Business

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা প্রথম পত্র ১ম অ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা নমুনা উত্তর (একটি দেশের অর্থনীতি ও জনগােষ্ঠির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের চালিকা শক্তি) প্রণয়ন করা হয়েছে। তোমরা যারা সরকারি, বেসরকারি কলেজের এইচএসসি ২০২৪ পরীক্ষার্থী আছো তোমাদের ১ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা প্রথম পত্র বিষয়ের একটি নির্ধারিত কাজ দেয়া হয়েছিল। যথাযথ মূল্যায়ন নির্দেশনা অনুসরণ করে তোমাদের জন্য ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা প্রথম পত্র ১ম এ্যাসাইনমেন্ট এর বাছাইকরা নমুনা উত্তর দেওয়া হল।

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা ১ম অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রথম সপ্তাহে ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা প্রথম পত্র এবং হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্র থেকে দুটি এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে। ব্যবসা শিক্ষা থেকে ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রথম সপ্তাহের ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এর প্রথম এসাইনমেন্ট নেয়া হয়েছে প্রথম পত্রের প্রথম অধ্যায় ব্যবসায়ের মৌলিক ধারণা থেকে। নিচে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা প্রথম পত্রের প্রথম এসাইনমেন্ট উল্লেখ করা হলো।

https://i.imgur.com/9XzKwnC.jpg

স্তর: এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪, বিভাগ: ব্যবসায় শিক্ষা, বিষয়ঃ ব্যবসায় সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা, পত্র: প্রথম, বিষয় কোড-২৭৭, অ্যাসাইনমেন্ট নং-১

অধ্যায় ও শিরোনামঃ প্রথম অধ্যায়: ব্যবসায়ের মৌলিক ধারণা;

অ্যাসাইনমেন্টঃ একটি দেশের অর্থনীতি ও জনগােষ্ঠির জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে মুখ্য চালিকা শক্তি হলাে ব্যবসায়।-উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ।

শিখনফল/বিষয়বস্তুঃ

  • ব্যবসায়ের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে;
  • ব্যবসায়ের আওতা বা পরিধি বর্ণনা করতে পারবে;
  • বাংলাদেশে ব্যবসায়ের আওতা হিসেবে শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবার ক্ষেত্রে সমস্যা ও সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করতে পারবে;
  • ব্যবসায়ের কার্যাবলী ব্যাখ্যা করতে পারবে ব্যবসায়ের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে;
  • অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায়ের অবদান বিশ্লেষণ করতে পারবে জীবিকা অর্জনের উপায় হিসেবে ব্যবসায়ের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারবে;

নিদের্শনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

  • ১. ব্যবসায়ের ধারণা উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করতে হবে।
  • ২. ব্যবসায়ের আওতা বর্ণনা করতে হবে।
  • ৩. ব্যবসায়ের কার্যাবলি বর্ণনা করতে হবে।
  • ৪. অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে মুখ্য চালিকা শক্তি হিসাবে ব্যবসায় কীভাবে ভূমিকা রাখে তা ব্যাখ্যা করতে হবে।

HSC 2024 Business Organization and Management 1st Assignment Answer

ব্যবসায়ের ধারণা উদাহরণসহ ব্যাখ্যাঃ

ইংরেজি Business শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো যেকোনো কাজে ব্যস্ত থাকা। কিন্তু যে কোন কাজকে অর্থনীতি-ব্যবসা বলে না। এখানে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদন ও বন্টন সহ সকল বৈধ অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসায় বলে । অর্থনৈতিক কাজ বলতে অর্থ উপার্জনের বা আয়-রোজগারের উদ্দেশ্য কোন কাজ করা করাকে বুঝায়। কোন কাজ অর্থনীতির সংশ্লিষ্ট সকল হলে তাকে ব্যবসায় বলা যাবেনা। ওই কাজ করার পিছনে অবশ্য মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য থাকতে হবে। তেমনি তা আইনত বৈধ হওয়া আবশ্যক। ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে উপাদান সংক্রান্ত কাজ, শিল্পের বন্টন সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন হয়; তাই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে শিল্প বাণিজ্য এর সকল কাজই ব্যবসায় ।

