Sociology

মানবিক বিভাগ থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সমাজবিজ্ঞান বিস্ময়ের প্রথম পত্র থেকে প্রথম এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে পাঠ্য বইয়ের প্রথম অধ্যায় সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ থেকে।

নিচের ছবিতে মানবিক বিভাগের ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার সমাজ বিজ্ঞান বিষয়ের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন ও মূল্যায়ন নির্দেশনা সমূহ বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো-

https://i.imgur.com/TfkqRAm.jpg

 সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তির পটভূমি ও ক্রমবিকাশ

অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নির্দেশনা সমূহঃ

ক. সমাজ বিজ্ঞানের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে।

খ. সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে হবে।

গ. সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ব্যাখ্যা করতে হবে।

ঘ. সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তির পটভূমি ও বিকাশ ধারা লিখতে হবে।

এটি অনুসরণ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রশ্নসমূহের যথাযথ উত্তর দিতে পারবে এবং মূল্যায়নে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবে। এখানে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় তৃতীয় সপ্তাহের সমাজবিজ্ঞান প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন গুলো ধারাবাহিকভাবে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হলো যাতে শিক্ষার্থীদের উত্তর গুলো বুঝতে খুব সুবিধা হয় এবং ভালোভাবে উত্তর পত্রে অ্যাসাইনমেন্ট এর উত্তর গুলো লিখতে পারে।

আমাদের তৈরিকৃত উত্তর ডাউনলোড করেছেন মানসম্পন্ন করে অ্যাসাইনমেন্টে পূর্ণ নম্বরসহ এ প্লাস পেতে পারেন। তাই আর দেরি না করে এইচএসসি ২০২৪ মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত সমাজবিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট এর সঠিক এবং পূর্ণাঙ্গ উত্তর ডাউনলোড করে নিন। নিচের সমাজবিজ্ঞান দ্বিতীয় দ্বিতীয় সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন এবং উত্তর দেওয়া হল।

ক. সমাজ বিজ্ঞানের ধারণা;

সমাজবিজ্ঞান শব্দের উদ্ভব (Origin of the word ‘Sociology): ফরাসী সমাজবিজ্ঞানী অগাষ্ট কোৎ ১৮৩৯ সালে সর্বপ্রথম sociology শব্দটি উদ্ভাবন করেন। sociology শব্দর্টি লার্টিন শব্দ socius, যার অর্থ সমাজ ও গ্রীক শব্দ Log25, যার অর্থ বিজ্ঞান বা বিশেষ জ্ঞান- এই দুই শব্দ থেকে উদ্ভুত।

তাহলে শব্দগত অর্থে বলা যায় সমাজ সম্পর্কিত বিশেষ সুরান যে বিজ্ঞানের মূল বিবেচ্য বিষয় তাকেই বলা হয় সমাজবিজ্ঞান। Sociology-র বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে সমাজবিজ্ঞানকে গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলা ভাষায় সমাজ সম্পর্কিত বিজ্ঞান ভিত্তিক আলাচনার সুত্রপাত করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিনয় কুমার সরকার। অধ্যাপক সরকারও Sociology-র বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে ‘সমাজবিজ্ঞান ব্যবহার করেছেন। তবে sciology-র বাংলা সমাজতত্ত্ব ও সমাজবিদ্যা’ ও করা হয়েছে। কিন্তু আক্ষরিক দিক থেকে বিবেচনা করলে sciology-র বাংলা “সমাজবিজ্ঞান’-ই অধিকার।

সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা (Preliminary Idea of Sociology): সমাজবিজ্ঞানে প্রধানত মানুষের দলগত আচরণ ও পারস্পরিক কার্যকলাপ সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কে পাঠ করা হয়। মানুষের সংঘবদ্ধ জীবন যাত্রার উদ্দেশ্য ও গতি-প্রকৃতি সম্বন্ধেও এক্ষেত্রে আলাচিত হয়।

