Values, law and freedom

মূল্যবােধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে মূল্যবােধ ও নৈতিকতাকে প্রভাবিত করে বিশ্লেষণ কর

মূল্যবােধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক কীভাবে মূল্যবােধ ও নৈতিকতাকে প্রভাবিত করে বিশ্লেষণ কর।

শিখনফলঃ

  • আইন ও নৈতিকতার সম্পর্ক বিশ্লেষন করতে পারবে
  • স্বাধীনতা ও সাম্যের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে
  • আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে পারবে
  • গণতান্ত্রিক মূল্যবোেধ ব্যাখ্যা করতে পারবে
  • সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মূল্যবােধের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে।

নির্দেশনা (সংকেত ধাপ পরিধি): মূল্যবােধ ও নৈতিকতার ধারণা আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের ধারণা আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক ও গুরুত্ব;

HSC ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্রের উত্তর

পৌরনিতি হলো নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। প্রাচীন গ্রীসে নাগরিক ও নগর রাষ্ট্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। ঐ সময় ছোট অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠত নগর-রাষ্ট্র। যারা নগর রাষ্ট্রীয় কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করত, তাদের নাগরিক বলা হত। শুধুমাত্র পুরুষ শ্রেণী রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে বিধায় কেবলমাত্র তাদেরকে নাগরিক বলা হত। দাস, মহিলা ও বিদেশিদের এ সুযোগ ছিলনা।

নাগরিকের আচরণ, দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনাই হলো পৌরনীতির বিষয়বস্তু। রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকের মর্যাদাকে বলা হয় নাগরিকতা। আর রাষ্ট্রের সাথে জড়িত সবই পৌরনীতির বিষয়বস্তু। ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ই. এম. হোয়াইট এর মতে, “পৌরনীতি হলো জ্ঞানের সেই মূল্যবান শাখা, যা নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে”।

বর্তমানে একদিকে নাগরিকের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে, অন্যদিকে নগর-রাষ্ট্রের স্থলে বৃহৎ আকারের জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মূল্যবোধের ধারণাঃ

মূল্যবোধ হচ্ছে সমাজ কাঠামোর অবিচ্ছেদ্য উপাদান। শাব্দিক অর্থে values বা মূল্যবোধ অর্থ তুলনামূলক অর্থমূল্য বা দাম বা অন্তর্নিহিত গুণাবলী। মূল্যবোধ হল মানুষের সমাজ স্বীকৃত এমন কার্যক্রম বা আচরণ, যা সামগ্রিকভাবে প্রশংসিত হয়।এটি স্থায়ী কোনো বিষয় নয়। স্থান এবং সময়ভেদে মূল্যবোধ পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ মূল্যবোধ হল আপেক্ষিক। যেমন- আমাদের দেশের প্রচলিত মূল্যবোধ অনুযায়ী ধূমপান করা, বিশেষত বড়দের সামনে ধূমপান একটি অন্যায় কাজ । কিন্তু অনেক দেশে এটি একটি সাধারণ ব্যাপার। সুতরাং বলা যায়-

  • ১. মূল্যবোধ হল ভালো বা মন্দ সম্পর্কে সামাজিক ধারণা
  • ২.কাঙ্ক্ষিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় সম্পর্কে সমাজের বিশ্লেষণমূলক রায়।
  • ৩.সমাজের মানুষের সাধারণ আচরণ যাতে আবেগ বিদ্যমান।

