ভাতের পরে আমরা সবচেয়ে বেশি গমের তৈরূ খাবার খেয়ে থাকি। গম থেকে তৈরিকৃত আটার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করা হয়। যেগুলো আমরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে তৈরি করে খেয়ে থাকি। বিভিন্ন মুখরোচক খাবার তৈরি করার ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা গম ব্যবহার বেশি করি। প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে গম থেকে তৈরিকৃত অনেক ধরনের খাবার আমরা গ্রহণ করে থাকি।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা জানে না যে গম চাষ পদ্ধতি। আবার অনেকে আছে যারা জানে না যে গম এর দাম কত। যারা জানেন না তাদের জন্য মূলত আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি। কেননা আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো গমের চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে।
এছাড়াও আমরা আলোচনা করব গমের দাম সমূহ সম্পর্কে। আশাকরি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন। তাহলে হয়ত আপনি খুব সহজে গমের দাম এবং গম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে এবং বুঝতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক গম চাষ পদ্ধতি ও গমের দাম সমূহ সম্পর্কে।
গম
গম হলো আমাদের বাংলাদেশের একটি কৃষি পণ্য। এই পন্য গুলো দিয়ে আমরা বিভিন্ন ভাবে বা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবার উৎপন্ন করে থাকি। গম আমাদের অনেক ধরনের খাবার তৈরি করতে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ে আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে গম চাষ করা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলাতে বিভিন্ন ভাবে গম চাষ করা হয়।
গম চাষের কয়েকটি উন্নত জাত রয়েছে যেগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; সৌরভ, গৌরভ, প্রতিভা, কাঞ্চন, আকবর ইত্যাদি। এগুলো বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র গবেষণা করার মাধ্যমে বের করেছে। নিচে আমরা গম কিভাবে চাষ করতে হয় সেটা সম্পর্কে তুলে ধরেছি। যাতে করে আপনারা খুব সহজেই গম চাষ করতে পারেন বা গম কিভাবে চাষ করতে হয় সেটা জানতে পারেন।
| বিষয় | তথ্য |
|---|---|
| গম চাষের সময় | নভেম্বর – ডিসেম্বর |
| ফসল কাটার সময় | মার্চ – এপ্রিল |
| ঋতু | শীতকাল (রবি মৌসুম) |
| বৃষ্টিপাত প্রয়োজন | ৭৫ – ১০০ সেমি |
| অম্লমান (pH) | ৬.০ – ৭.৫ |
| বিঘা প্রতি ফলন (গম) | ৮ – ১০ মণ |
| বারি গম ৩৩ ফলন | হেক্টর প্রতি ৪ – ৪.৫ টন |
| গমের দাম | প্রতি কেজি ৩৫ – ৪২ টাকা |
গম চাষের সময়
বাংলাদেশে গম চাষ করা হয় সাধারণত শীতকালে।
- চাষের সময়: নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
- ফসল কাটার সময়: মার্চ মাসে।
👉 অর্থাৎ, শীতকাল (রবি মৌসুম) হলো গম চাষের উপযুক্ত ঋতু।
বাংলাদেশে কোন ঋতুতে গম চাষ করা হয়?
গম চাষ করা হয় শীতকালীন রবি মৌসুমে।
- চাষকাল: কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাস (নভেম্বর-ডিসেম্বর)
- কাটাইকাল: ফাল্গুন-চৈত্র মাস (মার্চ-এপ্রিল)
গম চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ু
- তাপমাত্রা: ১০°C – ২৫°C
- বৃষ্টিপাত: বছরে প্রায় ৭৫ – ১০০ সেন্টিমিটার
- অম্লমান (pH): ৬.০ – ৭.৫ এর মধ্যে হলে গমের ফলন ভালো হয়।
গম চাষের জন্য মাটি
- দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী।
- পানি জমে না এমন উঁচু বা মাঝারি উঁচু জমি উত্তম।
গম চাষ পদ্ধতি
