উদ্ভিদকোষ ও প্রাণিকোষের মধ্যে প্রথম যে পার্থক্যটা চোখে পড়ে তা হল- উদ্ভিদকোষ বাইরে জড় কোষপ্রাচীর(cell wall) ও তার নিচে অবস্থিত সজীব প্লাজমামেমব্রেন নামক দুটি পর্দা পরিবেষ্টিত বা ঘেরা থাকে। কিন্তু প্রাণিকোষে কোন কোষপ্রাচীর থাকেনা। কোষ শুধু একটি সজীব প্লাজমামেমব্রেন দিয়ে আবৃত থাকে।
উদ্ভিদকোষে প্লাষ্টিড থাকে, আর প্লাষ্টিডের ভিতর থাকে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। প্রাণিকোষে প্লাষ্টিড থাকেনা তাই ক্লোরোপ্লাস্ট ও থাকেনা।
৯ম শ্রেণি ৯ম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২৫ জীববিজ্ঞানের উত্তর
উদ্ভিদকোষের ক্লোরোপ্লাস্টে ক্লোরোফিল নামক সবুজ বর্ণকনিকা থাকায় এরা সবুজ এবং এবং এই কণিকার সাহায্যে উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় খাদ্য প্রস্তুত করে। কিন্তু প্রাণিকোষে প্লাষ্টিড নেই তাই ক্লোরোফিল নেই। সুতরাং এরা অসবুজ এবং সালোকসংশ্লেষন ঘটায় না।
উদ্ভিদকোষে সাধারনত কোষগহবর বড় থাকে, ফলে নিউক্লিয়াস আর কেন্দ্রে অবস্থান না করে সাইটোপ্লাজমের একপাশে অবস্থান করর। কিন্তু প্রাণিকোষে গহ্বর থাকেনা বা থাকলেও ছোট, তাই নিউক্লিয়াস সাইটোপ্লাজমের ঠিক কেন্দ্রে অবস্থান করে।
উদ্ভিদকোষে গলগি বস্তু অপেক্ষাকৃত ছোট, তাই দৃষ্টিগোচর হয়না। প্রাণিকোষে দৃশ্যমান বৃহৎ আকৃতির গলগি বস্তু থাকে।
অন্যান্য পার্থক্য:
- উদ্ভিদকোষে জড় কোষপ্রাচীর থাকায় কোষের আকার পরিবর্তন
হয়না। প্রাণিকোষে কোষপ্রাচীর থাকেনা বলে কোষের আকার পরিবর্তিত হয়। - কোষবিভাজনের সময় উদ্ভিদকোষে এষ্টার-রে সৃষ্টি হয়না। প্রানিকোষে সৃষ্টি হয়।
- সাইটোকাইনেসিসের সময় উদ্ভিদকোষের মাঝখানে কোষপ্লেট সৃষ্টি হয়।
- প্রাণিকোষের ক্ষেত্রে প্লাজমামেমব্রেন গর্তের ন্যায় ভিতরের দিকে ঢুকে যায় এবং একত্রে মিলিত হলে কোষটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
- উদ্ভিদকোষে খাদ্য starch বা শেতসার হিসেবে জমা হয়। আর প্রাণিকোষে খাদ্য গ্লাইকোজেন (glycogen) হিসেবে জমা হয়।
কাগজ, সুতা এবং রঙ ব্যবহার করে একটি আদর্শ উদ্ভিদ কোষের মডেল তৈরি করা একটি মজার এবং সৃজনশীল কাজ। নিচে ধাপে ধাপে নির্দেশনা দেওয়া হলো:
উপকরণ:
- কাগজ: বিভিন্ন রঙের (সাদা, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি)
- সুতা: বিভিন্ন রঙের (কোষের অঙ্গাণুগুলোর জন্য)
- রঙ: পানি রঙ, গ্লিটার পেন, অথবা ফেলে
- ছাঁচ (Base): একটি শক্ত কাগজ বা কার্ডবোর্ড
- গ্লু/আঠা: সুতা ও কাগজ লাগানোর জন্য
- কাঁচি: কাগজ কাটার জন্য
ধাপ ১: কোষের আকার নির্ধারণ
- কার্ডবোর্ডে একটি উদ্ভিদ কোষের আকার আঁকুন (চতুর্ভুজাকার, কোণগুলো কিছুটা গোলাকার)।
- এই আকারটি কেটে নিন। এটি হবে উদ্ভিদ কোষের বাইরের কাঠামো।
ধাপ ২: কোষের প্রাচীর তৈরি
- কাগজ বা সুতা দিয়ে বাইরের প্রাচীর তৈরি করুন। সবুজ বা বাদামি রঙের কাগজ ব্যবহার করতে পারেন।
- প্রাচীরটি দৃঢ় করতে গ্লু ব্যবহার করুন।
ধাপ ৩: কোষঝিল্লি (Cell Membrane)
- কোষপ্রাচীরের ভেতরের অংশে একটি পাতলা স্তর যোগ করুন।
- হালকা রঙের কাগজ বা সুতা ব্যবহার করে এটি তৈরি করুন।
ধাপ ৪: সাইটোপ্লাজম (Cytoplasm)
- কোষের অভ্যন্তরের স্থান পূরণ করতে হালকা হলুদ রঙ ব্যবহার করুন।
- এটি কাগজ বা রঙ দিয়ে নির্দেশ করতে পারেন।
ধাপ ৫: কোষের অঙ্গাণু তৈরি
- কেন্দ্রক (Nucleus): গোলাকার কাগজ কেটে সুতার সাহায্যে কেন্দ্রে লাগান। রঙ দিয়ে কেন্দ্রের ভেতরে নিউক্লিওলাস দেখাতে পারেন।
- ক্লোরোপ্লাস্ট (Chloroplast): ছোট সবুজ কাগজ কেটে কোষের মধ্যে ছড়িয়ে রাখুন।
- মাইটোকন্ড্রিয়া: বাদামি বা লাল কাগজ দিয়ে ছোট ডিম্বাকার আকৃতি তৈরি করুন।
- স্মুথ এবং রাফ ER: সুতা দিয়ে আঁকাবাঁকা নকশা তৈরি করুন এবং সাইটোপ্লাজমে যুক্ত করুন।
- গলজি বডি: কাগজ কেটে বা সুতা দিয়ে প্যাকেটের মতো গঠন তৈরি করুন।
- ভ্যাকুয়োল: একটি বড় অংশ নীল বা সাদা কাগজ দিয়ে দেখান।
ধাপ ৬: শেষ প্রক্রিয়া
- রঙ ব্যবহার করে প্রতিটি অংশ লেবেল করুন।
- একটি লেজেন্ড তৈরি করুন যেখানে প্রতিটি রঙ ও অঙ্গাণুর নাম উল্লেখ থাকবে।
- গ্লিটার বা উজ্জ্বল রঙ দিয়ে মডেলটিকে আকর্ষণীয় করে তুলুন।
পর্যালোচনা
এই মডেল উদ্ভিদ কোষের প্রধান বৈশিষ্ট্য যেমন কোষপ্রাচীর, ক্লোরোপ্লাস্ট, ভ্যাকুয়োল ইত্যাদি চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। এটি শিক্ষামূলক এবং দৃষ্টিনন্দন উভয়ই।