Japan Earth Quake

সম্প্রতি সংঘটিত বিশ্বের কয়েকটি দেশের বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণ, উৎস ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তালিকা প্রস্তুত কর

এসএসসি ও দাখিল ২০২৫ এর সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের জন্য প্রণীত এসএসসি ২০২৫ (১০ম শ্রেণি) ৫ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এর উত্তর– ভূমিকম্পের কারণ, উৎস ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তালিকা প্রস্তুত নিয়ে ও বাংলাদেশে ভূমিকম্প সংঘটিত হলে এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলে সেক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে তােমার করণীয় সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন নিয়ে হাজির হলাম। তোমরা যারা সরকারি, বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসমূহের দশম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত আছো তোমাদের ৫ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট এর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের একটি নির্ধারিত কাজ দেয়া হয়েছিল। যথাযথ মূল্যায়ন নির্দেশনা অনুসরণ করে তোমাদের জন্য দশম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ৫ম সপ্তাহের এসাইনমেন্ট এর বাছাই করা একটি নমুনা উত্তর দেওয়া হল।

দশম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের ৫ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট এর জন্য প্রণীত এই উত্তরটি/সমাধানটি (ভূমিকম্পের কারণ উৎস ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তালিকা প্রস্তুত) অনুসরণ করে তোমরা মূল্যায়নে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার প্রত্যাশা করছি।

এসএসসি ও দাখিল ২০২৫ (১০ম শ্রেণি) ৫ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

পঞ্চম সপ্তাহে দাখিল দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জীববিজ্ঞান বিষয়ের সাথে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এর এসাইনমেন্ট দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পাঠ্য বইয়ের চতুর্থ অধ্যায় বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু এর ভূমিকম্প অধ্যয়ন করার পর শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত কাজটি সম্পন্ন করবে।

তোমাদের জন্য দাখিল দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের দ্বিতীয় এসাইনমেন্ট বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।

https://i.imgur.com/7RasZ6K.jpg

শ্রেণিঃ দাখিল ১০ম, বিষয়ঃ বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়,

এ্যাসাইনমেন্ট নং-২, সর্বমোট নম্বরঃ ১৬, অধ্যায় ও শিরোনামঃ ৪র্থ, বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ু এর ভূমিকম্প

অ্যাসাইনমেন্টঃ সম্প্রতি সংঘটিত বিশ্বের কয়েকটি দেশের বড় ধরনের ভূমিকম্পের কারণ, উৎস ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তালিকা প্রস্তুত কর। বাংলাদেশে এ ধরনের কোনাে ভূমিকম্প সংঘটিত হলে এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলে সেক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে তােমার করণীয় সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।

শিখনফল/বিষয়বস্তুঃ

১. ভূমিকম্পের ধারনা ব্যাখ্যা করতে পারবে।
২. ভূমিকম্পের কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবে।
৩. ভূমিকম্পের ফলাফল ব্যাখ্যা করতে পারবে।
৪. ভূমিকম্প ঝুঁকি মােকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ ব্যাখ্যা করতে পারবে।
৫. ভূমিকম্প পরবর্তী পরিস্থিতি মােকাবিলায় সহযােগিতার মনােভাব তৈরি করবে।

এসএসসি ২০২৫ (১০ম শ্রেণি) ৫ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এর উত্তর

অ্যাসাইনমেন্ট উল্লেখিত মূল্যায়ন রুবিক্স ও নির্দেশনা সংকেত অথবা ধাপসমূহ অনুসরণ করে তোমাদের জন্য দাখিল দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের দ্বিতীয় এসাইনমেন্ট এর দুটি নমুনা উত্তর ভূমিকম্পের কারণ, উৎস ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তালিকা প্রস্তুত নিয়ে ও বাংলাদেশে ভূমিকম্প সংঘটিত হলে এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলে সেক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে তােমার করণীয় সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে দেয়া হলো।

ভূমিকম্পের কারণ, উৎস ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তালিকা প্রস্তুত

সূচনাঃ

ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পৃথিবীর বহু দেশে এবং বহু অঞ্চলে এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। সভ্যতার বহু ধ্বংসলীলার কারণ হিসেবে ভূমিকম্পকে দায়ী করা হয়। ধারণা করা হয়, গত ৪ হাজার বছরের ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলায় পৃথিবীর প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ লোক মারা গেছে।

