবিদার।

ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্যঃ

মানবতার বিকাশ সাধন:

শিক্ষার প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হলো মনুষ্যত্ব ও মানবিক গুণাবলীর বিকাশ সাধন করা। মানব প্রকৃতির লুকায়িত মেধা, মননশীলতা, সৃজনশীলতা ও কর্মকুশলতা শিক্ষার মাধ্যমেই বিকাশ লাভ করে।

কোরআন হাদীসের জ্ঞান আহরণের মাধ্যম এই মনুষ্যত্বের প্রকৃত বিকাশ, আত্মার উন্নতি, আধ্যাত্মিক জগতের আল্লাহ ও সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কিত জ্ঞান অবগত হওয়া যায়। মানুষের মধ্যে স্নেহ-মমতা, দূরদর্শিতা, নেতৃত্ব ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী অর্জনের মাধ্যমেই উৎকর্ষ লাভ করে বিকশিত হয়। এই শিক্ষার গুণেই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে সৃষ্টি জগতের উপর। কুরআনের ভাষায়-

নিশ্চয়ই আমি আদম সন্তানকে সম্মান দান করেছি। (সূরা বনী ইসরাঈল -৭০)

স্রষ্টা ও সৃষ্টির পরিচয়ের জন্য শিক্ষা:

মহান আল্লাহর আনুগত্য ও বন্দেগী সম্পর্কে অবগত হওয়াই ইসলামি শিক্ষার উদ্দেশ্য। কেননা আল্লাহ বলেন-

আমি জিন ও মানব জাতিকে আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি । (সূরা যারিয়াত- ৫৬)

আল্লাহর আনুগত্য ও বন্দিগী করতে হলে প্রথমে আল্লাহর সঠিক পরিচয় আনুগত্য ও বন্দেগির ধরন এবং আদায় করার নিয়ম নীতি অবগত হওয়া একান্ত অপরিহার্য। আর শিক্ষা ব্যতীত এগুলো অবগত হওয়া যায়না। প্রকৃত জ্ঞানীরা আল্লাহর স্বরূপ বোঝে এবং তার ইবাদত করতে পারে। কুরআনে বলা হয়েছে-

নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাগণ এর মধ্যে কেবল বিদ্বানগণ আল্লাহকে ভয় করে। (সূরা ফাতির -২৮)

ইসলামী সংস্কৃতির সাথে পরিচয় লাভ:

ইসলামী শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ইসলামী শিক্ষা সংস্কৃতির সাথে পরিচয়। অপসংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ। ইসলামের রয়েছে মানবতার ঊষালগ্ন থেকে চলে আসা সভ্যতা ও ঐতিহ্যের গৌরবময় উত্তরাধিকার। ইসলামের সভ্যতা, সাহিত্য ও জ্ঞানের অফুরন্ত ভান্ডার এর সাথে পরিচয়ের জন্য ইসলামী শিক্ষা খুবই জরুরী বিষয়।

শান্তিময় সুন্দর জীবনের জন্য:

মানুষের জীবনকে সুন্দর ও শান্তিময় করার জন্য ইসলামী শিক্ষার অপরিহার্য। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পর্যন্ত জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সহায়তা করে ইসলামী শিক্ষা। মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর খলিফা। পৃথিবীতে মানুষের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। এ দায়িত্বের প্রতি যত্নবান ও সচেতন করে তোলা ইসলামী শিক্ষার উদ্দেশ্য।

আল্লাহর দ্বীনকে সঞ্জীবিত রাখা:

সমাজজীবনে আল্লাহর দ্বীনকে সঞ্জীবিত করাও প্রতিষ্ঠা করার গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বনবীর তিরোধান এর মাধ্যমেই নবুয়তের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তার পরে আর কোন নবীর আগমন ঘটবে না। নবীর উম্মাহর উপর দ্বীনের হিফাজত প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব বর্তেছে। কাজেই আল্লাহর দ্বীন শিক্ষা করে একে সঞ্জীবিত রাখা ও প্রতিষ্ঠা করা মুসলমান উম্মাহর প্রধান কর্তব্য। এজন্য মুসলিম উম্মাহর ওলামায়ে কেরামকে নবীদের উত্তরসূরী বলা হয়েছে। মহানবী (স.) ঘোষণা করেছেন-

