বিনোদন

অ্যাসাইনমেন্ট : বর্তমান বিশ্বে নিম্নোক্ত পরিবার ব্যবস্থা দেখা যায়-

ক) বংশ গণনা ও নেতৃত্বের ভিত্তিতে পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবার;
খ) পারিবারিক কাঠামোর ভিত্তিতে একক ও যৌথ পরিবার;
গ) বৈবাহিক সূত্রের ভিত্তিতে একপত্নীক, বহুবত্নীক ও বহুপতি পরিবার।

বাংলাদেশে বিদ্যমান উপরোক্ত পরিবার ব্যবস্থার মধ্যে কোন কোন ধরনের পরিবার দেখা যায় ও দেশে কোন যৌথ পরিবার হ্রাস পাচ্ছে এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একটি আদর্শ পরিবারের কার্যাবলী ব্যাখ্যাকরণ।

উত্তর সমূহ:

বাংলাদেশের পরিবারগুলাের মধ্য থেকে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার বৃদ্ধির কারণ এবং আদর্শ পরিবারের কার্যাবলি

পরিবার সমাজ স্বীকৃত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় স্বামী – স্ত্রীর একত্রে বমবাম করাকে পরিবার বলে। ম্যাকাইভারের মতে, সন্তান জন্মদান ও লালন – পালনের জন্য মংগঠিত ক্ষুদ্র বর্গকে পরিবার বলে। আমাদের দেশে সাধারণত মা – বাবা, ভাই – বােন, চাচা – চাচিও দাদা – দাদির। আর এই মূলত স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালােবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গঠিত ক্ষুদ্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান।

আমরা সবাই পরিবারে বাস করি। কিন্তু সব পরিবারের প্রকৃতি ও গঠনকাঠামাে একরকম নয় ৷ কতগুলাে নীতির ভিত্তিতে পরিবারের শ্রেণিবিভাগ করা যায়।”
যেমন-
(ক) বংশ গণনা ও নেতৃত
(খ) পারিবারিক কাঠামাে ও সূত্র ও
(গ) বৈবাহিক সূত্র।

ক. বংশ গুণনা ও নেতৃত্ব : এ নীতির ভিত্তিতে পরিবারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা – পিতৃতান্ত্রিক ও মাতৃতান্ত্রিক পরিবার পিতৃতান্ত্রিক পরিবারে সন্তানরা পিতার বংশ পরিচয়ে পরিচিত হয় এবং পিতা পরিবারে নেতৃত্ব দেন। আমাদের দেশের অধিকাংশ পরিবার এ ধরনের। অন্যদিকে, মাতৃতান্দিক পরিবারে মায়ের বংশপরিচয় সন্তানরা পরিচিত হয় এবং মা পরিবারে নেতৃত্ব দেন। আমাদের দেশে গারােদের মধ্যে এ ধরনের পরিবার দেখা যায়।

খ. পারিবারিক কাঠামাে : পারিবারিক গঠন ও কাঠামাের ভিত্তিতে পরিবারকে দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা- একক ও যৌথ পরিবার। একক পরিবার মা – বাবা ও ভাই – বােন নিয়ে গঠিত হয়। এ ধরনের পরিবার ছােট হয়ে থাকে। যৌথ পরিবারে মা – বাবা, ভাই – বােন, দাদা – দাদি, চাচা – চাচি ও অন্যান্য পরিজন একত্রে বাস করে। যৌথ পরিবার বড় পরিবার। বাংলাদেশে উভয় ধরনের পরিবার রয়েছে ৷ তবে বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে ৷ মূলত যৌথ পরিবার কয়েকটি একক পরিবারের সমষ্টি।

গ. বৈবাহিক মূত্র : বৈবাহিক সূত্রের ভিত্তিতে তিন ধরনের পরিবার লক্ষ করা যায়। যথা- একপত্নীক, বহুপত্নীক ও বহুপতি পরিবার। একপত্নীক পরিবারে একজন স্বামীর একজন স্ত্রী থাকে আর বহুপত্নীক পরিবারে একজন স্বামীর একাধিক স্ত্রী থাকে। আমাদের সমাজের অধিকাংশ পরিবার একপত্নীক তবে
বহুপত্নীক পরিবারও কদাচিৎ দেখা যায়। বহুপতি পরিবারে একজন স্ত্রীর একাধিক স্বামী থাকে। বাংলাদেশে এধরনের পরিবার দেখা যায় না।

সুতরাং উপরিউক্ত আলােচনা থেকে বলা যায় আমাদের দেশের পরিবারগুলাের মধ্যে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার, একক পরিবার, যৌথ পরিবার, একপত্নীক পরিবার এবং বহুপত্নিক পরিবার দেখা যায় তবে বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মধ্যে মাতৃতান্ত্রিক পরিবারও দেখা যায়। কিন্তু দেশে বহুপতি পরিবার দেখা যায় না।