নানা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তিত হচ্ছে। বিজ্ঞানীগণ মনে করেন, ভূত্বকের নিচের অংশে তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলো থেকে তাপ বিচ্ছুরিত হয়। এইটা প্রশমিত হয়ে পৃথিবীর অভ্যন্তরে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয় এবং সেখানে প্রবল শক্তি উৎপন্ন হয়ে ভূত্বকের বিভিন্ন অংশের আলোড়ন ও পরিবর্তন সাধন করছে।

অভ্যন্তরীণ শক্তি দ্বারা ভূত্বকের এই পরিবর্তন প্রক্রিয়া অধির প্রক্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। আকস্মিকভাবে পরিবর্তনকারী শক্তির মধ্যে ভূমিকম্প আগ্নেয়গিরি প্রধান। কখনো কখনো ভূপৃষ্ঠের কতক অংশ হঠাৎ কোন কারনে কেঁপে উঠে।

এ কম্পন অত্যন্ত মৃদু থেকে প্রচন্ড হয়ে থাকে, যা মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয়। ভূপৃষ্ঠে এরূপ আকস্মিক কম্পনকে ক্ষণস্থায়ী কম্পাঙ্কের ভূমিকম্প বলে। ভূ-অভ্যন্তরে যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়, তাকে ভূমিকম্পের কেন্দ্র বলে। কেন্দ্রের ঠিক সোজাসুজি ওপারে ভূপৃষ্ঠের নাম উপকেন্দ্র।

কম্পনের বেগ উপকেন্দ্র হতে ধীরে ধীরে চারদিকে কমে যায়।

ভূমিকম্পের কারণঃ

কারণ অনুসন্ধান করে বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেন পৃথিবীর বিশেষ কিছু এলাকায় ভূকম্পন বেশি হয়। এ সমস্ত এলাকায় নবীন পর্বতমালা অবস্থিত। তাদের মতে ভিত্তিশীল এক চ্যুতি বা ফাটল বরাবর আকর্ষণে ভূ-আলোড়ন হলে ভূমিকম্প হয়।

এছাড়া আগ্নেয়গিরির লাভা প্রচন্ড শক্তিতে ভূ-অভ্যন্তর থেকে বের হয়ে আসার সময় ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ভূ -তাপ তাপ বিকিরণ করে সংকুচিত হলে ভূ-নিম্নস্থ শিলাস্তরের সমান্তর ফাটলের সৃষ্টির ফলে ভূ-কম্পন অনুভূত হয়।

ভূ- আলোড়ন এর ফলে ভূত্বকের কোন স্থানের শিলা ধসে পড়লে বা শিলাচ্যুতি ঘটলে ভূমিকম্প হয়। এছাড়াও পাশাপাশি অবস্থানরত দুটি প্লেটের একটি অপরটির সীমানা বরাবর তলদেশে ঢুকে পড়ে অথবা অনুভূমিকভাবে আগে পিছে সরে যায়।

এ ধরনের সংঘাতপূর্ণ পরিবেশ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়। বিজ্ঞানীরা এর দুটি কারণ চিহ্নিত করেছেন-

  1. প্লেট সমূহের সংঘর্ষের ফলে ভূত্বকে যে ফাটল সৃষ্টি হয় তা ভূমিকম্প ঘটিয়ে থাকে।
  2. ভূ-অভ্যন্তরে বা ভূ-ত্বকের নিচে ম্যাগমার সঞ্চারণ অথবা চ্যুতি রেখা বরাবর চাপমুক্ত হওয়ার কারণে ভূমিকম্প হয়ে থাকে।

বাংলাদেশের ভূমিকম্পের কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতিঃ

ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান ও ইউরোপিয়ান প্লেটের সীমানার কাছে অবস্থিত। এ কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল। ভূমিরূপ ও ভূ অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত কারণে বাংলাদেশের ভূ- আলোড়নজনিত শক্তি কার্যকর এবং এর ফলে এখানে ভূমিকম্প হয়।

মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক কারণে দেশের কিছু অংশ ডেবে যাচ্ছে আবার কিছু অংশ উঠে যাচ্ছে। এভাবে ভূ স্থিতির ফলে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়ছে। পাহাড়িয়া অঞ্চলে ভূমিকম্পের কারণে ফাটল সৃষ্টি হলে, সে ফাটল থেকে আবার ফাটল বৃদ্ধি পেলে ভূমিকম্প হয়।

