Production Management Assignment

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ অংশগ্রহণকারী ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সপ্তাহের জন্য নির্ধারিত উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর নিচে প্রদান করা হলো। এইচএসসি উৎপাদন ব্যবস্থাপনা অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্নের নির্দেশনার ক্রমিক নং অনুযায়ী উত্তর প্রদান করা হলো।

https://i.imgur.com/dNk64SZ.jpg

অ্যাসাইনমেন্টঃ উৎপাদন এবং উৎপাদনশীলতার ধারণা ও গুরুত্ব বিশ্লেষণ

নির্দেশনাঃ

ক. উৎপাদনের ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে।

খ. উৎপাদনের গুরুত্ব আওতা তা ব্যাখ্যা করতে হবে।

গ. উৎপাদনশীলতা এবং এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে হবে তা ব্যাখ্যা করতে হবে।

ঘ. উৎপাদনশীলতা এবং এর গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে হবে।

উৎপাদনের ধারণা (Concept of Production):

সাধারণ অর্থে ‘উৎপাদন বলতে কোন কিছু সৃষ্টি করাকে বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে উৎপাদন বলতে শুধু সৃষ্টি করাকে বুঝায় । অর্থনীতিতে উৎপাদন বলতে কোন নির্দিষ্ট সময়ে কোন দ্রব্যের আকার ও আকৃতির পরিবর্তন করে দ্রব্যের উপযােগ সৃষ্টি করাকে উৎপাদন বলে।

প্রকৃতপক্ষে মানুষ কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষের আশে পাশে যা কিছু রয়েছে সবই প্রকৃতির দান। মানুষ কেবল মাত্র প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের রূপগত, গুণগত, পরিমাণগত ও অবস্থানগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উপযােগ সৃষ্টি করতে পারে বা ভবিষ্যতের জন্য মজুদ রেখে অতিরিক্ত উপযােগ সৃষ্টি করতে পারে।

এভাবে কোন দ্রব্যের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন করাকে অর্থনীতিতে উৎপাদন বলে। যেমন- বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করে আসবাবপত্র প্রস্তুত করে মানুষ কোন নতুন দ্রব্য বা পদার্থ সৃষ্টি করতে পারে না। শুধুমাত্র কাঠের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন করে আসবাবপত্র তৈরী করে উপযােগ সৃষ্টি করা হয়েছে মাত্র।

অর্থাৎ আসবাবপত্র তৈরীর মাধ্যমেই কাঠের উপযােগ সৃষ্টি করা হলাে। সুতরাং অর্থনীতিতে উৎপাদন বলতে কোন দ্রব্য সৃষ্টি করাকে বুঝায় না; বরং দ্রব্যের আকার ও আকৃতি পরিবর্তন করে অধিক উপযােগ সৃষ্টি করাকে বুঝায়। বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ উৎপাদনের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন।

অধ্যাপক মার্শালের মতে, “এ বস্তু জগতে মানুষ প্রকৃতি প্রদত্ত বস্তুকে অধিকতর উপযােগী করে তােলার উদ্দেশ্যে এরূপ পূর্নবিন্যাস করে যাতে তাকে অধিকতর কার্যোপযােগী করা যায়।”

অধ্যাপক ডানিয়েল বি. সুইটস এর মতে, “উৎপাদন হলাে এমন একটি পদ্ধতি যা দ্বারা মানুষ প্রকৃতি প্রদত্ত বস্তুকে ভােগের উপযােগী করে তুলতে পারে।”

সুতরাং সংক্ষেপে বলা যায়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের সাথে নিজের শ্রম ও মূলধন নিয়ােগ করে। অধিকতর উপযােগ সৃষ্টি করে তাকে উৎপাদন বলে।

উৎপাদনের গুরুত্ব (Importance of Production):

অর্থনীতির একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে উৎপাদন। বর্তমান সময়ে উৎপাদনকে বাদ দিয়ে এই সমাজ-সভ্যতা ও এর উন্নয়ন চিন্তাই করা যায় না। প্রকৃতি প্রদত্ত সব উপকরণ মানুষ সরাসরি ব্যবহার বা ভােগ করতে পারে না।