কিভাবে মানুষের সমাজে নানা ধরনের সংঘের (Association) বিকাশ ঘটেছে এবং কিভাবে এ সবের ভেতর পরিবর্তন এসেছে তাও সমাজবিজ্ঞানে আলাচিত হয়। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে, সামাজিক সংগঠন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং এসবের ব্যাখ্যা করাই সমাজবিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য।

অবশা মানুষের জীবন যাত্রার উন্নতি বিধান হল সমাজবিজ্ঞানের চূড়ান্ত লক্ষ্য। সে কারণে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ জ্ঞান লাভ করার উপর সমাজবিজ্ঞানে বিশেষ গুরুত্ব আরাপ করা হয়। কেননা সামাজিক সমস্যাকে সার্থকভাবে মাকাবিলা করতে হলে সমস্যা সম্পর্কে আগে ভালভাবে জানতে হবে।

বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞনীর দেওয়া সংজ্ঞরা মূলত সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সমাজ এবং মানুষের সামাজিক সম্পর্কের বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ ও পর্যালচনা। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দিয়েছেন। যেমনসমাজবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ওয়ার্ড সমাজবিজ্ঞানকে সমাজের বিজ্ঞান বলে অভিহিত করেছেন।

(Sociology is the Science of Society))। সামনার সমাজবিজ্ঞানকে সামাজিক প্রপঞ্চের বিজ্ঞান বলে আখ্যায়িত করেছেন। “Sociology is the Science of social phenomena” সমাজবিজ্ঞানী ভুখীম বলেন যে, সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান।

“Sciology is the Science of institution” সমাজবিজ্ঞানী কোভালেভস্কির মতে সমাজবিজ্ঞান হলা সামাজিক সংগঠন এবং সমাজ পরিবর্তনের বিজ্ঞান। “Sociology is the science of social organization and social change.”

খ. সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি;

সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতিঃ কোনা বিষয় বা বস্তুর প্রকৃতি বলতে ওই বিষয় বা বৈশিষ্ট্য বা স্বভাব বা পরিচয়কে বাঝায। অতএব সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি বলতে সমাজবিজ্ঞান বিষষের বৈশিষ্ট্য বা পরিচয়কে বোঝায়। সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য, স্বভাব নিচে আলোচনা করা হল।

১. বিজ্ঞানভিত্তিক আলাচনা ও বিশ্লেষণঃ সমাজবিজ্ঞানের প্রকৃতি তথা এর উদ্দেশ্য। হলা সমাজে বসবাসকারী মানুষের পারস্পরিক সম্পর্কেও বিজ্ঞানভিত্তিক আলাচনা ও বিশ্লেষণ করা।

২. সমাজকে পূর্ণাঙ্গরূপে অধ্যয়ন করে: রাষ্ট্রবিজ্ঞান বা অর্থনীতি সে ক্ষেত্রে সমাজের এক একটা দিক সম্পর্কে পাঠ করে সে ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞান গা টা সমাজের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ প্রদান করে।

৩. সমাজের গঠনপ্রকৃতি ও সামাজিক কাঠামা সম্পর্কে আলাচনা করে: কিসের ভিত্তিতে এবং কিভাবে সমাজ গড়ে ওঠে এবং কিভাবেই বা সমাজ একটা কাঠামা গত রূপ নেয় তা সমাজবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়।

এখানে বলা প্রযােজন, সমাজের তথা তার কাঠামাের ভিত্তি হচ্ছে মানব সম্পর্ক। ব্যক্তি, গােষ্ঠী এবং প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সমাজবিজ্ঞানের আলােচ্য বিষয়।

৪. সমাজবিজ্ঞান সমাজের বিজ্ঞানভিত্তিক পাঠ: সমাজবিজ্ঞান সমাজ গবেষণায়। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি এবং কৌশল অবলম্বন করে। সমাজের ব্যাখ্যা ও গবেষণায় হোলি, কল্পনা এবং আবেগের স্থান নেই। সমাজের বাস্তবতা নির্ণয় এর অন্যতম লক্ষ্য।

