Buriganga

প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি সবাই ভালো আছো। তোমরা কি ৯ম শ্রেণি ১১শ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২৪ বিজ্ঞান এর উত্তর সম্পর্কে ধারণা নিতে চাচ্ছো? কিংবা এসাইনমেন্টটি কিভাবে প্রস্তুত করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে আগ্রহী? তাহলে বলবো তোমরা ঠিক ওয়েবসাইটে এসেছো। তোমাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটিতে রয়েছে ৯ম শ্রেণির ১১শ সপ্তাহের বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্টের বাছাইকরা উত্তর- বুড়িগঙ্গাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে জনগণের সহায়তায় করণীয়।

৯ম শ্রেণির ১১শ সপ্তাহের বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্ট

https://i.imgur.com/gkKCgQU.jpg

অ্যাসাইনমেন্ট : প্রজ্ঞা তার বাবার সাথে বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকায় করে বেড়াতে গেল। দাদা বাড়িতে যাওয়ার সময় নদীর পাড়ের যে ছবি তার মনে গেঁথে ছিল তার সঙ্গে এই মুহূর্তে দেখা চিত্রের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পেল না। নদীর কোন পাড় নেই, আছে অসংখ্য দালানকোঠা, দোকানপাট, শিল্প-কারখানা। পানির রং একেবারেই কালো, দুর্গন্ধময়। যে বিশুদ্ধ বাতাস নেবার উদ্দেশ্যে সে বের হয়েছিল, উল্টো দুর্গন্ধে তার দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। প্রজ্ঞার খুব মন খারাপ হলো। দেশের এত বড় নদীর এই দুরবস্থা।

ক) বুড়িগঙ্গার নদীর পানি মাছসহ অন্যান্য জীব বসবাসের জন্য উপযুক্ত কি না? ব্যাখ্যা করো।

খ) বুড়িগঙ্গার পাড়ে যদি কোনো ফসলি জমি থাকে তাহলে তার সেচ কার্যক্রম কি বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে করা সম্ভব? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

গ) বুড়িগঙ্গাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় তুমি কি করতে পারো? উপস্থাপন করো।

নির্দেশনা :

  • পাঠ্যবইয়ের সহায়তা নিতে পারে;
  • ইন্টারনেট, বিভিন্ন মিডিয়া ও প্রতিবেদনের সহায়তা নিতে পারে।

৯ম শ্রেণির ১১শ সপ্তাহের বিজ্ঞান অ্যাসাইনমেন্টের বাছাইকরা উত্তর

দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্যের কোঠায় সীমাহীন দূষণের কারণে ঢাকার প্রাণ বুড়িগঙ্গা এখন মৃত নদী। এ নদীর পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন প্রায় শূন্যের কোঠায়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী বসবাসের জন্য প্রতি লিটার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ ৫ মিলিগ্রাম বা তার বেশি থাকা প্রয়োজন।

অন্যদিকে দ্রবীভূত হাইড্রোজেনের মাত্রা কমপক্ষে ৭ মিলিগ্রাম থাকা উচিত। অথচ বুড়িগঙ্গা নদীর পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ দশমিকের ঘরে। এ অবস্থায় বুড়িগঙ্গায় প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই।

বুড়িগঙ্গা নদীর পানি মাছসহ অন্যান্য জীবের বসবাসের অনুপযুক্ত। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো :

আমাদের পরিবেশে যে সকল প্রাণী আছে তাদের মধ্যে জলজ প্রাণীর জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি। জলজ প্রাণী জলে বাস করে জলজ পরিবেশ থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। জলেই বংশবিস্তার করে এবং বেশিরভাগ জলজ প্রাণী জল থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পেয়ে থাকে। জলজ প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় মাছ। পানি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে বেঁচে থাকে, পানিতে বংশ বৃদ্ধি করে এবং মাছ ফুলকার সাহায্যে পানিতে দ্রবণীয় অক্সিজেন গ্রহণ করে। শহরের ঘরবাড়ি ও নর্দমার ময়লা আবর্জনা এবং শিল্প কারখানা থেকে নির্গত প্রাণী ও উদ্ভিদ আবর্জনাগুলো হচ্ছে জৈব আবর্জনা। সবচেয়ে বেশি শিল্পজাত বর্জ্য নির্গত হয় চিনি, খাবার, কাগজ ও চামড়ার কলকারখানা থেকে। ওই সকল জৈব পদার্থ পার্শ্ববর্তী জলাধার ও নদনদীর পানিকে দূষিত করে।

খনি ও কলকারখানার ময়লা আবর্জনা, তৈল উত্তোলন ও পরিশোধন ক্ষেত্র, কৃষি ক্ষেত্র ইত্যাদি উৎস থেকে বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করে। পানিতে পচনশীল জৈব পদার্থের পরিমাণ যত বেশি হয়, সেগুলোকে বিশ্লিষ্ট করার জন্য তত অধিক পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন হওয়ায় পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ হ্রাস পায়; যা জলজ প্রাণীর জীবনধারণের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এমতাবস্থায় জলজ জীবের মৃত্যুও ঘটতে পারে। আর এ কারণেই বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে এবং বুড়িগঙ্গা নদীতে মাছের পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, বুড়িগঙ্গার বিষাক্ত পানি ও উৎকট গন্ধ থেকে আশপাশের এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। তাই বলা যায় বুড়িগঙ্গার বুড়িগঙ্গা নদীর পানি সহ অন্যান্য জীবের বসবাসের অনুপযুক্ত।