তাই দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহার উপযােগী করে তােলার জন্য উৎপাদনের মাধ্যমে তার রূপ পরিবর্তন করতে হয়। মানুষের দৈনন্দিন অভাব, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নে উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে উৎপাদনের গুরুত্ব আলােচনা করা হল।

১. চাহিদা পূরণ (Fulfillment of Demand): মানুষের চাহিদার শেষ নেই। একটি চাহিদা পূরণ হলে অন্য চাহিদা দেখা দেয়। এছাড়া সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন চাহিদার উদ্ভব হয়। বিভিন্ন ধরণের পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে মানুষের বৈচিত্র্যময় চাহিদা পূরণ করা হয়।

২. লক্ষ্য অর্জন (Achieving Goal): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন করা। উৎপাদন যত বাড়বে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা তত বাড়বে। এজন্য প্রতিষ্ঠান বিক্রয় বৃদ্ধির মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সবসময় তৎপর থাকে।

৩. উপযােগ সৃষ্টি (Creating Utilities): উৎপাদনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের উপযােগ রুপগত স্থানগত, সময়গত প্রভৃতি। এছাড়াও উৎপাদন পণ্যের নতুন উপযােগ সৃষ্টি করে।

৪. প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার (Proper Utilization of Resources): প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে হলে উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদন ব্যতীত প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যবহার সম্ভব নয়। উৎপাদনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ মানব কল্যাণে ব্যবহার করা যায়।

৫. কর্মসংস্থান সৃষ্টি (Creating Employment): উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, কর্মসংস্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অতএব কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে কর্মসংস্থান জড়িত।

৬. মানব কল্যাণ (Human Welfare): মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের পাশাপাশি নতুন নতুন পণ্য ব্যবহার বা ভােগের প্রবণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মানবজাতির কল্যাণে বিভিন্ন ধরণের দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন হয়ে থাকে আর এইসব দ্রব্যসামগ্রী ব্যবহারকারীর সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়তি চাহিদা মেটাতে উৎপাদন কারখানায় U উৎপাদন কাজে প্রচুর কর্মীর কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ সাধিত হচ্ছে।

৭. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic Development): যে কোনাে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দ্রব্য সামগ্রী ও সেবার উৎপাদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতএব দ্রব্য সামগ্রীর উৎপাদন ব্যতীত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।

৮. রপ্তানি বৃদ্ধি (Increasing Export): কৃষি, শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে রপ্তানী বাড়বে। উৎপাদন বাড়লে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত পণ্য রপ্তানির সুযােগ সৃষ্টি হয়।

৯. ভােক্তার সন্তুষ্টি (Consumer Satisfaction): আধুনিক ব্যবসায়ে টিকে থাকার বড় হাতিয়ার হচ্ছে ভােক্তাদের সন্তুষ্ট করা। কম খরচে ভাল মানের পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হলে, ভােক্তাদের সন্তুষ্ট করা সহজ হয়। এছাড়া ভােক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী সময়মত ত্রুটিমুক্ত পণ্য উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারে।

১০. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন (Achieving Foreign Exchange): উৎপাদন বৃদ্ধি করে পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর উদ্বৃত্ত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয় ।

পরিশেষে বলা যায়, উৎপাদনের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হলে উৎপাদনের বিকল্প নেই। আর উৎপাদনের মাধ্যমেই প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়।

উৎপাদনের আওতা (Scope of Production):

উৎপাদনের আওতা অত্যন্ত ব্যাপক। প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ থেকে শুরু করে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল। নিম্নে উৎপাদনের আওতা আলােচনা করা হলাে

১. উপযােগ সৃষ্টি (Creating Utility): উপযােগ সৃষ্টি উৎপাদনের আওতাভূক্ত, কারণ উৎপাদনের মাধ্যমে পণ্যের আকার-আকৃতি, রূপ প্রভৃতি পরিবর্তন করে নতুন উপযােগ সৃষ্টি করা হয়।

২. রূপান্তর প্রক্রিয়া (Transformation Process): উৎপাদনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর মাধ্যমে প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের রূপান্তর করা হয়। যেমন- পাট থেকে বস্তা ও কার্পেট তৈরি করা হয়।

৩. পণ্য ডিজাইন (Product Design): পণ্য ডিজাইন করার সময় ক্রেতাদের চাহিদা, প্রযুক্তিগত সামর্থ্য, উৎপাদন ব্যয় প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা করে ডিজাইন করতে হয়।

