বাংলাদেশ

ভিকারুননিসা নূন কলেজের দশম শ্রেণির প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষার খাতায় ‘we want justice’ স্লোগান লিখে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে যায়। এরপর কলেজ প্রাঙ্গণে সম্মেলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে স্কুল ত্যাগ করে।

মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে রাজধানীর স্বনামধন্য এই কলেজে।

জানা গেছে, কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘সড়ক দুর্ঘটনা— আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে। তাদের অনেকেই কলেজের চাপে পড়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। আবার সেখানে গিয়েও কলেজের শিক্ষকের দায়িত্বহীনতার শিকার হয় তারা। এর প্রতিবাদে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার খাতায় এই স্লোগান লিখে আসে।

স্কুলের একজন শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, গত ৬ আগস্ট নগর ভবনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আয়োজনে ‘সড়ক দুর্ঘটনা— আমাদের করণীয়’ শিরোনামে এক মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে মেয়রের আমন্ত্রণে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪২১টি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নগর ভবনে যায়। অন্য সব স্কুলের মতো ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের পক্ষ থেকে কলেজ শাখার একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় ওই অনুষ্ঠানে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জের ধরেই স্কুলের দশম শ্রেণির মূল মর্নিংয়ের শিক্ষার্থীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানায়, নগর ভবনের সেই অনুষ্ঠানে কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছে। সেখানে তারা ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের সব শাখার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে নিরাপদ সড়কের দাবি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। অথচ তারা আন্দোলনে থাকা অন্য শিক্ষার্থীদের মত নেয়নি।

এদিকে, নগর ভবনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া শিক্ষার্থীদের কয়েকজনও জানায়, কলেজের কিছু শিক্ষক ও অধ্যক্ষের চাপে তারা ওই অনুষ্ঠানে যেতে বাধ্য হয়। আর সেখানে তাদের সঙ্গে যাওয়া শিক্ষকও দায়িত্বহীন আচরণ করেন।

ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ফারহানা খানম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে স্বীকার করেছেন, তারা যাওয়ার সময় দু’টি গাড়িতে করে শিক্ষার্থীদের নগর ভবন নিয়ে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় ৯ জন শিক্ষার্থীকে গভর্নিং বডির সদস্যের কাছে রেখে বাকিদের নিয়ে ফিরে আসেন তারা।

কিছু শিক্ষার্থীকে নগর ভবনে এমন গণসমাবেশে অরক্ষিত করে রেখে আসার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ হন অভিভাবকরাও।

ক্ষোভ জানিয়ে একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমরা আমাদের সন্তানদের লেখাপড়া করতে কলেজে পাঠাই। তাদের যদি এভাবে বাইরে কোথাও নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। আর যদি তারা বাচ্চাদের নিয়েই থাকেন, তাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বও তাদের পালন করা উচিত ছিল।’

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির একজন সাবেক শিক্ষার্থী এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষিকা ফারহানা খানমকে ফোন করলে তিনি সেই শিক্ষার্থীকে অকথ্য ভাষায় গালি দেন। ফারহানা খানম তার সেই ফেসবুক স্ট্যাটাসে ফোনালাপের ঘটনাকে ‘মিথ্যাচার’ উল্লেখ করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ফারহানা খানম কলেজের পরিবর্তী অধ্যক্ষ হওয়ার তালিকায় প্রথমে আছেন।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাবেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে ফারহানা খানমের ফোনালাপের অডিও ক্লিপ ও প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময়ের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। স্কুলের বাইরের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশ নেওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যেই ক্ষোভ ছিল। এসব অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের দায়িত্বশীল আচরণের ঘাটতিও আগে দেখা গেছে। তাই ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছেন অনেকেই।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.