অর্থাৎ, ব্যবসায়ী= মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে উৎপাদনের সংশ্লিষ্ট কাজ+ বণ্টন সংশ্লিষ্ট কাজের সমষ্টি।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, জমির শেখ কৃষক, আলী হোসেন কাপড়ের দোকান, সুমন দাশ চালের ব্যবসায়ী, শান্তা সরকার চাকরি করেন; এদের প্রত্যেকেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। কিন্তু সকল কাজই ব্যবসায়ী নয়। জমির শেখ যদি পরিবারের খাবারের প্রয়োজন মেটাতে চালডাল তরিতরকারি উৎপন্ন করেন, তবে তার অর্থনৈতিক কাজকে ব্যবসায় বলা হবে না। কিন্তু তিনি যদি বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে উৎপন্ন করেন এবং তার থেকে লাভের প্রত্যাশা করেন, তবে তার কাজ ব্যবসায়ী হিসেবে গণ্য। মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে আলী হোসেনের কাপড় ও সুমন দাস চাল কিনে বিক্রি করেন, ফলে তাদের দুইজনই ব্যবসায়ী। শান্তা সরকার চাকরি করে। মাস গেলে নির্দিষ্ট মাইনে পান, তিনি চাকরীজীবি; ব্যবসায়ী নন। একইভাবে চালের বা কাপড়ের কোন ব্যবসায়ী যদি চোরাই পণ্য কিনে বিক্রি করে, তবে ওই কাজ বৈধতা ও ব্যবসায় পর্যায়ে পড়বে না।

ব্যবসায়ের আওতা বর্ণনাঃ

মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন ও বন্টন এর সহায়ক যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে ব্যবসায় বলে। এই উৎপাদনের সংক্রান্ত কাজ শিল্পের মাধ্যমে ও বন্টন সংক্রান্ত কাজ বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় । বণ্টনের ক্ষেত্রে ক্রয় বিক্রয় বা পণ্য বিনিময় মুখ্য কাজ হিসাবে গণ্য। অন্যান্য কাজ পণ্য বিনিময়ের সহায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্যবসায়ীকে শিল্প বাণিজ্যের সমষ্টি গণ্য করা হলেও সমাজে প্রত্যক্ষ সেবা ক্রয়-বিক্রয় বর্তমানকালে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি অর্থনীতি হিসেবে বিবেচিত। তাই ব্যবসায়ের আওতা নিম্নোক্ত রেখাচিত্রের সাহায্যে উপস্থাপন করা হলো।

শিল্প : শিল্প উৎপাদনে বাহন। যে কার্যপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং এতে উপযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের ব্যবহার উপযোগীর জন্য প্রস্তুত করা হয়, তাকে শিল্প বলে।

শিল্প কে প্রধানত ৫ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-

শিল্পের আওতাভুক্ত বিষয় সমূহ
  • ক. প্রজনন শিল্প: অর্থনীতির নির্বাচিত উদ্ভিদ ও প্রাণীর বংশবিস্তার প্রচেষ্টাকে প্রজনন শিল্প বলে। যেমন: নার্সারি, হ্যাচারী, হাঁস-মুরগীর খামার ইত্যাদি।
  • খ. নিষ্কাশন শিল্প : যে শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভূগর্ভ, পানি, বায়ু হতে সম্পদ উত্তোলন করা হয়, তাকে নিষ্কাশন শিল্প বলে। যেমন: খনিজ পদার্থ উত্তোলন. মৎস্য শিকার এরূপ শিল্পের অন্তর্গত ।
  • গ‌. নির্মাণ শিল্প : যে শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাস্তাঘাট সেতু ,বাধ দালান কোঠা নির্মাণ করা হয় তাকে নির্মাণ শিল্প বলে।
  • ঘ. প্রস্তুত শিল্প : শ্রম ও যন্ত্রের সাহায্যে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কাঁচামাল ও অর্ধ প্রস্তুত জিনিসকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী চূড়ান্ত পণ্য প্রস্তুত করার প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত শিল্প বলে। যেমন: বয়ন শিল্প, ইস্পাত শিল্প ইত্যাদি।
  • ঙ. সেবা পরিবেশক শিল্প : যে শিল্প মানুষের জীবনযাত্রা সহজ ও আরামদায়ক করার কাজে নিয়োজিত থাকে, তাকে সেবা পরিবেশক শিল্প বলে। যেমন: গ্যাস, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, পর্যটন ও স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান এ শিল্পের অন্তর্ভুক্ত।