মূল্যবোধের শ্রেণীবিভাগঃ

সাধারণভাবে পেশাগত দিক থেকে মূল্যবোধকে ৮ টি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. অর্থনৈতিক মূল্যবোধঃ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে অর্থনৈতিক কার্যাবলি সম্পন্ন করতে যে মূল্যবোধ মানুষ চর্চা করে তা হচ্ছে অর্থনৈতিক মূল্যবোধ।অর্থ লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয়, শিল্পোৎপাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাথে মূল্যবোধ জড়িত।
  2. সামাজিক মূল্যবোধঃ সাধারণ অর্থে সামাজিক মূল্যবোধ হলো সামাজিক মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করার নীতি ও আদর্শ। ব্যাপক অর্থে সামাজিক মূল্যবোধ হলো সমাজের মানুষের সামাজিক সম্পর্ক ও আচরণ, বিভিন্ন নীতিমালা, বিশ্বাস, দর্শন ও চিন্তাভাবনার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত উপাদানগুলোর সমষ্টি।
  3. রাজনৈতিক মূল্যবোধঃ গণতান্ত্রিক কিংবা অন্য যে কোন শাসনতন্ত্রের ব্যবস্থায় নাগরিকদের রাজনৈতিক অধিকার ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক মূল্যবোধের প্রয়োগ দেখা যায়। সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচনে কারো দ্বারা প্রভাবিত না হওয়া রাজনৈতিক মূল্যবোধের উদ্দেশ্য।
  4. আধ্যাত্বিক মূল্যবোধঃ মানুষের আত্মিক শক্তি অনেক বড় শক্তি। আর আত্মিক শক্তি যদি উপযুক্ত মূল্যবোধ দ্বারা বিকশিত হয়, তবে তাকে এসব ক্ষেত্রে সৎ ও দৃঢ় চরিত্রের পরিচয় দিতে সহায়তা করে। আত্মিক বা আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ বলতে এটিকে বোঝানো হয়ে থাকে।
  5. আধুনিক মূল্যবোধঃ সতত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার সময় নতুন নতুন মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সম্মুখীন হতে হয়। নিজস্ব মূল্যবোধকে ধারণ করে আধুনিকতার সমন্বয়ে গঠিত এরূপ মূল্যবোধকে বলে আধুনিক মূল্যবোধ। আলিম ৪র্থ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্রের উত্তর
  6. নান্দনিক মূল্যবোধঃ মানুষের মনের সুকোমল বৃত্তিগুলো প্রকাশ করার ক্ষেত্রে তার মূল্যবোধ যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। যেমন- কারোও চিত্রাঙ্কনে হাত যশ থাকতে পারে । এক্ষেত্রে সে কোন ধরনের চিত্র আঁকবে তা নির্ভর করবে তার নান্দনিক মূল্যবোধের উপর।
  7. ধর্মীয় মূল্যবোধঃ ধর্ম মানুষের মূল্যবোধ গঠনের এক বড় নিয়ামক। ধর্মীয় বিশ্বাস, অনুভূতি ও আচার অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে এবং ধর্মীয় শিক্ষা দ্বারা মানুষের মূল্যবোধ জন্মায়,তাই মূলত ধর্মীয় মূল্যবোধ। সমাজের মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধের ন্যায় শক্তিশালী উপাদান আর কোনোটি নেই।
  8. বস্তুগত মূল্যবোধঃ মানুষের চরিত্রের যে উপাদানটি বস্তুগত নিরপেক্ষতা থেকে জন্ম নেয় তাই হচ্ছে বস্তুগত মূল্যবোধ।

নৈতিকতার ধারণাঃ

সাধারণ অর্থে নৈতিকতা হলো নীতি মূলক নীতি সম্বন্ধীয়। নৈতিকতা মূলত একটি সামাজিক ব্যাপার। যে সমাজের বাইরে বাস করে তার কোনো নৈতিকতার প্রয়োজন নেই। তাই নৈতিকতাকে বুঝতে হলে এর সামাজিক প্রেক্ষিতটিকে আগে বুঝতে হবে।
সমাজ মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে তার অনুমোদন কিংবা অনুমোদনকে সাধারণত ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত, সঠিক বেঠিক, সৎ অসৎ, মূল্যবান মূল্যহীন প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করে প্রকাশ করে থাকে। এসব শব্দগুলি এবং তাদের সংযোগে গঠিত বাক্য বা অবধারণের মাধ্যমে মানুষের চিন্তা চেতনার প্রকাশ ঘটে তাকে এক কথায় বলা হয় মূল্যবোধ।আর মানুষের এ মূল্যবোধের আরেক নাম হচ্ছে নৈতিকতা।

নৈতিকতা বলতে আমরা এমন এক আদর্শকে বুঝি, যা নৈতিক অর্থে ভালো বা ন্যায়কে বোঝায়। নৈতিকতা বিকাশের লালন ক্ষেত্র হলো সমাজ। নৈতিকতা মূলত ব্যক্তি মানুষের নিজস্ব সিদ্ধান্ত ও পছন্দ থেকে উদ্ভূত। নৈতিকতা অভ্যাস ও চর্চার ব্যাপার এবং এ নৈতিকতা গঠনে ব্যক্তির নিজস্ব ভূমিকা রয়েছে।
নৈতিকতা বিষয়ক সমাজের চিন্তাচেতনা যেসব অবধারণের মাধ্যমে প্রকাশ পায় তাদেরকে আমরা এক কথার নৈতিক অবধারণ বা নীতিবাক্য বলতে পারি।এসব নীতিবাক্য’ চুরি করা অন্যায়’, ‘মিথ্যা বলা ভালো নয়’ ইত্যাদি আকারে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হয়।