যে ব্যক্তি ইসলামকে সঞ্জীবিত করার উদ্দেশ্যে জ্ঞান শিক্ষা করতে করতে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, জান্নাতের মধ্যে নবীগণ ও তার মধ্যে মাত্র এক ধাপ ব্যবধান থাকবে।

আত্মকর্মসংস্থান:

হালাল উপার্জনে উৎসাহিত করা ও আত্ম-কর্মসংস্থানে সক্ষম করে গড়ে তোলা ইসলামী শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য। আল্লাহ তায়ালা যেমন বান্দাকে সালাত, সাওম ও অন্যান্য ইবাদত করার আদেশ দিয়েছেন. তেমনি জীবিকা উপার্জনেরও নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেন-

সালাত সমাপন করে তোমরা পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়ে এবং আল্লাহর অনুগ্রহরাজি সন্ধান করো। (সূরা জুমুআ-১০)

মহানবীর (সা.) জীবিকা উপার্জনকে ফরজ বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন-

হালাল জীবিকা উপার্জন ফরজের পরেও একটি ফরজ। -বায়হাকী

বিদ্যা অর্জন ব্যতীত সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিখিল বিশ্বের অফুরন্ত সম্পদ সৃষ্টি করেছেন। বিদ্যা অর্জন ছাড়া মানুষ সে সকল সম্পদ আবিষ্কার ও আহরণ করে কাজে লাগাতে পারে না। কাজেই পার্থিব জীবনে সুখ সমৃদ্ধি আনতে হলে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আল্লাহ তাআলার নিআমতরাজি অন্বেষণ করে তা নিজেদের ব্যবহারে লাগাতে হবে।

ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাঃ

ইসলামী শিক্ষা মানুষের জীবনে চলার জন্য অপরিহার্য। জ্ঞানের দ্বারা মূর্খতা দূরীভূত হয় এবং চিন্তা-গবেষণার পথ উন্মুক্ত হয়। জ্ঞানের দ্বারা উন্নতি-অগ্রগতির পথ সূচিত হয় এবং মানুষের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এজন্য ইসলামী জ্ঞান অর্জনের উপর বিশেষ তাগিদ দিয়েছে এবং শিক্ষালাভকে সকলের মৌলিক কর্তব্য বলে ঘোষণা করেছে।

জ্ঞান এর বিপরীত হলো অজ্ঞতা। ইসলামের দৃষ্টিতে তা ঘৃণিত। আল-কোরআন অজ্ঞতাকে ঘৃণার দৃষ্টিতে উল্লেখ করে তা থেকে পানাহ চাইতে বলে। কুরআনে এসেছে-

মূসা বললেনঃ আমি অজ্ঞ লোকদের মধ্যে গণ্য হওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। (সূরা বাকারা -৬৭)

ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কতিপয় দিক তুলে ধরা হলো-

বিদ্যা চর্চার উন্নতির চাবিকাঠি:

জ্ঞান বা বিদ্যা ছাড়া মানুষের উন্নতি হতে পারে না। যে ব্যক্তি যত বড় জ্ঞানী, সে ব্যক্তি তত বেশি উন্নত। তেমনি যে জাত জ্ঞানের দিক থেকে যত উন্নত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। চলমান বিশ্বে আজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যে দেশ বা জাতি উন্নত, তারাই মানব সভ্যতায় বেশি অবদান রাখতে পারছে। জ্ঞান চর্চার উন্নতির চাবিকাঠি। তাই জ্ঞান অন্বেষণের প্রয়োজন রয়েছে।

জ্ঞান মানুষকে জীবন পথের দিশা দেয়। সে কারণে যেখান থেকে এবং যত দূর হতে হোক না কেন, তা অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য অপরিহার্য। মহানবী (সা.) ঘোষণা করেছেন-

জ্ঞানের কথা জ্ঞানীর হারানো মহামূল্যবান ধন। তা সে যেখানেই পাবে তা গ্রহণ করার অধিকার তার আছে। ইবনে মাজাহ-