আমাদের দেশের প্রতিটা জেলাতে কম বেশি গম উৎপাদন করা হয়ে থাকে। উৎপাদন বলতে এখানে কিন্তু চাষ করা কে বোঝানো হচ্ছে। আমাদের দেশটা মূলত হলো কৃষিনির্ভর একটি দেশ। তাই গমের মত কৃষি পন্য আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন করা হয়ে থাকে। গম চাষ করার জন্য প্রথমে মাঠ বা ক্ষেত তৈরি করা হয়। এতে বিভিন্ন সার প্রয়োগ করে এবং ক্ষেত নাঙ্গল দ্বারা মাটি আলগা করার মাধ্যমে গম তৈরি করার জন্য বা বুননের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয়।
এরপরে মাঠ বা ক্ষেত তৈরি হয়ে গেলে সেখানে গমের দানা বুননের আগের রাত্রে গম গুলো কে ভিজিয়ে রাখা হয়। গম রাত্রে ভিজিয়ে রাখার কারণ হলো এগুলো সারারাত পানিতে তাজা হয়। এরপরের সকালে প্রতি এক বিঘা জমিতে প্রায় ১৫ কেজি এর মত গম ছিটিয়ে বোনা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই এক বিঘা জমিতে কম বেশি গম বোনা যেতে পারে।
যদি কোন ক্ষেতে গম কম উৎপাদন হয় বা কম বীজ অঙ্কুরিত হয় তাহলে সেখানে আরও বেশি গমের বীজ বোনা উচিত। আবার যদি কোথাও অতিরিক্ত পরিমাণে গমের বীজ অঙ্কুরিত হয়ে যায় তাহলে সেখানে আরও কমিয়ে বীজ বপন করা উচিত। গমের দানা গুলো ছিটানোর পরে গম চারা অঙ্কুরিত হলে পানি এবং সার প্রয়োগ করার মাধ্যমে চারা গুলো কে যথাযথভাবে বড় করতে হয়।
এভাবে একসময় গম গাছ থেকে নতুন নতুন গমের ছড়া বের হয়। যেগুলো হলুদ রঙের হয়ে গেলে বা উপযুক্ত হয়ে গেলে উত্তোলন করা হয়। এভাবেই খুব সহজেই গম চাষ করা যায়। বাংলাদেশের যেকোন প্রান্তে গম চাষ করা যায়। তবে গম চাষের কিছু সিজন রয়েছে সেইসব সিজন গুলো ছাড়া অন্যান্য সময়ে গম সহজে চাষ করা যায় না।
বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতি
বারি গম ৩৩ হলো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাত।
বৈশিষ্ট্য:
- জাত মুক্তির সাল: ২০১৭
- গাছের উচ্চতা: ৯০-১০০ সেমি
- রোগ প্রতিরোধী জাত
- ফলন: বিঘা প্রতি ৮-১০ মণ (৩.৫ – ৪.০ টন/হেক্টর)
চাষ পদ্ধতি:
বীজ বপন সময়: নভেম্বরের মাঝামাঝি – ডিসেম্বরের মাঝামাঝি।
বীজের পরিমাণ: প্রতি বিঘায় ২০-২২ কেজি।
সার প্রয়োগ (বিঘা প্রতি):
- ইউরিয়া: ২৫-৩০ কেজি
- টিএসপি: ১৫-১৮ কেজি
- এমওপি: ১০-১২ কেজি
- জিপসাম: ৮-১০ কেজি
- দস্তা সার: ১-২ কেজি
সেচ: কমপক্ষে ৩ বার (বপনের ২০-২২ দিন পর, শীষ আসার সময়, দানা গঠনের সময়)।
ফলন: অনুকূল পরিবেশে হেক্টর প্রতি ৪-৪.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।
গমের দাম কত?
বর্তমান সময়ে বাজারে গমের দাম বিভিন্ন ভাবে উঠাবসা করে। যখন গমের সিজন থাকে তখন গমের দাম একটু কম থাকে। আবার যখন গমের সিজন অফ থাকে তখন গমের দাম অনেক বেশি থাকে। তাই সঠিক ভাবে বলা যায় না যে, গমের দাম কত? তবে একটি নির্দিষ্ট দাম যেটা বলা যায় সেটা হলো একমন গমের দাম বাংলাদেশের বাজারে এক হাজার টাকা থেকে ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশে ২০২৫ সালের বাজারদর অনুযায়ী—
- খোলা গমের দাম: প্রতি কেজি ৩৫ – ৪২ টাকা
- আটা: প্রতি কেজি ৪৫ – ৫০ টাকা
- ময়দা: প্রতি কেজি ৫২ – ৬০ টাকা
👉 দাম এলাকা ও বাজারভেদে ভিন্ন হয়।
বিঘা প্রতি গমের ফলন
- উন্নত জাত (বারি গম ৩৩, বারি গম ৩২, বারি গম ৩০): ৮–১০ মণ প্রতি বিঘা।
- গড় ফলন: ৭–৮ মণ প্রতি বিঘা।
উপসংহার
বাংলাদেশে গম ও ভুট্টা চাষের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। শীতকালীন সময়ে গম ও ভুট্টা চাষ করলে অল্প সময়ে ভালো ফলন পাওয়া যায়। উন্নত জাত যেমন বারি গম ৩৩ ব্যবহার করলে বিঘা প্রতি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। গমের জন্য ৭৫–১০০ সেমি বৃষ্টিপাত ও ৬.০–৭.৫ pH মান উপযুক্ত। অন্যদিকে ভুট্টা তুলনামূলকভাবে বেশি ফলনশীল এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক।
👉 সঠিক সময়ে চাষ, সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা করলে কৃষকের আয় বহুগুণ বৃদ্ধি সম্ভব।