ভূমিরূপ জনিত কারণে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা দেখা দেয়। পাহাড় কাটাসহ মানবসৃষ্ট কারণে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ক্ষয়ক্ষতিঃ

বাংলাদেশে ঘনঘন ভূকম্পন অনুভূত হচ্ছে। সর্বশেষ গত ৩ জানুয়ারি বিকেল তিনটে নয় মিনিটে সারাদেশ কেঁপে উঠল ভূমিকম্পে। এর মধ্য রাতেও অনুভূত হয় ভূমিকম্প। সিলেট অঞ্চলে এর তীব্রতা ছিল বেশি। ফলে সেখানে ভবন ফাটল এবং হেলে পড়ার ঘটনাও ঘটেছে।

কোথাও কোথাও ভূমিতেও সৃষ্টি হয়েছে ফাটল। যা অনেকের মনেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষ করে রাজধানীসহ অন্যান্য নগরবাসীর ভয়টাই বেশি। কেননা, ভূমিকম্পে ভবন হেলে পড়ে এমনকি ধসে পড়ার ভয়ে থাকে। বাংলাদেশে ভূমিকম্প হলে রাজধানী ঢাকা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় দালান-কোঠাগুলো হেলে পড়ে।

বাসাবাড়িতে আটকা পড়া অধিকাংশ মানুষ গুলো আহত হয়। রাস্তায় থাকলে চাপা পড়ে মাথা কিংবা শরীরের উপরে কিছু পরে। এছাড়াও ভূমিকম্পের ফলে দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া যায় যেমন ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাস বন্যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম খবর পাওয়া যায়।

নেপালের ভূমিকম্পের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতিঃ

২০১৫ এর নেপাল ভূমিকম্প (এছাড়াও হিমালিয়ান ভূমিকম্প নিচে উল্লেখিত) ৭.৮ বা ৮.১ মাত্রায় একটি ভূমিকম্প যা শনিবার ২৫ এ এপ্রিল ২০১৫ সালে ১১:৫৬ এনএসপি (৬:১২:২৬ ইউটিসি) সময়ে নেপালের লাল রংয়ের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব কেন্দ্রস্থল থেকে আনুমানিক ২৯ কিমি. (১৮ মাইল) ব্যাপী এলাকায় ভূপৃষ্ঠের প্রায় ১৫ কিমি (৯.৩ মাইল) গভীরে সংঘটিত হয়।

২৫ এ এপ্রিল ২০১৫ মূল সময় ১১:৫৬:২৬ মাত্রা ৭.৮ গভীরতা ১৫.০ (৯ মাইল) ভূকম্পন বিন্দু ২৮.১৪৫ ডিগ্রী ধরন ধাক্কা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নেপাল, ভারত, চীন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান। হতাহত ৭ হাজার ৭৪৯ জন মৃত ১৭,২০০ জন আহত। নেপালের আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প।

Nepal Earth Quake

ভূমিকম্পে এখনো পর্যন্ত নেপালসহ ভারত, চীন, ও বাংলাদেশে মোট ৬ হাজার ৫০০ জনের অধিক মানুষ নিহত হয়েছে। জানা যায় এই ভূমিকম্পের ফলে মাউন্ট এভারেস্ট মৃত্যুসংখ্যা ২০১৪ সালের তুষারধ্বসে মৃত্যুসংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

কাঠমুন্ডু শহরে অবস্থিত শতাব্দীপ্রাচীন ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানসমূহ ভূমিকম্পের ফলে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নেপাল জুড়ে ক্রমাগত এবং স্থানীয় ০৭:০৯:০৮ ইউটিসি সময়ে আরেকটি ৬.৭ মাত্রার ভূমিকম্প ২৬ এপ্রিল আঘাত হানে।

জাপানে ভূমিকম্প ক্ষয়ক্ষতিঃ

জাপানে ভূমিকম্প এবং সুনামি প্রতি বছর হয়। যখন কোন ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল মধ্যে থাকে এবং তার মাত্রা ৭ বা ৭ এর অধিক হয় তখন টেকটোনিক প্লেট তুলনায় খাড়াভাবে উঠে এলে সুনামির সৃষ্টি হয়। ৮.৯মাত্রার জাপানি ভূমিকম্পে একটা প্লেট আরেকটা প্লেটের তুলনায় প্রায় আট ফুট উঠে গিয়েছিলো।