যৌথ পরিবার হ্রাস এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণঃ আমরা জানি, দাদা – দাদী, স্বামী – স্ত্রী, ভাই – বােন, ছেলে – মেয়ে ইত্যাদি নিয়ে গঠিত যৌথ পরিবার। আর একক পরিবার মা – বাবা ও ভাই বোন নিয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে কালের পরিক্রমায় যৌথ পরিবার হ্রাস পেয়ে একক পরিবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর পেছনে রয়েছে নানাবিধ কারণ। যেমন :

(i) সীমিত অর্থনৈতিক যােগানদাতা : একটি যৌথ পরিবার অনেকগুলাে মানুষ নিয়ে গঠিত, যার লােক সংখ্যা ১০ থেকে ১৫ জন অথবা তার উর্বে থাকলেও অনেক যৌথ পরিবারে অর্থনৈতিক যােগানদাতা মাত্র ২ থেকে ৪ জন থাকেন আবার তাদের আয়ের পরিমাণও সমান না। এ অবস্থায় যৌথ পরিবার থেকে পরিবার চালনা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয়। এমনকি তারা নিজের এবং নিজের স্ত্রী সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই যৌথ পরিবার ভেঙ্গে মা, বাবা, দাদা, দাদী অন্যান্য সদস্যদের ছেড়ে একক পরিবার গঠনের চিন্তা করেন।

(ii) ব্যক্তি স্বার্থপরতা : যৌথ পরিবারের অর্থনৈতিক যােগানদাতা ব্যক্তিগণ অনেক সময় সবার সাথে মিলেমিশে যৌথ সম্পত্তি গড়ে তােলার পাশাপাশি, যৌথ পরিবারের সদস্যদের অজান্তে নিজের, নিজের স্ত্রী অথবা সন্তানের নামে আলাদা সম্পত্তি গড়ে তুলেন।পরবর্তীতে তা পরিবারের অন্যান্য সদস্য গনের মধ্যে জানাজানি হলে ঝগড়ার হয় আর যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

(iii) কর্মজীবীদের সংখ্যা বৃদ্ধি : পরিবারের কর্মজীবী সদস্যদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মজীবী সদস্যগণ চাকুরীর সুবাদে দীর্ঘদিন তাদের যৌথ পরিবারের বাহিরে দেশ – বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকতে হয় ৷ ফলশ্রুতিতে এক সময় তাদের মধ্যে যৌথ পরিবারে থাকার আগ্রহ কমে যায় বা তাদের সন্তানাদি মা-বাবার সাথে একক পরিবারে থাকতে অভ্যস্ত থাকায় তারা আর যৌথ পরিবারে ফিরে আসতে চায় না। ফলে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যেতে থাকে।

(iv) ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তার : বর্তমান সমাজে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে যাওয়ার অনুতেম প্রধান কারণ হলাে ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তার। পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তি চান পরিবারের সকল সদস্যকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে। ফলে একক পরিবার বৃদ্ধি পায়।

একটি আদর্শ পরিবারের কার্যাবলি : সব পরিবারই তাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধ কার্যাবলি করে থাকে। কিন্তু একটি আদর্শ পরিবারের কার্যাবলি হয় অনেক গুছানাে এবং নিয়ন্ত্রিত নিচে আদর্শ পরিবার এর কার্যাবলী আলোচনা করা হলো :

মিলেমিশে থাকা একটি আদর্শ পরিবারের অন্যতম কার্যাবলি হলাে পরিবারের সকলই মিলেমিশে একত্রে বাস করা। আর একাজটাই একটি আদর্শ পরিবার করে থাকে।

শৃঙ্খলা বোধ : পরিবারের সবাই একটা নির্দিষ্ট শৃঙ্খলার মধ্যে বাস করে। তারা বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ হতে নিজেদের বিরত রাখে এবং শান্তিতে বসবাস করে।

মানসিক শক্তি বৃদ্ধি : পরিবারের কারও বিপদে পরিবারের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ তাকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে ফলে সে তার বিপদ হতে দ্রুত সেরে উঠতে পারে।

সহযোগী মনোভাব : একটি আদর্শ পরিবারের লোকজন সর্বদা একে অন্যের প্রতি সহযােগী মনােভাব প্রকাশ করে। কেউ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্যের কমতি থাকে না।

ক্ষমাপূর্ণ মনােভাব পরিবারের কেউ ভুল কাজ করে থাকলে তাকে শাস্তি না দিয়ে বুঝানাের মাধ্যমে ক্ষমা করে দেওয়ার মনােভাব একটি আদর্শ পরিবারের অন্যতম কার্যাবলি।

একে অপরকে সময় দেওয়া : এই আধুনিক যুগে সবাই এখন যন্ত্র হয়ে গেছে কিন্তু একটি আদর্শ পরিবার এর ক্ষেত্রে অন্যতম কার্যাবলি পরিবারের সব সয়মই একে অন্যকে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দেয়।

উপরিউক্ত ভাবে একটি আদর্শ পরিবার তাদের কার্যাবলী সম্পাদন করে এবং সুখ-শান্তির সহিত বসবাস করে।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.