জাবেদা ও খতিয়ান উভয়টি হিসাব চক্রের দুটি ধাপ। খতিয়ান জাবেদার থেকেও অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং ব্যবহার উপযোগী। পক্ষান্তরে জাবেদা বইটি সংরক্ষণ করা ঐচ্ছিক হলেও খতিয়ান প্রস্তুত করা বাধ্যতামূলক বিষয়।
কারণ খতিয়ানের উদ্বৃত্ত থেকে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা ছাড়াও পাশাপাশি ব্যবসার আর্থিক ফলাফল এবং আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা সহজ হয়। এখন জাবেদা ও খতিয়ানের মধ্যে পার্থক্য কি সেটা জানার জন্য অনুগ্রহ করে আপনি এই অধ্যায়টি সম্পূর্ণ পড়ুন।
জাবেদা ও খতিয়ানের মধ্যে পার্থক্যসমূহ
জাবেদা ও খতিয়ান উভয়েই হিসাব চক্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি ধাপ। দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির মত অনুযায়ী প্রতিটি লেনদেনকে তারিখের ক্রম অনুযায়ী প্রথমে জাবেদায় তারপর খতিয়ানে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
জাবেদা কাকে বলে?
কোন কারবার বা প্রতিষ্ঠানে আর্থিক লেনদেন সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে প্রাথমিকভাবে যে বইতে তারিখ, বিবরণ এবং টাকার পরিমাণসহ ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে তাকে জাবেদা বলা হয়।
খতিয়ান কাকে বলে?
হিসাবের যে বইতে লেনদেনসমূহ পৃথক পৃথক শিরোনাম অনুসারে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে তাকে খতিয়ান বলে।
আরও দেখুনঃ এন্ড্রয়েড অ্যাপের নতুন ফিচার সবার আগে পাওয়ার উপায়
নিম্নে জাবেদা ও খতিয়ানের মধ্যে বিষয় উল্লেখ পূর্বক লক্ষ্যণীয় পার্থক্যগুলি দেখানো হল:
ক্রমিক | বিষয় | জাবেদা | খতিয়ান |
১. | উৎস | লেনদেন হল জাবেদার উৎস | জাবেদা হল খতিয়ানের উৎস |
২. | হিসাব | হিসাবের প্রাথমিক বই হল জাবেদা | খতিয়ান হল হিসাবের পাকা বই |
৩. | ধাপ | জাবেদা হচ্ছে হিসাব চক্রের প্রথম ধাপ | হিসাব চক্রের দ্বিতীয় ধাপ হল খতিয়ান |
৪. | জের | জাবেদায় জের টানা হয় না | খতিয়ানের জের টানা আবশ্যক |
৫. | ব্যাখ্যা | জাবেদায় লেনদেনসমূহের ব্যাখ্যা দিতে হয় | খতিয়ানে লেনদেনের ব্যাখ্যার কোন দরকার হয় না |
৬. | ছক | জাবেদার ছকের মধ্যে পাঁচটি ঘর থাকে | খতিয়ানের ছকে ঞ ছক অনুযায়ী ঘর থাকে ৮টি এবং চলমান জেরে থাকে ৬ টি ঘর |
৭. | তৈরি করণ | জাবেদা লেনদেনের তারিখ অনুযায়ী তৈরি করা হয় | খতিয়ান হিসাবের প্রকৃতি অনুসারে তৈরি করা হয় |
৮. | পৃষ্ঠা নম্বর | জাবেদায় খতিয়ান পৃষ্ঠা নম্বর লেখা হয় | খতিয়ানে জাবেদা পৃষ্ঠা নম্বর লেখা হয় |
৯. | গুরুত্ব | জাবেদাভুক্তিকরণ ছাড়াও হিসাব কার্য শেষ করা যায় | খতিয়ান ছাড়া পূর্ণাঙ্গ হিসাব করা সম্ভব নয় |
১০. | কার্যফল | জাবেদা থেকে রেওয়ামিল এবং আর্থিক বিবরণী তৈরি করা যায় না | খতিয়ানের সাহায্যে রেওয়ামিল ও আর্থিক বিবরণী তৈরি করা যায় |
১১. | প্রয়োজনীয়তা | জাবেদার প্রয়োজনীয়তা অপেক্ষাকৃত কম | খতিয়ান অবশ্যই রাখতে হবে সুতরাং এটার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য |
১২. | তথ্য | জাবেদা হতে সহজে হিসাবের তথ্য পাওয়া যায় না | খতিয়ান হতে হিসাব খাতের পূর্ণ তথ্য সহজে পাওয়া যায় |
সারসংক্ষেপ:
খতিয়ান হিসাবের পাকা বই বিধায় এর কতকগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এদের মাধ্যমে খতিয়ানকে আলাদা আলাদা করে চেনা যায় বলেই খতিয়ানকে সকল হিসাব বই এর রাজা বলা হয়। এছাড়াও খতিয়ান হচ্ছে সকল লেনদেনের স্থায়ী ভাণ্ডার।
জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ই হিসাব চক্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তবে জাবেদা অপেক্ষা খতিয়ান অধিক গুরুত্বপূর্ণ। জাবেদা ও খতিয়ানের মধ্যে ছক অনুযায়ী যথেষ্ট অমিল রয়েছে। জাবেদায় শুধুমাত্র লেনদেনের ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয় করে তারিখের ক্রম অনুসারে লেখা হয়ে থাকে। অন্যদিকে খতিয়ানের প্রতিটি হিসাবের উদ্বৃত্ত নির্ভুলভাবে নির্ণয় করে হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
আমাদের কথা:
উপরোক্ত আলোচনা হতে আমরা জানতে পারলাম যে, জাবেদা ও খতিয়ানের মধ্যে পার্থক্য কি সে সম্পর্কে আরো অনেক বিস্তারিত বিষয়।
আমরা আশা করি এই পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে এবং এখান থেকে আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের উত্তরটি খুঁজে পেয়েছেন।
যদি এই আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করতে ভুলবেন না এবং এরকম আরো অনেক নতুন নতুন পোস্ট এর জন্য অবশ্যই আমাদের সাইট অনুসরণ করুন।