একটু চিন্তা করে দেখুন তো, আপনি প্রতিদিন কত সময় স্মার্টফোনের পেছনে ব্যয় করেন? গবেষণায় বলা হয়, একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টার বেশি সময় খরচ করেন স্মার্টফোনে। তা ছাড়া আপনার স্মার্টফোনে ব্যক্তিগত গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কত জিনিসই তো রয়েছে। তাই এর নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ অন্যতম জরুরি বিষয়। ব্যাংকের হিসাব, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের তথ্য ইত্যাদি তো রয়েছেই। এসব কারণে হ্যাকারদের অন্যতম লক্ষ্য এই যন্ত্রটি। এটাকে হ্যাক করতে পারলেই আপনার সব তথ্য তাদের হাতে চলে যাবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য মিলে গেলে সব টাকা উধাও করে ফেলতে পারে তারা। তাই যন্ত্রটিকে নিরাপদে রাখুন। এর জন্য বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন ৫ পরামর্শ।
১. সবার আগে এনক্রিপশন
অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ফোনের সব তথ্য এনক্রিপ্ট করার সুযোগ দেয়। যন্ত্রটি প্রতিবার চালু করার সময় একটি পাসওয়ার্ড লাগে সব তথ্য ডিক্রিপ্ট করতে। কাজটি বিরক্তিকর ও সময়সাপেক্ষ মনে হতে পারে। কিন্তু হ্যাকাররা যখন আপনার ফোনে ঢুঁ মারবে, তখন বুঝবেন কতটা নিরাপত্তা দিয়েছে এনক্রিপশন সিস্টেম। আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনের সিকিউরিটি সেটিংসেই রয়েছে এ ব্যবস্থা। এ ছাড়া অ্যাপলক, ডকুমেন্ট লকার (অ্যান্ড্রয়েড) এবং সিগনাল (আইওএস) এর মতো অ্যাপের ব্যবহারেই নিরাপত্তা পেতে পারেন।
২. অচেনা ওয়াই-ফাই ব্যবহার নয়
প্রযুক্তির যন্ত্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা সবাইকে সাবধান করে দেন। অচেনা কোনো ওয়াই-ফাই ব্যবহার করবেন না। এমনকি পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবস্থাতেও যথেষ্ট ফাঁক থাকে। এগুলো গলে সহজেই প্রবেশ করে হ্যাকাররা। কেবল নিজের ওয়াই-ফাই ব্যবহার করুন।
৩. অচেনা উৎস থেকে অ্যাপ নয়
গুগল প্লে এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোরস থেকে যাবতীয় অ্যাপ এবং গেম ডাউনলোড করুন। অ্যাপ ডাউনলোড করার অসংখ্য উৎস রয়েছে। এসব জায়গা থেকে অ্যাপ নেবেন না। তাহলে সহজেই ম্যালওয়্যার প্রবেশ করবে আপনার ফোনে। আর সেখানেই হ্যাকারদের কারসাজি।
৪. একটি অ্যান্টি-ভাইরাস রাখুন
যদি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করেন এবং বিভিন্ন ফাইল ডাউনলোড করেন, তবে একটি ভালো মানের অ্যান্টি-ভাইরাস ডাউনলোড করে নিন। এটি আপনাকে অনেক বিপদ থেকে বাঁচাবে। বিশেষ করে যদি সামান্য অর্থ ব্যয় করে নর্টন বা কারপারস্কি ব্যবহার করেন, তবে সব ধরনের ভাইরাস থেকে আপনি নিরাপদে থাকবেন।
৫. আপ-টু-ডেট থাকুন
অ্যান্ড্রয়েড সংস্করণে বিভিন্ন সময় আপডেট আসতেই থাকে। স্মার্টফোনের সব সফটওয়্যারের যে আপ-টু-ডেট আসে তা ইনস্টল করে নিন। পুরনো সংস্করণ হ্যাকারদের আক্রমণের কাছে দুর্বল হয়ে পড়ে। কোনো নিরাপদ ওয়াই-ফাই ব্যবহার করে আপ-টু-ডেট থাকার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
সারসংক্ষেপ টেবিল
| পরামর্শ | কীভাবে সাহায্য করে |
|---|---|
| শক্তিশালী পাসওয়ার্ড | ফোন লক হ্যাক হওয়া ঠেকায় |
| অ্যাপ আপডেট | সিকিউরিটি দুর্বলতা দূর করে |
| অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার | ভাইরাস/ম্যালওয়ার প্রতিরোধ করে |
| পাবলিক Wi-Fi এড়িয়ে চলা | ডেটা চুরি প্রতিরোধ করে |
| ফিশিং লিংক থেকে দূরে থাকা | তথ্য ফাঁস রোধ করে |
| পারমিশন নিয়ন্ত্রণ | অপ্রয়োজনীয় অ্যাক্সেস বন্ধ করে |
হ্যাকারদের কবল থেকে স্মার্টফোনটিকে নিরাপদ রাখতে টিপস
বর্তমান ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ব্যাংক লেনদেন থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ছবি, ইমেইল, পাসওয়ার্ড—সব কিছুই এখন এই ছোট্ট ডিভাইসটিতে সংরক্ষিত থাকে। তাই হ্যাকারদের লক্ষ্যবস্তুতে স্মার্টফোন থাকা খুব স্বাভাবিক। সামান্য অসতর্কতার কারণেই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে, কিংবা ফোনটি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