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন-

জ্ঞান বিস্তারের ক্ষেত্রে যাতে সবাই আপন আপন দায়িত্ব পালন করে, সেজন্য তোমরা একে অন্যকে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করবে। জ্ঞান বিস্তারে সাহায্য করতে অস্বীকার করা কাউকে তার সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চাইতে জঘন্য কাজ।
মহা বিচারের দিন আহকামুল হাকিমিন এ বিষয়ে কর্তব্যে গাফিলতির হিসাব নিবেন। (তিরমিজি)

সত্য-মিথ্যার প্রভেদ এর জন্য শিক্ষা:

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বই পৃথিবীর ইতিহাস। ইসলাম সত্য এবং কুফর মিথ্যা। এ সত্য-মিথ্যা, ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও সুন্দর-অসুন্দর এর পার্থক্য নির্ণয় করতে ইসলামী জ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। ইসলামী জ্ঞান ছাড়া তা সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন-

তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আলোময় বস্তু এসেছে। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায় এর দ্বারা তাদের তিনি শান্তি পথে চালিত করেন। আর নিজের ইচ্ছায় তাদের আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর তাদের চালিত করেন সরল পথে। (সূরা মায়েদা ৫:১৫-১৬)

মহান স্রষ্টা কে চেনা ও জানার জন্য ইসলামী শিক্ষার অপরিহার্য। আল্লাহকে চিনতে হলে, তাকে সঠিকভাবে মানতে হলে তার সত্তা ও গুণাবলী জানতে হবে। তার যথার্থ পরিচয় জানা না থাকলে তার ইবাদত ও আনুগত্য করা যায় না। যারা সত্যিকারের জ্ঞানী তারাই সম্যকভাবে আল্লাহ কে চিনেন, জানেন রহস্যময় বিষয়সমূহ। এজন্য তারা গৌরব অহংকার করেন না বরং এক আল্লাহর নিয়ামত মনে করেন এবং বলেন-

এসব কিছুই আল্লাহর দান। এব্যাপারে আমাদের কোন কৃতিত্ব নেই। (সূরা আলে ইমরান-৩৭)

প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তিগণ চিন্তা-চেতনায় এমন পবিত্রতা লাভ করেন যে তারা আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদত্ত প্রতিদান কে দুনিয়ার সবকিছু হতে উত্তম মনে করে। আল কুরআন এর ভাষায়-

আল্লাহ, ফেরেশতা এবং জ্ঞানী ব্যক্তিগণ ন্যায়ের সাথে সাক্ষ্য দেন যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। (সূরা আলে ইমরান- ১৮)

বস্তুত প্রকৃত জ্ঞানী মানুষেরা আল্লাহ ও আল্লাহর সৃষ্টিকে সম্যকভাবে বুঝতে পারে।

আল কুরআনে বলা হচ্ছে-

আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে যারা জ্ঞানী, তারাই তাকে ভয় করে। (সূরা ফাতির ২৮)

হালাল উপার্জনের জন্য শিক্ষা:

হালাল উপার্জন করা ফরজ। আর হালাল উপার্জনের জন্য এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা প্রয়োজন। কোনটি হালাল ও হারাম তা জানার জন্য ইসলামী শিক্ষা অপরিহার্য। সমাজ থেকে অন্যায়, অবিচার, বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির দাবানল নির্বাপিত করার জন্য প্রয়োজন ধর্মের অনুশীলন। আর ইসলামই একমাত্র শান্তির ধর্ম। সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর করার জন্য ইসলাম সম্বন্ধে জানা খুবই প্রয়োজন।

মানবিকতার বিকাশ:

শিক্ষার মাধ্যমেই মানুষের মানবিক বৃত্তিগুলোর বিকাশ সাধন হয়। মানুষের মেধা, মনন ও রুচি শিক্ষার মাধ্যমে উৎকর্ষ লাভ করে। শিক্ষার দ্বারা মানুষের মধ্যে দয়া-মায়া, স্নেহ-মমতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা ইত্যাদি মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। কাজেই ইসলামী শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন।

ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের চরিত্র পুতপবিত্র হয়। মানুষের আচার-আচরণ পরিশীলিত ও পরিমার্জিত হয়। এতে চারিত্রিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়। ইসলামী শিক্ষা একজন মানুষকে রাষ্ট্রের, সমাজের ও পরিবারের সদস্য হিসেবে গড়ে তোলার শিক্ষা দেয়। তার মধ্যে সুনাগরিকতার গুণাবলী সৃষ্টি হয়; কর্তব্যনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল বানায়। মানুষ দেহসর্বস্ব জীব নয়, তার রয়েছে আধ্যাত্বিক জীবন। আত্মিক উন্নতি ও আধ্যাত্মিক বিকাশ ইসলামী শিক্ষা ছাড়া সম্ভব নয়। আর আধ্যাত্মিক প্রশান্তি ও উন্নতি মানবতার পরম প্রাপ্তি। এজন্যও ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজন।

দ্বীনের উজ্জীবনের জন্য:

দ্বীনের প্রচার, প্রসার এবং প্রতিষ্ঠা ও তা সমুন্নত রাখার অক্ষুন্ন ও উন্নয়নের জন্য ইসলামী শিক্ষা একান্ত প্রয়োজন। ইসলামী শিক্ষা ছাড়া দ্বীনের উজ্জীবন সম্ভব নয়। শিক্ষা মানবিকতার বিকাশ ঘটায়, সত্যিকারের জ্ঞানচক্ষু খুলে দেয়, নিজেকে চিনতে পারে; চিনতে পারে মহান স্রষ্টা আল্লাহকে। সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায় এবং সর্বোপরি তাঁর দায়িত্ব-কর্তব্য বুঝতে পারে শিক্ষার মাধ্যমেই। কাজেই শিক্ষা অর্জন করাকে ইসলাম তার অনুসারীদের উপর অপরিহার্য করে দিয়েছে।

ইসলামি শিক্ষার অভাবে সামাজিক অবক্ষয়সমূহ চিহ্নিত করণ ও সামাজিক অবক্ষয়সমূহ থেকে উত্তরণের উপায়ঃ

ইসলামি শিক্ষার অভাবে সামাজিক অবক্ষয়সমূহ চিহ্নিত করা হলোঃ

আজ আমাদের সমাজে ইসলামী শিক্ষার সঠিক প্রয়োগ না থাকায় অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। অনৈতিকতার প্রভাবে নৈতিকতা প্রায় বিলুপ্ত। পিতা-মাতা পাচ্ছে না তাদের সেবা, সন্তান পাচ্ছে না তাদের অধিকার, শিক্ষক পাচ্ছে না তার সম্মান, ছাত্র পাচ্ছে না সঠিক শিক্ষা। এভাবে খুঁজতে গেলে সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে অসংখ্য অন্যায় চোখের সামনে ফুটে উঠবে। যার একটাই কারণ, ইসলামী শিক্ষার অভাব।

সামাজিক অবক্ষয়ের মারাত্মক অবনতি হওয়ায় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে যুবসমাজ। এতে দিন দিন বেড়েই চলেছে অবাধ মেলামেশা। উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা নিজেদের মতো করে যৌনতায় জড়িয়ে পড়ছে। মানবিকতা, নীতি নৈতিকতা, মূল্যবোধ, ধর্মীয় শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষার অভাবে এমন অপরাধ হচ্ছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মুসলিম তরুণ তরুণীদের আজ ধর্মীয় বিধি-নিষেধ যেভাবে মানার কথা ছিল, সেভাবে মানছে না। উল্টো বিজাতীয় কৃষ্টি-সভ্যতার উন্মাদনায় তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে। ধর্মীয় অনুশাসন নেই বলেই আজ নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন ভীষণভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অবক্ষয়সমূহ থেকে উত্তরণের উপায়ঃ

নৈতিক মূল্যবোধ, প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবতাবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা ও সহযোগিতার আদর্শ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত হলে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ ও সংকীর্ণতা কমে আসবে এবং যুদ্ধের সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। মানুষ মানুষকে ভালোবাসবে, মানুষের কল্যাণে মানুষ কাজ করবে। এভাবে সমাজ-রাষ্ট্রে শান্তির সমীরণ প্রবাহিত হবে।