বাণিজ্য : শিল্পের উৎপাদিত পণ্য প্রকৃত ভোগকারী বা ব্যবহারকারী নিকট পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যে সকল প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়, মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে সেগুলো দূর করনের জন্য গৃহীত যাবতীয় কাজের সমষ্টিকে বাণিজ্য বলা হয়। সুতরাং, বাণিজ্য ব্যবসায়ের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে বণ্টন কাজের সাথে সম্পৃক্ত।

বাণিজ্যের আওতাভুক্ত বিষয় সমূহ নিম্নরূপ-

বাণিজ্যের আওতাভুক্ত বিষয় সমূহ
  • ক. পণ্য বিনিময় : মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্যদ্রব্য (যার মধ্যে সেবা অন্তর্ভুক্ত) ক্রয়-বিক্রয় কার্যকে ট্রেড বা পণ্য বিনিময় বলা হয়। এই বিনিময় বন্টনের ক্ষেত্রে মালিকানা হস্তান্তর কার্য সম্পন্ন করে ব্যক্তিগত বাধা দূর করে।
  • খ. পণ্য বিনিময় সভার কার্যাবলী : এক্ষেত্রে ক্রয়-বিক্রয় কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে সমাধানের সময় যুক্তিগত, স্থানগত, কালগত ও জ্ঞানগত বাধা দেখা দেয়। এ সকল বাধা দূরকরনের জন্য যথাক্রমে ব্যাংক-বীমা পরিবহন, গুদামজাতকরন, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি কাজে সহযোগিতা প্রয়োজন পড়ে। তাই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে সকল কার্য সম্পাদনের জন্য সৃষ্টি প্রতিষ্ঠানও স্বাভাবিকভাবে ব্যবসার আওতাধীন।

প্রত্যেক্ষ সেবা : অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত ডাক্তার, উকিল, প্রকৌশলী প্রভৃতি পেশাজীবীগণ প্রত্যক্ষভাবে সেবাকর্ম বিক্রি করেন। এদের কাজ সাধারণভাবে ব্যবসায় আওয়াতাধীন মনে করা হলেও প্রকৃত অর্থে তা পেশা বা ভিত্তি হিসেবে গণ্য হয়। তবে কয়েকজন ডাক্তার মিলে ক্লিনিক ব্যবসায় বা কয়েকজন উকিল মিলে এটর্নি ফার্ম বা প্রকৌশলীরা মিলে ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্ম গঠন করতে পারেন যা প্রত্যক্ষ সেবা বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংগত কারণে ব্যবসার আওতায় আসে।

ব্যবসায়ের কার্যাবলি বর্ণনাঃ

মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পণ্য দ্রব্য ও সেবা কোন উৎপাদন, বন্টন এর সহায়ক; যাবতীয় কাজই ব্যবসায়ীক কার্যাবলী হিসেবে গণ্য। যথা-

১. উৎপাদন : উৎপাদন ব্যবসা এর প্রথম মৌলিক কাজ । একজন ব্যবসায়ী বিক্রির উদ্দেশ্যে পণ্য বা সেবা সামগ্রী উৎপাদন করে থাকেন। শিল্প উৎপাদনের বাহন। উৎপাদন বলতে এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগযোগ্য নতুন উপযোগ সৃষ্টি করাকে বুঝায়, যা ক্রেতাদের মাঝে ক্রয়ের আগ্রহ সৃষ্টি করে। উৎপাদন মূলত ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করে।

২ ক্রয়-বিক্রয় : নির্দিষ্ট মূল্যের বিনিময়ে পণ্য বা সেবা মালিকানা হস্তান্তর এর কাজকে ক্রয়-বিক্রয় বলা হয়। ক্রয়-বিক্রয়ের মালিকানা বিক্রেতার নিকট থেকে ক্রেতার নিকট হস্তান্তরিত হয়। ক্রয় বিক্রয়ের কাজকে তাই মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবসা হিসেবে গণ্য করা হয়। উৎপাদনকারীর নিকট থেকে পণ্য বা সেবা ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছাতে ক্রয়-বিক্রয় ব্যক্তিগত বাধা দূর করে।