৪. বিন্যাস (Lay-out): কোনাে কারখানার যন্ত্রপাতি, স্থান, আবহাওয়া, পরিবেশ ইত্যাদি নির্বাচন করা কোন যন্ত্রের পর কোন যন্ত্রের অবস্থান হবে, যে স্থানে রাখলে সহজে উৎপাদন কাজ করা যাবে এবং কারখানার অভ্যন্তরে চলাচল নিরাপদ হবে ইত্যাদি বিষয়ের দিকে খেয়াল রেখে যন্ত্রপাতির সঠিক অবস্থান নির্ণয়কে যন্ত্রপাতি বিন্যাস বলে।

৫. উপকরণ সংগ্রহ (Collection of Materials): উৎপাদনের আরেকটি আওতাভূক্ত বিষয় হচ্ছে উৎপাদনের সাথে সম্পর্কযুক্ত উপকরনসমূহ সংগ্রহ করা। কি পরিমাণ উপকরণ কিভাবে ব্যবহার হবে ইত্যাদি কার্যক্রম উৎপাদন শুরুর পূর্বেই স্থির করতে হয়। উৎপাদনের উপকরণগুলাে হলাে ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন।

৬. পদ্ধতি বিশ্লেষন (System Analysis): উৎপাদন প্রক্রিয়ায় সহজ ও সরল পদ্ধতি অবলম্বন করলে দক্ষতার সাথে বেশি পরিমাণ পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়।

৭. সিডিউলিং (Scheduling): উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রতিটি কাজ সিডিউল অনুযায়ী সম্পাদন করতে হয় অর্থাৎ প্রতিটি কাজ কখন শুরু হবে এবং শেষ হবে তার নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করতে হয়। কাঁচামাল কখন, কোন প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করবে, প্রক্রিয়ার সময় কতক্ষণ হবে এবং সকল প্রক্রিয়া কখন শেষ হবে তা সিডিউলিং এর মাধ্যমে স্থির করা হয়।

৮. উৎপাদন পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রন (Production Plan and Control): পণ্য ও সেবা সামগ্রী উৎপাদনের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, মান নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যয় নিয়ন্ত্রণ উৎপাদনের আওতাভুক্ত।

৯. কারখানার পরিবেশ (Factory Environment): কারখানার পরিবেশ উৎপাদনশীলতাকে প্রভাবিত করে। এজন্য কারখানার নিরাপত্তা, পরিষ্কার পরিছন্নতা, আলাে বাতাস, তাপমাত্রা ইত্যাদি অনুকূলে আছে কিনা তা দেখতে হয়।

১০. গবেষণা ও উন্নয়ন (Research and Development): নতুন নতুন পণ্য আবিষ্কারের জন্য গবেষণা প্রয়ােজন। এছাড়া পুরাতন পণ্যের উন্নয়নেও গবেষণার বিকল্প নেই। তাই বলা যায় যে, গবেষণা ও উন্নয়ন উৎপাদনের আওতাভূক্ত।

১১. মজুদ নিয়ন্ত্রণ (Inventory Control): উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল প্রয়ােজন। আর সুষ্ঠুভাবে উৎপাদন কার্য পরিচালনার জন্য পণ্যের মজুদ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারন সঠিকভাবে পণ্য মজুদ না রাখলে প্রতিষ্ঠানের খরচ বাড়বে ও উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।

১২. উৎপাদন ক্ষমতা (Production Capacity): শ্রম, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ব্যবস্থাপনা এমন হতে হবে যেন সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগানাে যায়। এতে ব্যয় হ্রাস পায় ও উৎপাদন কাজে দক্ষতা আসে। তাই উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগানাের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ উৎপাদনের আওতাভূক্ত।

উৎপাদনশীলতার ধারণা (Concept of Productivity)

উৎপাদনশীলতা হচ্ছে সম্পদের ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা উৎপাদনের পরিমাণ। অর্থাৎ কতটুকু ইনপুট বা কাঁচামাল ব্যবহার করে কি পরিমাণ আউটপুট বা পণ্য উৎপাদন করা যায় তার অনুপাত হচ্ছে উৎপাদনশীলতা। অন্যভাবে উৎপাদনশীলতা বলতে উৎপাদনের দক্ষতাকে বােঝায়।

সমপরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারলে বা কম পরিমাণ উপকরণ ব্যবহার করে সমপরিমাণ উৎপাদন করতে পারলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। উৎপাদনশীলতাকে নিম্নোক্ত সমীকরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়উৎপাদিত পণ্য (আউটপুট) উৎপাদনশীলতা উৎপাদনে ব্যবহৃত উপাদান (ইনপুট) এ প্রসঙ্গে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন লেখক সংজ্ঞা দিয়েছেন, তা নিম্নে তুলে ধরা হলাে-

geofoam Samuelson 67, “Productivity is a term referring to the ratio of output to inputs.” অর্থাৎ “উৎপাদনশীলতা হচ্ছে একটি শব্দ যা ইনপুটের প্রেক্ষিতে আউটপুটের অনুপাত বুঝায়।”

International Labor Organization (ILO) 43 160, “In the broadest concept, productivity may be taken to constitute the ratio of available goods and services to the potential resources of the group, community or the country.”

উপরােক্ত সংজ্ঞার আলােকে উৎপাদনশীলতা সম্পর্কে বলা যায় যে

১. উৎপাদনশীলতা হলাে উৎপাদন ও উপকরণের অনুপাত;

২. উপকরণের তুলনায় উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধির হার;

৩. শ্রমের দক্ষতা মূল্যায়ন; এবং

৪. এটি মুনাফা বৃদ্ধি করে। সুতরাং,

পরিশেষে বলা যায় যে, নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করে বা কাজে লাগিয়ে যে পরিমাণ ফলাফল অর্জিত হয় তার অনুপাতই হলাে উৎপাদনশীলতা। আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন বৃদ্ধির চেয়েও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি হলে প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

উৎপাদনশীলতার গুরুত্ব (Importance of Productivity)

সর্বনিম্ন ব্যয়ে সর্বাধিক উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত উপকরণের ভারসাম্য রক্ষাই হলাে উৎপাদনশীলতা। আর প্রতিষ্ঠানের দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, নিচে তা আলােচনা করা হলাে।

১. মুনাফা বৃদ্ধি (Increase in Profit): উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির কারণে ঐ প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং অপচয় রােধের মাধ্যমে খরচ কমে আসবে। ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধি পাবে।

২. ব্যবসায় সম্প্রসারণ (Expansion of Business): উৎপাদনশীলতা বাড়লে প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় ও মুনাফা বাড়ে। ফলে প্রতিষ্ঠান নতুন বিনিয়ােগের সুযােগ পায়। ফলে ব্যবসা সম্প্রসারণে উৎপাদনশীলতা গুরুত্বপূর্ণ।

৩. সম্পদের সদ্ব্যব্যবহার (Utilization of Resources): প্রতিষ্ঠানে নিয়ােজিত মানুষ, যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ইত্যাদিসহ উৎপাদনের সকল উপকরণের যথাযথ ব্যবহারের উপর উৎপাদনশীলতা নির্ভর করে। যতবেশী উপকরণের কার্যকর ব্যবহার করা যায় ততই উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। ফলে উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা সম্ভব হয়।

৪. চাহিদা পুরণ (Fulfillment of Demand): সম্পদের পরিমাণ সীমিত কিন্তু মানুষের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই স্বল্প পরিমাণ সম্পদ দিয়ে অধিক পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করা প্রয়ােজন। এ কারণে উৎপাদনশীলতা। বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।

৫. প্রতিযােগিতায় সাফল্য অর্জন (Success in Competition): প্রতিযােগিতায় টিকে থাকা এবং সাফল্য অর্জন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উৎপাদনশীলতার মাধ্যমে কম খরচে, কম সময়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা সম্ভব হয় ফলে প্রতিযােগিতায় সাফল্য অর্জন করা অনেক সহজ হয়ে যায় ।

৬. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic Development): একটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি শুধু ঐ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই নয় বরং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব ফেলে।

পরিশেষে বলা যায়, একটি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির ফলে যেমন ঐ প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধিত হয় তেমনি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। একটি দেশে যদি সর্বক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা যায় তবে তা জাতীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিকে নিশ্চিত করে। তাই উৎপাদনশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.