Quota Protest BD

রোববার রাত ৮টার দিকে পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর চড়াও হওয়ার সময় কর্তব্যরত কয়েকজন সাংবাদিককেও লাঠিপেটা করে।

বেলা আড়াইটায় হাজারো শিক্ষার্থী অবস্থান নেওয়ার পর থেকে ওই চৌরাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিক্ষোভকারী বলছিল, সংসদে ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাবেন তারা।

পুলিশ জলকামান নিয়ে সেখানে শুরু থেকে অবস্থান নিলেও ছিল সংযত।

ডিএমপির রমনা জোনের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বিকালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “তারা আন্দোলন করছে, করুক। জনদুর্ভোগ যাতে না হয়, সেজন্য অনুরোধ করছি।”

অফিস ছুটির ওই সময় মৎস্য ভবন, টিএসসি ও সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে শাহবাগমুখী যানবাহন ঘুরিয়ে দিচ্ছিল পুলিশ। ফলে ওই সব মোড় ঘিরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল।

সন্ধ্যায় আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা মো. উজ্জ্বল মিয়া বলেছিলেন, “সংসদ অধিবেশন চলছে এখন, আমরা চাই এই অধিবেশন থেকেই ঘোষণা দেওয়া হোক কোটা পদ্ধতি সংস্কারের। যদি ঘোষণা না দেওয়া হয় তাহলে উঠব না।”

এই বিক্ষোভ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর বিকালে দশম সংসদের ২০তম অধিবেশন শুরু হয়।

এরপর রাত ৮টার দিকে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছোড়া শুরু করে। অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করে লাঠিপেটা।

পুলিশের হামলার মুখে কয়েক মিনিটের মধ্যে শাহবাগ মোড় থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় আন্দোলনকারীরা; সড়ক হয়ে যায় ফাঁকা।

ওই সময় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে পাঁচ সংবাদকর্মী ঢাকা ট্রিবিউনের ফাহিম রেজা নূর, প্রথম আলোর আসিফুর রহমান, ইউএনবির ইমরান হোসেন, বাসসের কামরুজ্জামান রেজা এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তারেক হাসান নির্ঝরের উপর পুলিশ হামলা চালায়।

এসময় আন্দোলনকারী কয়েকজনকে আটক করতেও দেখা যায়।

পুলিশের ধাওয়ায় আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঢুকে পড়ে চারুকলার সামনে অবস্থান নিয়ে সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তখন পাবলিক লাইব্রেরির সামনে অবস্থান নিয়ে থেমে থেমে তাদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ছিল পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশ এগিয়ে এসে ফাঁকা গুলিও ছোড়ে।

পুলিশের আক্রমণে পিছু হটে আন্দোলনকারীরা টিএসসির দিকে সরে এলে তাদের উপর চড়াও হয় ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। ভিডিও ধারণের সময় এক সাংবাদিকের মোবাইল ফোনটিও ভেঙে দেয় ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।

ছাত্রলীগে নেতাদের মধ্যে এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়, প্রচার সম্পাদক সাইফ বাবু।

প্রিন্স সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, আন্দোলনকারী টিএসসি ভাংচুর শুরু করতে গেলে তারা বাধা দিয়েছেন।

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’।

গত ১৪ মার্চ তারা ৫ দফা দাবিতে স্মারকলিপি দিতে সচিবালয় অভিমুখে যেতে চাইলে পুলিশি ধরপাকড় ও আটকের শিকার হন।

তারপর নানা কর্মসূচি পালনের পর রোববার শাহবাগে অবস্থান নেয় তারা। প্রথমে পাবলিক লাইব্রেরির সামনে তারা সমবেত হয়। ঘণ্টাখানেক পর তারা মিছিল করে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়।

বিক্ষোভকারীরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোজাম্মেল হক খানের কুশপুতুল দাহ করে।

সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদে যুগ্ম আহ্বায়ক উজ্জ্বল বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোটায় শূন্য থাকা সিটে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে, সেখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, এক কোটার শূন্য আসন অন্য কোটা দিয়ে পূরণ করা হবে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”

পরিষদের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন বলেন, “সংসদে অধিবেশন চলছে, সংসদে যারা আছে তারা আমাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত। আজকে আমরা দেখব, তারা জনগণের জন্য কী করে।

“সংসদে আমাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নিলে তবেই আমরা রাস্তা ছাড়ব। আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ অহিংস, কেউ যদি আমাদের বুকে গুলিও চালায় আমরা কিছু করব না।”

বিকাল ৫টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের সহকারী উপকমিশনার (এডিসি) আজিমুল হক ‘জনদুর্ভোগ’ সৃষ্টি না করে সরে যেতে বললেও বিক্ষোভকারীরা অনড় থাকে।

এসময় বেশ কয়েকজন হাতে গোলাপ নিয়ে পুলিশের দিকে এগিয়ে গেলে এক পর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, “বর্তমান কোটা ব্যবস্থা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী, মুক্তিযুদ্ধ করা হয়েছিল একটি বৈষম্যহীন দেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে। এ আন্দোলনের যৌক্তিকতা সেখানেই।”

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.