আইনের ধারণাঃ

আইন ফারসি শব্দ।আইনের ইংরেজি প্রতিশব্দ law,যা মূলত টিউটনিক মূল শব্দ leg থেকে এসেছে।

উৎপত্তি অনুসারে এর অর্থ হল স্থির, অপরিবর্তনীয় অথবা সর্বক্ষেত্রে সবার জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। আইন হলো এমন কতগুলো বিধিবদ্ধ নিয়মাবলী যা কেবল মানুষের বাহ্যিক আচরণ কে নিয়ন্ত্রণ করে। আইন সমাজে বেশিরভাগ লোক কর্তৃক স্বীকৃত, যা সার্বভৌম কোনো কর্তৃপক্ষ থেকে নিঃসৃত এবং ভঙ্গ করলে শাস্তির বিধান আছে।সর্বোপরি বলতে পারি আইন হচ্ছে ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত নিয়ম এর সমষ্টি যার সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত।

★ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টোটল বলেন, law is the passionless reason.(পক্ষপাতহীন যুক্তি হল আইন)

★ জন অস্টিন এর মতে, law is the command of the Sovereign.(আইন হচ্ছে সার্বভৌম শাসকের আদেশ)

আইনের উৎসঃ

অধ্যাপক হল্যান্ড আইনের ৬ টি উৎসের কথা বলেছেন। যথা-

  • ১. প্রথা,
  • ২.ধর্ম,
  • ৩. বিচারকের রায়,
  • ৪.বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা বা আইনবিদদের গ্রন্থ,
  • ৫.ন্যায়বোধ,
  • ৬.আইনসভা

১। প্রথাঃ সুদীর্ঘকাল ধরে সমাজে কোনো নিয়ম চলতে থাকলে তাকে প্রথা বলা হয়।রাস্ট্র সৃষ্টির পূর্বে সমাজের মানুষ প্রথা মেনে চলত।এমনকি ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির কোনো বিবাদ দেখা দিলে প্রথার মাধ্যমে তা মীমাংস করা হতো। রাষ্ট্র সৃষ্টি হওয়ার পর এসব প্রথা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও অনুমোদন লাভ করে আইনে পরিণত হয়েছে।

২। ধর্মঃ ধর্মকে আইনের প্রাচীন উৎস বলা হয়। মধ্যযুগে ধর্মকে কেন্দ্র করে আইন প্রণীত হতো।কারণ একজন শাসকের হাতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ক্ষমতা থাকলে সে ব্যক্তি রাষ্ট্র পরিচালনার ধর্মীয় অনুশাসন প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে সে সব ধর্মীয় অনুশাসন আইনে পরিণত হয়।

৩। বিচারকের রায়ঃ বিচারকের রায় আইনের অন্যতম একটি উৎস। বিচারকগণ যখন কোনো মামলার বিচার করেন তখন সে মামলার জন্য প্রচলিত আইন যদি অস্পষ্ট থাকে, তাহলে বিচারকগণ নিজস্ব বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার সাহায্যে রায় দেন।পরবর্তিতে ওইরুপ মামলা একইরুপে রায় দেওয়া হয় এবং তা আইনে পরিণত হয়।

৪। বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা বা আইনবিদদের গ্রন্থঃ আইন সম্পর্কে বিভিন্ন আইনবিদ ও পন্ডিত ব্যক্তিগণ বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন- ব্ল্যাক স্টোন এর ‘কমেনটরিজ অন দ্যা লজ অব ইংল্যান্ড’,অধ্যাপক ডাইসির ‘ল অফ কনস্টিটিউশন’ ইত্যাদি । এসব গ্রন্থ আইনের প্রধান উৎস। বিচারকগণ বিচার করতে গিয়ে আইন সংক্রান্ত কোন সমস্যায় পড়লে তা মীমাংসার জন্য এসব পুস্তকের বিধান গ্রহণ করে থাকেন এবং পরবর্তীতে তা আইনে পরিণত হয়।

৫। ন্যায়বোধঃ বিচারকের ন্যায়বোধ আইনের একটি অন্যতম উৎস।অর্থাৎ কোন মামলার বিবাদ মীমাংসার জন্য কোনো আইন না থাকলে বিচারকগণ তাদের ন্যায়বোধ দিয়ে তা মীমাংসা করেন। তারপর তা আইনে পরিণত হয়।