যেখানে সুনামির সৃষ্টি হয় সেখানে পানির গতিবেগ ঘন্টায় প্রায় ৪ ‘শ থেকে ৫’শ কিলোমিটার গতি লাভ করে। জাপানে এই ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে এর উচ্চতা ছিল প্রায় ৩০ ফিটের মত।

জাপানের ভূমিকম্প এবং তার পরবর্তী সুনামির ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গেছে যে ভূমিকম্পের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান খুবই নগন্য। বরং ভূমিকম্প থেকে উদ্ভূত সুনামির কারণে জাপানে এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ও প্রায় ৭ হাজার ৩ ‘শ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। নিখোজঁ ১১হাজারের মতো লোক।

জাপানের যেহেতু প্রতিবছরের মোটামুটি বড় ভূমিকম্প সুনামি সৃষ্টি হয় তাই এদের বাসা বাড়ি এবং অন্যান্য স্থাপনাগুলো ভূমিকম্প সহনীয় হিসেবে নির্মিত হয়ে থাকে। এ বিষয়ে তাদের অভ্যস্হতার কারণেই ভূমিকম্প ও সুনামি পরবর্তী সময়ে তারা ভীত সংক্রান্ত না হয়ে বরং সংশ্লিষ্ট ভাবে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ গুলো নিয়েছে।

এই প্রসঙ্গে গত বছরে হাইতিতে ৭.৫ মাত্রার এবং চিলিতে ৮.৩ মাত্রার ভূমিকম্প উল্লেখযোগ্য। এই ক্ষেত্রে হাইতির ভূমিকম্পটি অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও ওখানে যথাযথ ভূমিকম্প সহনীয় ভবন ও স্থাপনা না থাকায় প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার লোক প্রাণ হারায়।

অন্যদিকে, চিলির ভূমিকম্পটি কয়েক গুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাদের ভবন ও স্থাপনা নির্মাণ কৌশল ভূমিকম্প সহনীয় হওয়ায় ৫০০ জন প্রাণ হারিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতিঃ

প্রশান্ত মহাসাগরীয়, ইউরেশিয়ান এবং ভারতীয় – তিনটি লিথোস্ফেরিক প্লেটের সংযোগস্থলে ইন্দোনেশিয়া অবস্থিত। প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটটি সর্বাধিক সক্রিয়, এটি সর্বকালে সরে যায় এবং ইউরেশিয়ান প্লেটের নীচে ডুব দেওয়ার চেষ্টা করে। পৃথিবীর পৃষ্ঠের দ্বিতীয়টির নিচে একটি প্লেটের নিমজ্জনের অঞ্চলটি একটি সিসমিক বেল্ট গঠন করে যা আলাস্কা থেকে নিউজিল্যান্ড পর্যন্ত প্রসারিত হয় এবং এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

indonesia Earth Quake

দেশটিতে ভূমিকম্পের তীব্রতা এবং ফ্রিকোয়েন্সি সুমাত্রিনস্কি ফল্টের সাথেও যুক্ত, যা ইন্দোনেশিয়ার উপকূলের সমান্তরালে অবস্থিত। এটি একটি ভূমিকম্পের দিক থেকে সক্রিয় জোন যেখানে কম্পনগুলি ক্রমাগত রেকর্ড করা হয়। সিসমোলজিস্টরা বছরে প্রায় 5 হাজার ভূমিকম্প রেকর্ড করেন, তাদের মাত্রা 4.0 পয়েন্টের চেয়ে বেশি। ইন্দোনেশিয়ায় ত্রুটির উপস্থিতির কারণে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলগুলি উপকূলের কাছাকাছি অবস্থিত, যা সুনামির ঘটনাটিকে উস্কে দেয়, যা মৃত্যু এবং ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করে।

ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপে গত ১৪ ই জানুয়ারি ২০২৫ শুক্রবার দিবাগত রাতে শক্তিশালী ৬ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত সাতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। এতে শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। বহু বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভূমিকম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মানুষজন ছোটাছুটি করে নিরাপদ স্থানে যায়।

ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সুলাওয়েসি দ্বীপের ম্যাজেনে শহরের ছয় কিলোমিটার উত্তরপূর্ব এলাকায় ভূগর্ভের ১০ কিলোমিটার গভীরে। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার বরাত দিয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এসব তথ্য জানিয়েছে।

শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকের এই ভূমিকম্পে অন্তত ৬০টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে জানা গেছে।

প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্য মতে, ম্যাজেনে শহরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৬৩৭ জন। আর পাশের মামুজু শহরে আরো তিনজনের মৃত্যু হয় এবং দুই ডজন মানুষ আহত হয়েছে।

ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপঃ

বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পের বিপর্যয় মোকাবিলার ন্যূনতম প্রস্তুতি নেই। নাজুক উদ্ধার তৎপরতার কারণে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। অসহায় ভাবে মৃত্যুর শিকার হতে পারে লাখ-লাখ মানুষ।

জনসংখ্যার ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, অধিক বহুতল ভবন, খোলা জায়গার অভাব, সরু গলি পথ, উদ্ধার উপকরণের দুরবস্থার কারণে রাজধানীতে ভূমিকম্পজনিত ঝুঁকি বাড়ছে। ভূমিকম্প জনিত সচেতন ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই ভূমিকম্পের নিয়ন্ত্রক হ্রাস করা সম্ভব।

আমরা একটু গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবে যে,আমাদের দেশে যদি ৩০ থেকে ৩৫ সেকেন্ড এর কোন ভূমিকম্প হয় এবং ভূমিকম্পের যে প্রাণহানি ঘটবে তার চেয়ে বেশি

প্রাণহানি ঘটবে উদ্ধারকাজের ব্যর্থতার জন্য। এজন্য ভূমিকম্পের মোকাবেলার প্রস্তুতি সম্পর্কে আমারদের ধারণা থাকা একান্ত বাঞ্ছনীয়। ভূমিকম্প খুব অল্প সময়ে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। এটা সামান্য সময় স্থায়ী হয়।

এটি অকস্মাৎ ভূ-অভ্যন্তরে ঘটে থাকে। ফলে সরাসরি পর্যবেক্ষণের কোনো সুযোগ নেই। এতদসত্বেও ভূবিজ্ঞানীরা বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছে, ভূমিকম্প মোকাবেলায় এসব পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করেও ক্ষয়ক্ষতি বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব।

ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতিঃ

ভূমিকম্পের জন্য যে সকল প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ তা হল-

  • যারা নতুন নতুন বাড়ি তৈরি করবেন তাদেরকে স্ট্রাকচার ও ডিজাইন করার সময় ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুসরণ করতে হবে এবং ভালো প্রকৌশলী তদারকির মাধ্যমে ভালো নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে বাড়ি তৈরি করতে হবে।
  • ইটের তৈরি দেয়াল করলে চার তলার উপরে ভবন না করা, ভবন দোতালার বেশি হলে প্রতিটি কোণায় এর মাঝখানে খাড়া রড ঢুকাতে হবে। প্রত্যেক জানালার পাশ দিয়ে খাড়া রোড ঢুকাতে হবে।
  • দরজা ও জানালা ঘরের কোনায় না হওয়াই ভালো। সর্তকতা অবলম্বন করলে ইটের দেয়ালের ভবনের প্রতিরোধক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যাবে। ভূমিকম্পের সময় দেয়ালে ফাটল ধরলেও ধসে পড়ার আশঙ্কা কমে যাবে। অথচ এর জন্য খরচ মাত্র এক থেকে দুইভাগ বাড়বে।
  • টিনের ঘরগুলোর ভুমিকম্পে ক্ষতির সম্ভাবনা কম।তবে মাটির দেয়ালের বাড়িঘর ভুমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা কম।এজন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কোনাকুনিভাবে বাশঁ বা কাঠের ব্রেসিং ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • যদি কোনো ভবনের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে তবে ভবনটিকে নির্মানের পর শক্তিশালী করা যেতে পারে। এ জন্য কংক্রিট বিল্ডিং এর জন্য অতিরিক্ত রড ব্যবহার করে কংক্রিট চালাই দিয়ে দুর্বল স্থানগুলোতে আয়তন ও আকার বাড়ানো যেতে পারে।
  • অনেক সময় ফেরো সিমেন্ট দিয়ে ইটের দেয়ালে প্রলেপ দিলে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিচতলা সম্পুর্ণ খোলা রাখা উচিত নয়।সেমি পাকা ঘরগুলোর চারপাশে টানা দিয়ে বেধেঁ ফেললে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে করণীয়ঃ

১। ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে ধীর-স্থির ও শৃংখলাবদ্ধ ভাবে বের হওয়া।

২। রেডিও-টেলিভিশন থেকে জরুরি নির্দেশনাবলী শোনা এবং তা মেনে চলা।

৩। বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন লাইনে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা পরীক্ষা করে নেওয়া ও প্রয়োজনীয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

৪। সরকারের সংস্থাগুলোকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা করা।

৫। উদ্ধার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা।অস্থায়ী আশ্রয়স্থল ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা।যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সার্বিক সহযোগিতা করা।

৬। নিজের এবং অন্যদের আঘাত পরীক্ষা করাবেন প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া।

৭। খালিপায়ে চলাফেরা না করা। লুঠতরাজ থেকে সাবধান থাকা এবং অভিজ্ঞ লোকদের পরামর্শ মত চলা ।

৮। ভূমিকম্প দেশের সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে পূর্ব প্রস্তুতি থাকা আবশ্যক। সে জন্য সম্ভাব্য ভূমিকম্প পরবর্তী সময়ে সঠিকভাবে নিজেকে সেবায় মনোনিবেশ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ সব প্রতিষ্ঠান যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

৯। ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কর্মসূচি নিশ্চিতকরন। উদ্ধার কর্মসূচির অভাবে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটে।পূর্বপ্রস্তুতি, দক্ষ প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী নেটওয়ার্ক উদ্ধার কর্মকাণ্ডের মূল চাবি। তাছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ / ওষুধ চিকিৎসা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা।

বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারি অন্তর্ভুক্ত না হয়েও দুর্বল অবকাঠামো, অপরিকল্পিত নগরায়ন, প্রয়োজনীয় বিল্ডিং কোড মেনে না চলার কারণ এবং যত্রতত্র ভবন ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ।

যেহেতু ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে, একে থামিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সেহেতু ভূমিকম্প পূর্ববর্তী ও পরবর্তী পরিস্থিতির কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব।

ভূমিকম্পের ফলাফলঃ

ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীতে বহু পরিবর্তন ও ক্ষয়ক্ষতি সাহিত্য হয়। ভূমিকম্পের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ফল সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো।

ভূত্বকে অসংখ্য ফাটল এবং চ্যুতির সৃষ্টি হয় ভূমিকম্পের কারণে । ভূমিকম্পের ফলে কখনো সমুদ্রতলের অনেক স্থান ভেসে ওঠে। আবার কখনো স্থলভাগের অনেক স্থান সমুদ্রতলে ডুবে যায়।অনেক সময় নদীর গতি পরিবর্তন বা বন্ধ হয়ে যায়।

ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে পর্বতগাত্র হতে বৃহৎ বরফখণ্ড হঠাৎ নিচে পতিত হয় এবং পর্বতের পাদদেশে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ভূমিকম্পের ধাক্কায় সমুদ্রের পানির থেকে নিচে নেমে যায় এবং পরক্ষণেই ভীষণ গর্জন সহকারে 15 থেকে 20 মিটার উঁচু হয়ে ঢেউয়ের আকারে উপকূলে এসে আছড়ে পড়ে। এধরনের জলোচ্ছ্বাস কে সুনামি বলে।

2004 সালের 26 ডিসেম্বর ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডে, ভারত প্রভৃতি দেশে ব্যাপক জানমালের ক্ষতি হয়। ভূমিকম্পের ফলে পার্বত্য অঞ্চল থেকে ধস নামে গতি রোধ করে হ্রদের সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দুর্ভিক্ষ ও মহামারীতে বহু প্রাণহানি ঘটে।

এতে রেলপথ, সড়কপথ, পাইপলাইন প্রভৃতি ভেঙে যায় এবং যাতায়াত ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ে। টেলিফোন লাইন, বিদ্যুৎ লাইন প্রভৃতি ছিড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সমুদ্র তলদেশে প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হলে ভূপৃষ্ঠের বড় বাধঁ, কালভার্ট, সেতু প্রভৃতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও অনেক সময় সুনামির সৃষ্টি হয়।

About Author

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.