৫. সমাজবিজ্ঞান একটি বিশ্লেষণধর্মী বিজ্ঞান : সমাজবিজ্ঞান নেহায়েত সমাজের ঘটনাবলির বর্ণনাই কেবল নয়, এটি ঘটনাসমূহের কার্যকারণ সম্পর্ক নির্ণয়ে যুক্তিভিত্তিক বিচার-বিশ্লেষণ করার প্রয়াস পায়। অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞান কেবল সমাজের আলােচনা ন্য, পর্যালােচনাও বটে।

৬. নৈতিকতার প্রশ্নে সমাজবিজ্ঞান নিরপেক্ষ: সমাজের বাস্তব ভালাে কি মন্দ, সমাজ কেমন হওয়া উচিত কি অনুচিত, এসব বিষয়ে নিরপেক্ষ অবলম্বন করে অর্থাৎ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট রায় দেওয়া থেকে সমাজবিজ্ঞান বিরত থাকে।

৭. সমাজবিজ্ঞান সর্বদাই নিরপেক্ষ অবলম্বন করতে পারে না যদিও তাত্ত্বিকভাবে এবং আদর্শগতভাবে সমাজবিজ্ঞান মূল্যবােধনিরপেক্ষ বিজ্ঞান, তথাপি উন্নয়নকামী সমাজে সমাজবিজ্ঞান চর্চার অন্য লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের সমস্যাবলি চিহ্নিতকরণ এবং তার সমাধানের নির্দেশনা দেওয়া।

৮. পরিবর্তনশীল সমাজের দিকনির্দেশনা প্রদান: পরিবর্তনশীল সমাজের দিকনির্দেশনা প্রদানও সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম কাজ।

গ. সমাজবিজ্ঞানের পরিধি

সমাজবিজ্ঞানের ৮ টি পরিধির বিবরণ নিচে ব্যাখ্যা করা হলােঃ

১. সামাজিক কর্মকান্ড ও সমাজবিজ্ঞানের পরিধির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সামাজিক কর্মকান্ড। সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সমাস্থ মানুষের ভাল-মন্দ বিচার করা হয়।

২. সামাজিক ধারণা ও সামাজিক ধারণাসমূহ নিয়ে সমাজবিজ্ঞান আলােচনা করে থাকে। মরিস জিন্সবার্গের মতে, মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া এবং এর ফলাফল সম্পর্কিত আলােচনাই হল সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু।

৩. সামাজিক পরিবর্তন ও সমাজ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজ কাঠামাের পরিবর্তনের ফলে সমাজের রূপান্তর একটি সাবলীল সত্য। মানব জাতির আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি প্রভৃতি জীবন যাত্রার সকল বিষয়ের আলােচনা করাই সমাজবিজ্ঞানের কাজ।

৪. সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যক্তি ও দলের মধ্যে সামাজিক মূল্যবােধ নির্ধারিত হয়। কিভাবে মানুষের সমাজে নানাবিধ প্রতিষ্ঠানের ঠিকাশ ঘটেছে এবং কিভাবে এসবের ভেতর পরিবর্তন এসেছে এগুলাের বিচার বিশ্লেষণ সমাজবিজ্ঞানের পরিবিভুক্ত।

৫. সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ও সমাজকে কতিপয় সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল রীতি-নীতি ও আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালনা করাকে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বলে। সমাজবিজ্ঞানীগণের মতে, সমাজবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু কতগুলাে আচার-অনুষ্ঠান ও মূল্যবােধের দ্বারা নির্ধারিত।

৬. সামাজিক সমস্যা ও সমাজবিজ্ঞান নৈতিকতার প্রশ্নে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে। কাজেই সমাজবিজ্ঞান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সামাজিক সমস্যার বিশ্লেষণ করতে চায়।

