বাংলাদেশ

নিরাপদ সড়ক চেয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝে ‘নিরাপত্তাহীনতার’ অজুহাতে রাজধানীর সব রুটের যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিকরা। পরিবহন মালিকদের অঘোষিত এ ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবারের পর আজ শুক্রবারও রাজধানী জুড়ে একই অবস্থা। সকাল থেকে যাত্রীবাহী কোনো বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি।

টানা পাঁচদিন আন্দোলন শেষে আজ (শুক্রবার) ষষ্ঠদিনে রাজধানীর কোথাও (বেলা ১১টা পর্যন্ত) শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ বা আন্দোলন করতে দেখা যায়নি। তবে সকালেই রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পরিবহন শ্রমিকদের অবস্থান নেয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রাজধানীর মিরপুর-১০, শেওড়াপাড়া, শাহবাগ, ফার্মগেট ঘুরে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন (শুক্রবার) হলেও এসব এলাকার সড়কে যাত্রীদের ভীড়। তবে কোনো যাত্রীবাহী বাস নেই। অত্যন্ত প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হয়ে পরিবহন সঙ্কটে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বাধ্য হয়ে কেউ পায়ে হেঁটে, কেউবা সিএনজি চালিত অটোরিকশায় বা রিকশায় গন্তব্যে রওয়ানা দিচ্ছেন। তবে তাদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

মিরপুর কাজীপাড়া থেকে ইয়াছিন আলী নামে একজন বলেন, পুরান ঢাকায় ব্যবসা। রাতে ফিরতে পারলেও আজ সকালে যাওয়ার মতো কোনো পরিবহন পাচ্ছি না। সিএনজি ও রিকশায় আগুন ভাড়া চাইতেছে। এত দূরের রাস্তা তো হেঁটে যাওয়াও কষ্টকর।

ফার্মগেটে কথা হয় আলমগীর হোসেন নামে এক কলেজ শিক্ষকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গাবতলী যাব। কিন্তু কোনো বাস মিলছে না। সিএনজি চালক এইটুকু দূরত্বের জন্য ৩শ’ টাকা ভাড়া চাচ্ছে। অপেক্ষা করছি, যদি কোনো কিছুতে উঠতে পারি।

এদিকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে না থাকলেও অঘোষিত কোনো পরিবহন ধর্মঘট চলছে কিনা জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাস ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান বলেন, সড়কে বাস বন্ধ করার কোনো সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। কেউ যদি অনিরাপদ মনে করে পরিবহন চালানো বন্ধ রাখেন তাহলে জোর করে তো আর তার বাস বা ট্রাক রাস্তায় নামিয়ে দেয়া যায় না।

বে সার্বিক পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ও অনিরাপদ উল্লেখ করে এ পরিবহন নেতা বলেন, আমার কাছে এখনো পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ও অনিরাপদ। তাহলে কেন আমি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে আমার পরিবহন রাস্তায় নামাব? কেউ এমনটা চায় না। তবে আমরা পরিস্থিতি অবজার্ভ করছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিরাপদ মনে হলে পরিবহন চলাচলও স্বাভাবিক হবে বলে মনে করি।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি-উত্তর) প্রবীর কুমার রায় বলেন, পরিস্থিতি আগের চেয়ে বেটার। আশা করছি ঠিক হয়ে যাবে। সড়কে সার্জেন্ট দিয়ে গাড়ির কাগজপত্র ও লাইসেন্স যাচাই-বাছাই চলছে। এ কাজ আমাদের রুটিন মাফিক। যে কারণে হয়তো লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন পরিবহন কমে যেতে পারে।

মিরপুর মডেল থানার ওসি দাদন ফকির জানান, সকাল থেকে মিরপুর এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি। তবে পরিবহন নেই বললেই চলে।

২৯ জুলাই (রোববার) রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১০ জন শিক্ষার্থী।

দুর্ঘটনার পর থেকেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সরকারিভাবে স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হলেও টানা পঞ্চম দিনের মতো গতকাল বৃহস্পতিবারও সড়কে নেমে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের ঘোষিত ৯ দফা দাবি যুক্তিসংগত উল্লেখ করে তার বাস্তায়নে কাজ করছে সরকার। এমন তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় শিক্ষার্থীদের ঘরে ফেরত যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।

একই কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেন, দুই সহপাঠী হারিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদ জানিয়েছে, তা যৌক্তিক। কিন্তু এ কারণে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। তাছাড়া কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাছে আমার অনুরোধ, যথেষ্ট হয়েছে, তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও, বাসায় ফিরে যাও।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.