tarabi namaz

ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য রমজান অত্যন্ত পবিত্র একটি মাস, আল্লাহর দেয়া বিধান অনুযায়ী এ মাসে সিয়াম সাধনা করা যেমন সকল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের জন্য বাধ্যতামূলক, তেমনি তারাবি নামাজ আদায়ও জরুরী।

অনেকেই তারাবি নামাজের সঠিক নিয়ম জানি না কিংবা সংশয়ে আছি, ভুলে গেছি। তাই তারাবি নামাজ কী এবং কত রাকাআত, আদায়ের যাবতীয় নিয়ম সহ অন্যান্য সকল বিস্তারিত বিষয় কোরআন, হাদিস  ও আলেমগণের মত অনুসারে ব্যখ্যা করার চেষ্টা করবো৷

তারাবির নামাজ কী? 

তারাবি মূলত একটি আরবি শব্দ যার মূল ধাতু হচ্ছে রাহাতুন। রাহাতুন শব্দের অর্থ বিশ্রাম বা আরাম করা।

ইসলামিক পরিভাষায়, রমজান মাসে এশার নামাজের পর এবং বেতরের নামাজের পূর্বে বিশেষ যে নামাজ পড়ার বিধান রয়েছে, তাকেই তারাবি নামাজ বলে।

যেহেতু তারাবি নামাজ দুই রাকাআত করে করে পড়া হয় এবং প্রতি চার রাকাআত অন্তর পরবর্তী নামাজের দাড়ানোর পূর্বে অল্প সময় বিশ্রাম বা আরামের জন্য বসার প্রচলন রয়েছে, শাব্দিক অর্থগত দিক থেকে এ নামাজকে এজন্যই তারাবি বলে অভিহিত করা হয়।

আরও দেখুনঃ রোজার নিয়ত, সেহরির দোয়া এবং ইফতারের দোয়া আরবি-বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ দেখুন

তারাবি নামাজ কি সুন্নত না নফল? 

প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলমানদের জন্য তারাবি নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। সুন্নতে মুয়াক্কাদার গুরুত্ব বোঝতে হলে ওয়াজিবের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ ওয়াজিব ছেড়ে দিলে যেমন শেষ বিচারের দিনে জবাবদিহি করতে হবে তেমনি সুন্নতে মুয়াক্কাদার ক্ষেত্রেও। তারাবি নামাজ আদায়ের গুরুত্ব এ থেকে বোঝা যায়।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মান্বেষণের সঙ্গে নেক পাওয়ার আশায় রোজা রেখে, তারাবির নামাজ আদায় করে এবং কদর রাতে সারারাত ইবাদত করে,আল্লাহ তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেন।”

আল্লামা জুরজানী (রঃ) এর মতে, ওয়াজিব ছেড়ে দিলে সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আবার সুন্নতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দিলে আল্লাহ তা’আলা মাফও করতে পারেন, আবার শাস্তিও প্রদান করতে পারেন।

খোলাফায়ে রাশেদীন বিশেষত ওমর (রাঃ) এর খেলাফতের শেষ জামানা থেকে মুয়াযাবাত তথা নিয়মিত তারাবি নামাজ পড়তেন এবং তারাবি নামাজের সুন্নত আদায়ের তাগিদ দেন।

ইমাম নববী বলেন, আলেমগণের ইজমা অনুযায়ী তারাবী নামাজ পড়া সুন্নত। (আলমাজমূ ৪/৩১)

তারাবি নামাজ কত রাকাআত? 

তারাবি নামাজ নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে ২০ রাকাআত তারাবি নামাজ আদায়ের প্রচলন রয়েছে।

তারাবি নামাজ দুই রাকাআত করে করে আদায়ের নিয়ম। তারাবি নামাজ মোট কত রাকাআত পড়তে হবে, তা রাসূল (সঃ) নির্ধারণ করে যাননি, তবে গবেষণার মাধ্যমে বিশ রাকাআত তারাবি নামাজের পক্ষেই দলিল বেশি পাওয়া যায়।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাঃ রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবি এবং বিতর নামাজ পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৫, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১)

হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, রমজান মাসের এক রাতে মহানবী (সঃ) তাশরীফ নিয়ে এলেন, আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত (৪ রাকাআত এশার এবং ২০ রাকাআত তারাবি) নামাজ পড়ালেন। আর তিন রাকাআত বিতর নামাজ পড়ালেন। (তারীখে জুরজান-২৭)

হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এক ব্যক্তিকে বিশ রাকাত পড়ার হুকুম দিলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৫/২২৩)

ওমর (রাঃ) এর সময়ে যে বিশ রাকাআত তারাবি নামাজের প্রচলন ছিল তার আরো প্রমাণ পাওয়া যায় হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ (রাঃ) এর কথায়, আমরা হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ ও বিতির পড়তাম। (সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৮৩৩, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩)

হানাফি, শাফিয়ি ও হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগণ ২০ রাকাআত করে তারাবি নামাজ আদায় করে থাকেন। সঠিকভাবে তারাবি নামাজ আদায়ের জন্য ২০ রাকাআত আদায় করাই উত্তম।

তবে মালিকি ফিকহ’র অনুসারীগণ ৩৬ রাকাআত তারাবি নামাজ আদায়ের পক্ষে, অন্যদিকে আহলে হাদীস অনুসারীরা ৮ রাকাআত তারাবি নামাজ পড়েন।

আপনি যে অনুসারীই হয়ে থাকেন আর যত রাকাআত তারাবি নামাজ আদায়ের পক্ষেই থাকুন, তা ধীরেসুস্থে নির্ভুলভাবে আদায় করাটাই সবচেয়ে জরুরী।

কীভাবে তারাবি নামাজ আদায় করবেন? 

রমজান মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে এশার ওয়াক্তের চার রাকাআত ফরজ এবং দুই রাকাআত সুন্নত নামাজ আদায়ের পর বিতর নামাজ আদায়ের পূর্বে দুই রাকাআত করে দশ সালামে বিশ রাকাআত তারাবি নামাজ আদায় করা হয়। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার পূর্ব রাত পর্যন্ত প্রতি রাতেই তারাবি নামাজ আদায় করতে হয়।

তারাবি নামাজ আদায়ের দুটি পদ্ধতি প্রচলিত, খতম তারাবি ও সূরা তারাবি। খতম তারাবি নামাজের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ কোরআন ধারাবাহিক ভাবে পাঠ করে রমজান মাসের প্রথম সাতাশ রাতের মধ্যে শেষ করা হয়। খতম তারাবি’র ক্ষেত্রে কোরআনে হাফেজগণ মসজিদে ইমামতি করেন। সূরা তারাবি নামাজের ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা তেলওয়াত করা হয় অন্য সকল নামাজের মতই৷

তারাবি নামাজের জন্য নিয়ত করে দুই রাকাআত করে করে বিশ রাকাআত নামাজ আদায় করতে হবে, নামাজের বাকি সব নিয়ম অন্য সকল নামাজের মতই৷ তবে প্রতি চার রাকাআত অন্তর কিছু সময় বসে বিশ্রাম করতে হবে। বিশ্রাম কালীন তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া-দরূদ ও জিকর আজগার করা। তারপর আবার দুই দুই রাকাআত করে পৃথক পৃথক নিয়তে তারাবি নামাজ আদায় করতে হবে।

তারাবি নামাজে কী কী সূরা পড়তে হয়? 

খতম তারাবি নামাজের ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার পর ধারাবাহিক ভাবে সম্পূর্ণ কোরআন তেলওয়াত করা হয় এবং রমজানের প্রথম সাতাশ রাতের মধ্যে খতম করা হয়।

অন্যদিকে সূরা তারাবি’র ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার পর যে কোন একটি সূরা দিয়ে প্রতি রাকাআত নামাজ পড়তে হয়।  অনেকে যদিও সূরা ফাতিহার পর একাধিক সূরা পাঠ করেও তারাবি নামাজ আদায় করে থাকেন তবে বিশিষ্ট আলেমগণের মতে, একাধিক সূরা পাঠের চেয়ে তুলনামূলক বড় সূরা দিয়ে নামাজ আদায় করা উত্তম।

শেষ কথা 

তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নত, মহানবী (সঃ) নিজে তারাবি আদায় করেছেন এবং অন্যদের তাগিদ দিয়েছেন। ইন শা আল্লাহ, আমরা সকলেই সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে রমজান মাসের সবগুলো তারাবি নামাজ আদায় করতে সমর্থ হবো।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.