৭. সামাজিক আদর্শ ও সমাজবিজ্ঞানের পরিধি ও বিষয়বস্তু হিসেবে সামাজিক আদর্শের অবদান রয়েছে। সামাজিক আদর্শছাড়া কোন জাতি উন্নতির চরম শিখরে আরােহন করতে পারে না।

৮. সমাজের সামগ্রিক বিষয়ে আলােচনা ও মানুষের কার্যকলাপ এবং মানুষের সাংগঠনিক প্রতিভা, সংস্কৃতি, মূল্যবােধ প্রভৃতি বিষয়গুলাে সমাজবিজ্ঞানের পরিধিকে অত্যন্ত ব্যাপকতর করে তুলেছে।

ঘ. সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তির পটভূমি ও বিকাশ ধারা

সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ ধারা এবং এই বিকাশধারা নিয়ে ৪ জন চিন্তাবিদের মতবাদ নিচে ব্যাখ্যা করা হলােঃ

জ্ঞানের একটি পৃথক শাখা হিসেবে আমাদের সমাজে সমাজবিজ্ঞানের পরিচয় খুব বেশী দিনের নয়। সামাজিক বিজ্ঞান সমূহের মধ্যে সমাজবিজ্ঞান সর্বকনিষ্ঠ।

কেননা উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে-এর আবির্ভাব ঘটে । মূলত, মানুষের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের প্রচেষ্টা থেকে সামাজিক বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক অবস্থায় মানব জীবন সম্পূর্ণভাবে প্রকতির উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রকৃতির অনকল ও প্রতিকল পরিবেশেই মানব চিন্তা বিকশিত হতে থাকে। জগৎ ও জীবন সম্পর্কে জ্ঞানের একটি পৃথক শাখা হিসেবে আমাদের সমাজে সমাজবিজ্ঞানের পরিচয় খুব বেশী দিনের নয়।

সামাজিক বিজ্ঞান সমূহের মধ্যে সমাজবিজ্ঞান সর্বকনিষ্ঠ। কেননা উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে-এর আবির্ভাব ঘটে। মূলত, মানুষের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের প্রচেষ্টা থেকে সামাজিক বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে। প্রাথমিক অবস্থায় মানব জীবন সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রকৃতির অনুকূল ও প্রতিকূল পরিবেশেই মানব চিন্তা বিকশিত হতে থাকে। জগৎ ও জীবন সম্পর্কে ভাবনা আদিকাল থেকে চলে আসছে। আদিতে সকল রকম চিন্তা চেতনা দর্শন শাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

কিন্তু মানবচিন্তার ক্রমবিকাশের ধারায় দর্শনশাস্ত্রের সীমানা পেরিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নব দিগন্ত উন্মােচিত হতে থাকে। এভাবে মানুষের বিচিত্র জ্ঞানের শাখা হিসেবে জ্যোতির্বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, মনােবিদ্যা, ভূগােল ও ইতিহাস প্রভৃতির উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে। তাই জ্ঞান চর্চার ইতিহাস ও তার উৎস খুঁজতে গিয়ে বার বার আমাদের ফিরে তাকাতে হয় সুদূর অতীতের দিকে। প্রাচীন গ্রীক ও রােমান পন্ডিতদের লেখায় সমাজ ও রাষ্ট্র সম্পর্কিত আলােচনা সমৃদ্ধি লাভ করে।

গ্রীক দার্শনিকদের মধ্যে প্লেটো এবং এরিষ্টটল এর নাম এ প্রসঙ্গে উল্লেখযােগ্য। মূলত, প্লেটো, এরিষ্টটল ও পিথাগােরাস প্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞানকে দর্শনশাস্ত্রের আওতাভুক্ত বলে মনে করতেন। দর্শনশাস্ত্রের অঙ্গ হিসেবেই তাঁরা সামাজিক বিজ্ঞানকে পর্যালােচনা করেন।