৩. অর্থসংস্থান : প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুসারে কাম্য পরিমাণ মূলধন উপযুক্ত উৎসসমূহ থেকে সংগ্রহ করা ও কাজে লাগানোর প্রক্রিয়াকে অর্থসংস্থান বলা হয়। এজন্য শিল্পকে শিল্প প্রতিষ্ঠার জন্য স্বল্প মেয়াদী ও মধ্যমেয়াদি অর্থসংস্থান করতে হয়। ঠিক তেমনি একটি ছোট দোকানের মালিককেও দোকান ভাড়া অগ্রিম প্রদান, দোকানের সাজ-সজ্জার ইত্যাদি সংক্রান্ত কাজে জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে হয়।

৪. ঝুঁকি গ্রহণ : ঝুঁকি হলো আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা। মানুষের জীবন ও সম্পত্তিকে ঘিরে সর্বদাই ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা বিদ্যামান। ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকটা বেশি। যেমন- বাজারে পণ্য-মূল্য কমে যেতে পারে, চুরি-ডাকাতির সম্ভাবনা, বাজারে মন্দাভাব সৃষ্টি হতে পারে, পণ্যের বিনষ্ট হতে পারে, আগুনের বিনষ্ট ,জাহাজডুবি ইত্যাদি। ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা বীমার মাধ্যমে দূরীভূত হয় অর্থাৎ বীমা ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে।

৫. পরিবহন : পরিবহন এর ব্যবসা এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। উৎপাদিত পণ্য উৎপাদকের নিকট থেকে চূড়ান্ত ভোক্তার নিকট পৌঁছানোর জন্য পণ্যের স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করাকে পরিবহন বলা হয়। তাই পরিবহন ব্যবসা এর ক্ষেত্রে স্থানগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে। এই বিশ্বায়নের যুগে বিশ্বের এক প্রান্ত এ উৎপাদিত পণ্য আজ অন্য প্রান্তে সহজেই ব্যবহার করা যাচ্ছে, তা একমাত্র সম্ভব হচ্ছে পরিবহনের মাধ্যমে। যেমন- বাংলাদেশের পোশাক ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার গুঁড়োদুধ বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করছে ইত্যাদি। অর্থাৎ পরিবহন ব্যবসায়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

৬. গুদামজাতকরন : উৎপাদন ও ভোগ এর মধ্যবর্তী সময়ে পণ্য বিনষ্ট না হওয়ার জন্য ব্যবসায়ীগণ পণ্য সংরক্ষণের জন্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাকে গুদামজাতকরন বলে। এটি ব্যবসায় ক্ষেত্রে সময়গত বাধা দূর করে। গুদামজাতকরণের ফলে আমরা শীতকালীন দ্রব্য বা পণ্য সারাবছরই ভোগ করতে পারি। আলু উৎপাদনের পর রাখা হয় কোল্ড স্টোরেজে, মাছ রাখা হয় বরফের বাক্সে, তরকারি শাকসবজি বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কাচের হিমাগারে রাখা হয় ইত্যাদি।

৭. প্রমিতকরণ ও পর্যায়িতকরণ : পণ্যের আকার, ওজন, গুনাগুন , রং,স্থায়িত্ব ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে পণ্যের মান নির্ধারণ করাকে প্রমিতকরণ বলা হয়। পূর্ব নির্ধারিত মান অনুযায়ী পণ্যকেবিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করাকে পর্যায়িতকরণ বলা হয়।
৮. মোড়কীকরণ : পণ্যের মান সংরক্ষণ, ক্ষতি থেকে রক্ষা করা এবং পণ্যকে গ্রাহকের নিকট আকর্ষণীয় রূপে তুলে ধরার জন্য মোড়ক দিয়ে পণ্যকে ঢেকে রাখার কাজকে মোড়কীকরণ বলা হয়। যেমন চানাচুর, চিপ্স, চকলেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ যদি পণ্যকে প্যাকেট জাত না করে খোলা বিক্রি করতো, তাহলে পণ্যের মান ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যেত। তাই গ্রাহকের সুবিধার্থে পণ্যকে বিভিন্ন আকার ও ওজন অনুসারে বিভক্ত করে এবং এর মোড়কীকরণ এর মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। এতে পণ্যের গুণাগুণ রক্ষা পায় এবং পণ্য বিক্রয় বৃদ্ধি পায়।