৬। আইনসভাঃ বর্তমান যুগে আইনসভাকে আইনের সর্বপ্রধান উৎস বলা হয়।আইনসভা যুগের চাহিদা অনুযায়ী মানুষের জন্য নতুন নতুন আইন প্রণয়ন করে এবং পুরাতন আইন সংশোধন কিংবা বাতিল করে।

আরো দেখুনঃ মোবাইলে ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকামের উপায় ২০২৫

স্বাধীনতার ধারণাঃ

ল্যাটিন শব্দ ‘Liber’ থেকে ইংরেজি Liberty শব্দটি এসেছে। যার অর্থ স্বাধীনতা।শাব্দিক অর্থে স্বাধীনতা বলতে বোঝায় যা খুশি তা-ই করার ক্ষমতা। স্বাধীনতা হচ্ছে নিজের কাজ নিজের মতো করে করা, যেখানে কেউ কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসনে স্বাধীনতা শব্দটি একটু অন্য অর্থে ব্যবহার করা হয়। পৌরনীতি ও সুশাসনে স্বাধীনতা বলতে অপরের কাজে কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি না করে নিজের ইচ্ছা মত কাজ করা অধিকারকে বোঝায়।

★ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সিলির মতে,Liberty is the opposite of over government. (অতি শাসনের বিপরীত অবস্থায় হলো স্বাধীনতা।

স্বাধীনতার শ্রেণীবিভাগঃ

স্বাধীনতাকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। যেমন-

  • ব্যক্তিগত স্বাধীনতাঃ ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বলতে সেই স্বাধীনতা কে বোঝায়, যা ব্যক্তির নিজস্ব কাজও আচরণকে প্রভাবিত করে,অন্যের ওপর কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করে না। যেমন- চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, ধর্ম পালনের স্বাধীনতা, জীবনধারণের অধিকার ইত্যাদি।
  • সামাজিক স্বাধীনতাঃ সমাজে বসবাস করতে মানুষের যে স্বাধীনতা সমাজ নিশ্চিত করে, তাকে সামাজিক স্বাধীনতা বলে। যেমন শিক্ষালাভের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, পরিবার গঠনের স্বাধীনতা ইত্যাদি।
  • রাজনৈতিক স্বাধীনতাঃ রাষ্ট্রের শাসন কার্যে অংশগ্রহণ করার স্বাধীনতাকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলে। যেমন- ভোটদানের অধিকার, মতামত প্রকাশের অধিকার, সরকারি চাকরিতে যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভের অধিকার ইত্যাদি।
  • অর্থনৈতিক স্বাধীনতাঃ অর্থনৈতিক জীবনে মানুষের স্বাধীন থাকার অধিকার হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। অন্ন,বস্ত্র, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা এবং উপযুক্ত মজুরি পাওয়ার নিশ্চয়তা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এর উদাহরণ।
  • জাতীয় স্বাধীনতাঃ জাতীয় স্বাধীনতা মানুষের সব ধরনের স্বাধীনতার ভিত্তি। জাতি বা দেশ পরাধীন থাকলে নাগরিকগণ তাদের আইনগত অধিকার লাভ করতে পারেন না। জাতীয় স্বাধীনতা বলতে মূলত বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকাকেই বোঝানো হয়।
  • প্রাকৃতিক স্বাধীনতাঃ মানব সভ্যতার শুরুতে যখন কোনো সামাজিক আইন ছিল না, প্রকৃতির রাজ্যে মানুষ যে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতো বলে ধারণা করা হয়, তাকে প্রাকৃতিক স্বাধীনতা বলে।
  • আইনগত স্বাধীনতাঃ রাষ্ট্রীয় আইন সংবিধান এবং অন্যান্য মাধ্যমে যেসব অধিকার কে সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তাকে আইনগত স্বাধীনতা বলে। জরুরি অবস্থা ছাড়ার রাষ্ট্রকর্তৃক এসব অধিকারকে সংরক্ষণ করা হয়। যেমন-রাষ্ট্রকর্তৃক ঘোষিত মৌলিক অধিকার সমূহ।

সাম্যের অধিকারঃ

পৌরনীতির সাম্যের অর্থ হচ্ছে সুযোগ-সুবিধাদির দিয়ে সমতা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থাকে সাম্য বলে। অধ্যাপক লাস্কির মতে, সাম্য অর্থ- বিশেষ সুযোগ-সুবিধার অনুপস্থিতি, যথার্থ ও যথেষ্ট সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি এবং বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ ও দ্রব্যের সমভাবে বন্টন।