চলুন জেনে নেই, কীভাবে আপনি আপনার স্মার্টফোনটিকে হ্যাকারদের কবল থেকে নিরাপদ রাখতে পারেন।
১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড বা PIN ব্যবহার করুন
সবচেয়ে আগে ফোনে একটি দৃঢ় লক সিস্টেম সেট করুন।
- শুধুমাত্র ৪ ডিজিটের PIN নয়, বরং অ্যালফানিউমেরিক পাসওয়ার্ড (অক্ষর + সংখ্যা + চিহ্ন) ব্যবহার করুন।
- Fingerprint বা Face Unlock সিকিউরিটি ব্যবহার করাও ভালো, তবে মূল পাসওয়ার্ড মনে রাখুন।
অচেনা অ্যাপ ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন
Play Store বা App Store ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে অ্যাপ ইনস্টল করা ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় এসব অ্যাপেই ম্যালওয়ার বা ট্রোজান লুকানো থাকে, যা আপনার ফোনের ডেটা হ্যাক করে নেয়।
টিপস:
- শুধু Verified Developer-এর অ্যাপ ব্যবহার করুন।
- কোনো ফ্রি প্রিমিয়াম অ্যাপ বা হ্যাকড অ্যাপ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
পাবলিক Wi-Fi (যেমন রেস্টুরেন্ট, বাসস্ট্যান্ড, বা পার্কে থাকা ওয়াইফাই) ব্যবহার করলে হ্যাকাররা সহজে আপনার ডেটা ইন্টারসেপ্ট করতে পারে।
যদি ব্যবহার করতেই হয়:
- কখনও ব্যাংকিং বা পাসওয়ার্ড সংক্রান্ত কাজ করবেন না।
- সম্ভব হলে VPN (Virtual Private Network) ব্যবহার করুন।
সফটওয়্যার ও অ্যাপ আপডেট রাখুন
অ্যান্ড্রয়েড বা iOS অপারেটিং সিস্টেমে নিয়মিত সিকিউরিটি আপডেট আসে।
টিপস:
- নিয়মিত System Update দিন।
- পুরোনো ভার্সন অ্যাপে অনেক সময় নিরাপত্তা দুর্বলতা থাকে, যা হ্যাকাররা কাজে লাগায়।
অ্যান্টিভাইরাস বা সিকিউরিটি অ্যাপ ব্যবহার করুন
একটি বিশ্বস্ত মোবাইল সিকিউরিটি অ্যাপ ইনস্টল করুন যা রিয়েল-টাইম ভাইরাস স্ক্যান করতে পারে।
যেমন: Avast, Kaspersky, Bitdefender, Norton ইত্যাদি।
ফাংশন:
- ম্যালওয়ার স্ক্যান
- ফিশিং ডিটেকশন
- অ্যাপ পারমিশন ট্র্যাকিং
অ্যাপ পারমিশন যাচাই করুন
অনেক অ্যাপ অপ্রয়োজনীয়ভাবে কনট্যাক্ট, লোকেশন, মাইক্রোফোন বা ক্যামেরা পারমিশন চায়। এগুলো হ্যাকারদের জন্য সহজ সুযোগ তৈরি করে।
টিপস:
- Settings → Apps → Permissions এ গিয়ে প্রত্যেক অ্যাপের অনুমতি চেক করুন।
- অপ্রয়োজনীয় পারমিশন বন্ধ রাখুন।
ফিশিং লিংক বা মেসেজ থেকে সতর্ক থাকুন
অচেনা লিংক, মেসেজ বা ইমেইল কখনও ক্লিক করবেন না। হ্যাকাররা সাধারণত Bank, Nagad, bKash বা সরকারি অফিসের নামে লিংক পাঠায়।
টিপস:
- লিংকে ক্লিক করার আগে URL যাচাই করুন।
- অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে নিজে গিয়ে লগইন করুন।
“Find My Device” বা “Find My iPhone” চালু রাখুন
ফোন হারিয়ে গেলে যেন লোকেশন ট্র্যাক করা যায়, তার জন্য Google বা Apple-এর ট্র্যাকিং ফিচার চালু রাখুন।
- Android: Find My Device
- iPhone: Find My iPhone
ব্লুটুথ ও NFC বন্ধ রাখুন
যখন ব্যবহার করছেন না, তখন Bluetooth বা NFC অফ রাখুন। অনেক সময় হ্যাকাররা নিকটবর্তী ডিভাইসে সংযোগ ঘটিয়ে ডেটা চুরি করে।
ডেটা ব্যাকআপ রাখুন
ফোন হ্যাক বা হারিয়ে গেলে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেন হারিয়ে না যায়, এজন্য নিয়মিত Google Drive / iCloud Backup রাখুন।
ফোন রুট বা জেইলব্রেক করবেন না
রুট বা জেইলব্রেক করলে আপনি কিছু অ্যাডভান্সড কন্ট্রোল পাবেন ঠিকই, কিন্তু এতে ফোনের সিকিউরিটি পুরোপুরি দুর্বল হয়ে যায় এবং হ্যাকারদের জন্য সহজ টার্গেট তৈরি হয়।
দুই স্তরের নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication) ব্যবহার করুন
Facebook, Gmail, WhatsApp, Instagram ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে 2-Step Verification চালু রাখুন। এতে হ্যাকার আপনার পাসওয়ার্ড পেলেও লগইন করতে পারবে না।
উপসংহার
আপনার স্মার্টফোনে যত বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবে, তত বেশি এটি হ্যাকারদের নজরে থাকবে। তাই নিজের সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি। সামান্য কিছু সতর্কতা আপনাকে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারে।
মনে রাখবেন, নিরাপত্তা শুধু একটি অ্যাপ নয়—এটি একটি অভ্যাস।