৯. বাজারজাতকরণ প্রসার : পণ্য বা সেবা সম্পর্কে সম্ভাব্য ক্রেতা বা গ্রাহকদের আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করার প্রচেষ্টাকে বাজারজাতকরণ প্রসার বলা হয়। এটি ভোক্তাদের কাছে পণ্যের জ্ঞানগত বা প্রচারগত প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে সহায়তা করে। যেমন: পত্রপত্রিকায়, টিভিতে বিজ্ঞাপন , বড় বড় সাইনবোর্ড ইত্যাদি।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের ব্যবসায়ের ভূমিকা

ব্যবসায় যে কোন দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি। উৎপাদন, বন্টন, সঞ্চয় বিনিয়োগ ইত্যাদি অর্থনীতির প্রধান উপাদান যা দেশের ব্যবসায়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত। ব্যবসা-বাণিজ্যে অগ্রসর দেশই বর্তমানে উন্নত দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ। উন্নত দেশের পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে এখানে ব্যবসায়, শিল্প ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির কোন বিকল্প নেই। কৃষিনির্ভর দেশ হলেও এ দেশের অর্থনীতিতে ব্যবসায়ের ভূমিকা বাড়ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ও জীবনযাত্রা মানোন্নয়নে ব্যবসায়ের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:

১) সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক নানান ধরনের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাকৃতিক গ্যাসের বাণিজ্যক ব্যবহার , কৃষিভিত্তিক শিল্প গঠন , বনজ সম্পদ ,জনশক্তি ইত্যাদি কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে।

২) ব্যক্তিগত ও জাতীয় আয় বৃদ্ধি : প্রকট বেকার সমস্যায় এদেশের ব্যাপক মানুষ ব্যবসায়ের বিভিন্ন শাখায় যেমন- মালিক, কর্মী, সরবরাহকারী, সেবাদানকারী, ঋণদাতা ইত্যাদি নানান কাজে নিয়োজিত থাকে। ফলে তাদের আয় রোজগার বৃদ্ধি পায় এতে সামগ্রিক জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ে।

৩) জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উন্নয়ন : অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে জাতীয় উৎপাদনের সম্পর্ক বিদ্যমান। উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেশের নানান ধরনের শিল্প ও সেবাখাতসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ সালের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (৭.২%) ঘটেছে তাতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ৮৫.১৭%।

৪) সঞ্চয় : উৎসাহদান ব্যবসায় সব সময় নতুন বিনিয়োগ প্রত্যাশা করে। এছাড়া নতুন ব্যবসায় গঠন ও পুঁজির প্রয়োজন হয়। তাই এ প্রত্যাশা ও প্রয়োজনকে উৎসাহিত করে বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবসায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

৫) মূলধন গঠন ও তার সদ্ব্যবহার : ব্যবসায়িক প্রয়োজনে এর উদ্যোক্তা ও পরিচালকগণ বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাকে মূলধনে পরিণত করে। বাংলাদেশের পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিরসমূহ জনগণের নিকট শেয়ার বিক্রি করে এবং ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানসমূহ আমানত সংগ্রহ করে মূলধন গঠনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।

৬) কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি : বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ হলেও এ দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ব্যবসাক্ষেত্রে কর্মরত। লেভার ফোর্স সার্ভে ২০১৩ অনুযায়ী সেবাখাতে দেশের মোট শ্রমিকের ৫৪.৯০ শতাংশ কর্মরত। ধীর হলেও দেশের শিল্প-বাণিজ্য খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা দেশের বেকার সমস্যার সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রেখে চলেছে।

৭) প্রযুক্তিগত উন্নতিলাভ : বিজ্ঞানের গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগানোর জন্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নব- নব প্রযুক্তির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। ব্যবসায়ীরা তাদের স্বার্থে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তি আমদানি করে তাকে কাজে লাগানোর প্রয়াস চালায়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তিগত উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে দেশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুফল ভোগ করছে। সুতরাং বলা যায়, দেশ ও জাতির উন্নয়নের ব্যবসা এর ভূমিকা অপরিসীম।

আরো দেখুন-

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.