বুড়িগঙ্গার পাড়ে যদি কোন ফসলি জমি থাকতো তবে তার সেচ কার্যক্রম বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে করা সম্ভব নয়। নিচে আমার উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করা হলো:

পানি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজ থেকে শুরু করে কৃষি শিল্প ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই পানির নির্দিষ্ট মান যদি না থাকে তবে জীববৈচিত্র্য বা পরিবেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর হবে, তেমনি কৃষিক্ষেত্রে এর ব্যবহার হবে ক্ষতিকর। কৃষিতে সেচকাজে খাল-বিল, নদী বা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহৃত হয়। কৃষিতে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা যায় না। শহরের ঘরবাড়ি ও নর্দমার ময়লা-আবর্জনা এবং শিল্প কারখানা থেকে নির্গত শিল্পজাত বর্জ্য; বিশেষ করে চামড়ার কারখানা থেকে নির্গত আবর্জনা বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত করছে। শিল্প বর্জ্য দিয়ে দূষিত পানি সেচ কাজে ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা নষ্ট করে দিতে পারে। সেই সাথে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। সুতরাং বলা যায়, বুড়িগঙ্গার পানি দিয়ে ফসলি জমিতে সেচ কার্যক্রম করা সম্ভব নয়।

বুড়িগঙ্গাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় আমি যা করতে পারি তা উপস্থাপন করা হলো-

পানির অপর নাম জীবন। পানি ছাড়া একদিনও চলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। প্রতিদিন প্রায় সব ধরনের কাজে আমরা পানি ব্যবহার করে থাকি। আবার বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির উন্নয়ন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর এই কৃষিকাজে সেচের জন্য দরকার হয় পানি। অর্থাৎ পানি ছাড়া কোনভাবেই উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশ শিল্পে অত্যন্ত উন্নত। এমন কোন শিল্প কারখানা নেই, যেখানে পানির প্রয়োজন হয় না। তাই বলা হয়ে থাকে, উন্নয়ন ও পানি; একে অপরের পরিপূরক। মানব সৃষ্ট বিভিন্ন কারণে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকা শহরের বাসাবাড়ী ও নর্দমার ময়লা আবর্জনা এবং চামড়া কারখানা থেকে নির্গত আবর্জনা বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষিত করছে।

বুড়িগঙ্গাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে স্থানীয় জনগণের সহায়তায় আমি যে সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি তা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-

১. সর্বস্তরের মানুষকে পানি দূষণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া প্রয়োজন এবং এর প্রতিক্রিয়ার ভয়াবহ চিত্র জনসাধারণের নিকট তুলে ধরা প্রয়োজন। প্রয়োজন বোধে লিফলেট, পোস্টার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (যেমন- ফেইসবুক) বা জাতীয় প্রচার মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি।

২. শহর ও বাসা বাড়ির আবর্জনা ও নর্দমার বর্জ্য, নদ-নদী, খাল-বিল গড়িয়ে পড়ার আগে শোধন করা উচিত। এ জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির এবং প্রয়োজনবোধে কমিটি গঠন করে আইন তৈরি করা ও আইন অমান্যকারীকে আর্থিক জরিমানার ব্যবস্থা করা।

৩. নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অব্যাহত রাখা অত্যাবশ্যক। নদীর তলদেশে যাতে পলি জমতে না পারে সে জন্য নিয়মিত ড্রেজিং প্রয়োজন।

৪. কৃষি জমিতে জৈব সার এবং পরিমিত পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা উচিত। ফলে অতিরিক্ত সার জলাশয় এর পানিকে দূষিত করতে পারবে না।

৫. শিল্প ও কলকারখানার বর্জ্য পার্শ্ববর্তী জলাশয় ও নদ-নদীতে পড়ার পূর্বে শোধন করা প্রয়োজন।

৬. খোলা মাটিতে রাসায়নিক দ্রব্য, রং অথবা গাড়ির তেল কখনো ফেলা উচিত নয়। কেননা এ সমস্ত দ্রব্য মাটি চুঁয়িয়ে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করে।

৭. কীটনাশক, ছত্রাক নাশক ও আগাছানাশক এর যথেচ্ছা ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। এক্ষেত্রে কৃষকদের সাথে আলোচনা করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।

৮. রান্নাঘরের নিষ্কাশন, নালায় ও টয়লেটে রাসায়নিক বর্জ্য বা তেল না ফেলতে শহরের মানুষদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারি।

জনসচেতনতাই পারে বুড়িগঙ্গা নদীর পানি দূষণ হতে রক্ষা করতে। সর্বোপরি, সকল স্থানীয় লোকদের সহায়তায় বুড়িগঙ্গাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.