এ প্রসঙ্গে আমরা সর্বপ্রথম প্লেটোর নাম উল্লেখ করতে পারি। আমরা এখন ধারাবাহিকভাবে সমাজবিজ্ঞানের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে বিভিন্ন দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানীর মতবাদ আলােচনা করব।

প্লেটো প্লেটো তাঁর Republic নামক গ্রন্থে সমাজ সম্পর্কে যে সব তত্ত্বের অবতারণা করেছেন সেসব মূলত যুক্তি নির্ভর হলেও অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবতা বর্জিত। কেননা, তিনি তাঁর গ্রন্থে একটি দ্বাদর্শ রাষ্ট্রের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন, যেখানে শান্তি এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতে পারে।

মূলত প্লেটোর Republic নামক গ্রন্থে সামাজিক স্তরবিন্যাস এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা ও প্রশ্নের পর্যালােচনা দেখা যায়। প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রকে প্রাচীন কালের সাম্যবাদ বলেও অভিহিত করা হয়।

এরিস্টটল প্লেটোর প্রিয় ছাত্র এরিস্টটল সামাজিক সমস্যা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিয়েছেন। রাষ্ট্রের গড়ন, শ্রেণী-নির্ভর সমাজের দাস-মনিব সম্পর্ক এবং সামাজিক বিপ্লবের কারণ অনুসন্ধানে তাঁর মতবাদ অনেকটা সমাজতাত্ত্বিক ও সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক রূপ পরিগ্রহ করেছে।

প্লেটোর চেয়ে এরিস্টটল বস্তুনিষ্ঠতার পরিচয় দিলেও তিনি মূলত যুক্তিতর্কের মাধ্যমেই একটি আদর্শ সামাজিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ব্রতী হয়েছিলেন। উল্লেখ্য, তাঁরা কেউই প্রাচীন গ্রীসের সমাজে দাসপ্রথার বিলােপের কথা বলেননি। বরং তাঁদের মতে উক্ত সমাজের অস্তিত্বের জন্য দাসপ্রথা ছিল অপরিহার্য।

ইবনে খালদুন তিউনিসিয়ার অধিবাসী মধ্যযুগের বিখ্যাত মুসলিম চিন্তাবিদ ইবনে খালদুন (১৩৩২-১৪০৬) সমাজচিন্তার বিকাশের ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন। তিনি ঐতিহাসিক দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘মুকাদ্দিমায় সমাজের গতি-প্রকৃতি এবং সমাজ জীবনে বাহ্যিক ও আধ্যাত্মিক শক্তিসমূহের প্রভাব পর্যালােচনা করেছেন।

ইবনে খালদুন সমাজ জীবনের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যেমন, সংস্কৃতি, রাষ্ট্র, সামাজিক সংহতি সম্পর্কে তিনি বিজ্ঞানসম্মত আলােচনা করেছেন। তিনি বলেছেন সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য Social Solidarity বা সামাজিক সংহতির গুরুত্ব রয়েছে।

মধ্যযুগে জন্মগ্রহণকারী এই মনীষী তাঁর চিন্তা-চেতনা এবং জ্ঞান সাধনার মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে গেছেন। তিনি সামাজিক সংহতিকে ‘আসাবিহা’ বলে অভিহিত করেছেন।

অনেক বস্তুবাদী লেখক খালদুনকে জার্মান সমাজচিন্তাবিদ কার্ল মার্কসের পূর্বসূরি বলে গণ্য করেছেন। ভিকো ইটালীয় মনীষী ভিকো সমাজবিজ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রেখেছেন।

ভিকো তাঁর The New Science নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেন যে, সমাজ একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বির্বতিত হয়।

ভিকো সমাজ বিবর্তনের ধারায় তিনটি যুগ লক্ষ করেন। এগুলাে হচ্ছে:

১। দেবতাদের যুগ (Age of Gods);

২। বীর যােদ্ধাদের যুগ (Age of Heros); এবং

৩। মানুষের যুগ (Age of imen)

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.