সাম্যের প্রকারভেদঃ

সাম্য মূলত একটি বৃহত্তর খন্ড প্রত্যয়। মানুষের ব্যক্তিত্বের পূর্ণতার জন্য বিভিন্নভাবে সাম্যকে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন-

১। সামাজিক সাম্যঃ জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র কিংবা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান সামাজিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হলো সামাজিক সাম্য।

২। রাজনৈতিক সাম্যঃ রাজনৈতিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে সবারই সমান সুযোগ-সুবিধা লাভ করাকে রাজনৈতিক সাম্য বলে।

৩। অর্থনৈতিক সাম্যঃ অর্থনৈতিক সাম্য বলতে দক্ষতা ও যোগ্যতা অনুসারে আয় ও ধনসম্পদে নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা লাভের সমতাকে বোঝায়।

৪। ব্যক্তিগত সাম্যঃ রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তির নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা সমান ভাবে ভোগ করার অধিকার কে ব্যক্তিগত সাম্য বলে।

৫। আইনগত সাম্যঃ আইনগত সাম্য বলতে আইনের চোখে সবাই সমান এবং আইনের শাসনকে বোঝায়।

৬।স্বাভাবিক সাম্যঃ জন্মগতভাবে প্রত্যেক মানুষ সমান। মানুষ-মানুষে কোনো প্রভাব নেই। যদিও বর্তমানে এরূপ সাম্য তেমন গুরুত্ব পায় না।

৭। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিকঃ শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সবার জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হলো শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সাম্য।

৮।আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাম্যঃ সকল জাতির সম্মান মর্যাদা, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার থেকে সবার সুযোগ লাভের অধিকার, বল পরিহার এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মুক্ত থাকার অধিকার হলো আন্তর্জাতিক সাম্য।

আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পারিক সম্পর্কঃ

আইন, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে ত্রিমাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে। এদের মধ্যে সম্পর্কটি অনেকটা সামগ্রিক। আইন স্বাধীনতার রক্ষক ও অভিভাবক। আইন না থাকলে স্বাধীনতা থাকতে পারে না। আইনের নিয়ন্ত্রণ আছে বলে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করা যায়। আইন স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করে।আইন সাম্যকেও সার্থক করে তোলে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অসাম্যকে দূর করা যায়। সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অসামান্য দূর করতে আইনই মানুষকে সহায়তা করে আসছে যুগ যুগ ধরে। ভারতের আইন করে সতীদাহ প্রথা দূর করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাস এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হলো আইনের মাধ্যমে বর্ণবাদ নিষিদ্ধ করা।

অন্যদিকে,সাম্য ও স্বাধীনতা একটি অন্যটি ছাড়া অচল। সাম্য নিশ্চিত করার জন্য স্বাধীনতা প্রয়োজন। স্বাধীনতার শর্ত পূরণ না করা হলে সাম্য কেবল মরীচিকায় থেকে যায়। আবার স্বাধীনতাকে ভোগ করতে চাইলে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা এর পূর্বশর্ত। তা না হলে দুর্বলের সাম্য সবলের সুবিধার হাতিয়ারে রূপান্তরিত হবে। সাম্য উঁচু-নিচুর পার্থক্য দূর করে, আর স্বাধীনতা সমাজের সুযোগ-সুবিধাগুলোকে সবার ভোগ করার অধিকার দান করে।কোল এজন্যই বলেন, অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন । আইন স্বাধীনতা ও সাম্য এত ঘনিষ্ঠ ভাবে সম্পর্কযুক্ত যে এর একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে কল্পনা করা যায় না।

লাস্কি বলেন, আইনের দ্বারা রাষ্ট্র যত বেশি সমতা বিধান করবে, স্বাধীনতার উপভোগ তত বেশি নিশ্চিত হবে। আইন না থাকলে সাম্য থাকেনা, সাম্য না থাকলে স্বাধীনতা থাকতে পারে না। আইন সাম্য ও স্বাধীনতার সম্মিলিত প্রয়াসই নিশ্চিত করতে পারে আইনের শাসন এবং সত্যিকারের সুশাসন। এদের সম্পর্ক পরস্পরের পরিপূরক ও সম্পূরক।

About Author

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.