  • সকল অবস্থায় আল্লাহর গোলামি করাঃ

একজন সংযমী লোক দেশ ও জাতির জন্য বড় সম্পদ। আর এ সংযমী হতে হলে তাকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে অগ্রসর হতে হবে। ইসলামের প্রতিটি ইবাদত মানব মনে মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিতে বিরাট ভূমিকা পালন করে। কাজেই নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে হলে মানব সমাজকে আল্লাহর গোলামির দিকে আনতে হবে। মানুষ যদি শাশ্বত এ জীবনব্যবস্থার দিকে ধাবিত হয় তাহলে সমাজ থেকে অন্যায়-অনাচার, পাপাচার, জুলুম, নির্যাতনসহ অকল্যাণকর সকল কাজ-কর্ম চিরতরে দূর হয়ে যাবে এবং সমাজ হবে শান্তির নীড়।

  • ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাঃ

সমাজ ও সভ্যতার নৈতিক অবক্ষয় রোধের অন্যতম উপাদান হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন তথা ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবন-বিধান মেনে চলা। কেননা এটা যে কোন সমাজ ও সভ্যতার ভিত্তি এবং রাষ্ট্রীয় সুদৃঢ় অবকাঠামো বিনির্মাণের অন্যতম সোপান।

  • সর্বাবস্থায় তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করাঃ

নৈতিক অবক্ষয় থেকে সমাজের মানুষকে বাঁচাবার জন্য আমাদেরকে সর্বাবস্থায় তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতে হবে এবং তাকওয়া সম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে হবে। এভাবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

  • চরিত্রের সংশোধনঃ

একজন সচ্চরিত্রবান লোক কোনদিন অনৈতিক কাজ করতে পারে না। আর এ জন্যই সমাজ থেকে অনৈতিক কর্মকান্ড দূর করতে হলে মানুষকে নৈতিক চরিত্রের গুণে গুণান্বিত হতে হবে। তাহলেই নৈতিক অবক্ষয় রোধ করে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করা সম্ভব।

  • আখিরাতকে অগ্রাধিকার দেওয়াঃ

যদি কোন মানুষ আখিরাতকে অগ্রাধিকার দেয় তার পক্ষে কোন অনৈতিক কাজ করা সম্ভব নয়। এজন্য আখিরাতের প্রত্যাশী মানুষ তৈরি করার মাধ্যমে সমাজ থেকে অনৈতিক কাজ দূর হবে এবং নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত হবে। এভাবেই সমাজ থেকে সকল প্রকার অনৈতিক-অসভ্য কাজ-কর্ম দূরীভূত হতে পারে।

  • রাসূল (সা) এর আদর্শ গ্রহণ করাঃ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) মু’মিনদের চারিত্রিক উৎকর্ষতার জন্য কিছু বিষয় অর্জন এবং কিছু বিষয় বর্জনের শিক্ষা দিয়ে আদর্শ চরিত্রবান হওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছেন। নৈতিক দিক থেকে উন্নত করার মানসে অর্জনীয় গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে- তাকওয়া বা খোদাভীতি, শোকর, সবর, আত্মসংযম, ক্ষমা, উদারতা, সত্যবাদিতা, বদান্যতা, নম্রতা, প্রজ্ঞা, সততা, মিতব্যয়িতা, আমানতদারিতা, অতিথিপরায়ণতা, ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা প্রভৃতি। সমাজের মানুষদেরকে এসকল গ্রহণীয় বিষয়গুলো শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে নৈতিক অবক্ষয় থেকে জাতিকে বাঁচানো সম্ভব।

  • ইসলামি শিক্ষাঃ

ইসলামি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ হলো নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধের অপরিহার্য উপাদান। কেননা এর মাধ্যমে মূল্যবোধভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে জ্ঞান ও অভিজ্ঞানকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুচারুরূপে সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়। ইসলামি শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাপক বিশ্লেষণ, নিরন্তর গবেষণাভিত্তিক এবং জ্ঞান-অভিজ্ঞানের ভিত্তিতে হলে এর মাধ্যমে ব্যক্তির উন্নয়ন এবং নৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.