HSC Islam Assignment

ইসলামি সংস্কৃতি চর্চায় মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রণয়ন

এইচএসসি ২০২৫ সেশনের সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, আশা করছি সকলেই সুস্থ আছো। ২২ আগস্ট ২০২৫ ইং তারিখে ২০২৫ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য ষষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। এরই সূত্র ধরে তোমাদের মধ্যে অনেকেই এইচএসসি ২০২৫ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের মানসম্মত ও নির্ভুল উত্তর খুঁজছো। তোমাদের এই অন্বেষণের কথা মাথায় রেখেই আজকের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছি। আজকের আলোচনায় থাকছে এইচএসসি ২০২৫ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর। আলোচনার বিষয়বস্তু- ইসলামি সংস্কৃতি চর্চায় মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রণয়ন।

আমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৫ এর ইসলামের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র এসাইনমেন্টে দেওয়া নির্দেশনা সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করে প্রশ্নে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব, যাতে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে সুবিধা হয়।

এইচএসসি ২০২৫ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

https://i.imgur.com/FmQVSU5.jpg

এইচএসসি ২০২৫ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট : ইসলামি সংস্কৃতি চর্চায় মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রণয়ন।

নির্দেশনা (সংকেত/ ধাপ/ পরিধি) :

  • মক্তবের ধারণা
  • মক্তবের কার্যাবলী
  • মক্তব এর প্রয়োজনীয়তা
  • বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মক্তব শিক্ষার সুবিধা গুলো বর্ণনা
  • মক্তব শিক্ষার অসুবিধা উত্তোরণের উপায়

এইচএসসি ২০২৫ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইসলাম শিক্ষা ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর

ইসলামি সংস্কৃতি চর্চায় মক্তব শিক্ষার গুরুত্ব পর্যালোচনা

ইসলামি সংস্কৃতি শব্দটি নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। মুসলিমরা অনেক দেশ এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে বসবাস করে এবং ইসলামের ধর্মের প্রতি তাদের আনুগত্য সত্ত্বেও, মুসলমানদের মাঝে সাংস্কৃতিক একতার বিষয়গুলো বিচ্ছিন্ন করে দেখা কঠিন হতে পারে। তবুও নৃতত্ত্ববিদ ও ঐতিহাসিকগণ ইসলাম সম্পর্কে পাঠ করেন, কোন এলাকার সংস্কৃতির ওপর একটি দৃষ্টিভঙ্গি- প্রভাব বিস্তারকারী হিসেবে, যেখানে এই ধর্মই প্রধান।

ইসলামের বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, মার্শাল হগসন, তার তিন-খণ্ডের দ্য ভেঞ্চার অব ইসলাম-বইয়ে “ইসলামি” ও “মুসলিম” শব্দের একাডেমিক ব্যবহারে ধর্মীয় বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে উপরে বর্ণিত সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি শুধুমাত্র কেবল ধর্মীয় ঘটনাবলির জন্যই এই পদ ব্যবহার করে এর সমাধান প্রস্তাব করেন, এবং তিনি ঐতিহাসিকভাবে সমস্ত মুসলিম জনগণের সাংস্কৃতিক দিকগুলি চিহ্নিত করে “Islamicate” শব্দটি আবিষ্কার করেন। তবে, তার প্রভেদ বহুলভাবে গৃহীত হয়নি, এবং এই নিবন্ধের সাধারণ ব্যবহারে তাই বিভ্রান্তি রয়েই গেছে।

মক্তবের ধারণা

মক্তব (আরবি: مكتب‎‎) বা মাক্তাবিহ (আরবি: مكتبة‎‎) বা মাক্তাবখানা (ফার্সি: مكتب، مکتبخانه‎‎) , আল কোত্তাব (আরবি: الكتَّاب‎‎ Kottāb ) বলেও পরিচিত। এর অর্থ_লেখার স্থান, শিক্ষা কেন্দ্র, বিদ্যালয় ইত্যাদি। আবার ‘মাক্তাবুন’ দ্বারা লাইব্রেরি বা উচ্চশিক্ষা কেন্দ্রকেও বোঝায়। ব্যবহারিক অর্থে ছোট ছোট মুসলিম বালক-বালিকার প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষায়তনকে বলা হয় মক্তব। তবে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে মক্তব বলতে সাধারণ মানুষ কোরআন শিক্ষার স্থানকে বোঝেন। (আরবি: الكتَّاب‎‎ Kottāb ) হল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরবি প্রতিশব্দ। শিশুদের পড়া, লেখা, ব্যাকরণ ও ইসলামি বিষয়াদি শিক্ষাদান এর মূল কাজ হলেও অন্যান্য ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক বিষয়ও এর অন্তর্ভুক্ত।

মক্তব ইসলামী শিক্ষা অর্জনের প্রাচীন এবং প্রথম শিক্ষা কেন্দ্র। মহানবী (সা.) ছিলেন এই শিক্ষা কেন্দ্রের প্রথম ও প্রধান শিক্ষক। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে মক্তব একটি প্রাচীন শিক্ষাব্যবস্থা। এতে শিক্ষকরা তাদের সামনে মেঝেতে বসা ছাত্রদের শিক্ষাদান করেন। ইসলাম ও ধ্রুপদি আরবি ভাষা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে কুরআন মুখস্থ করানোর প্রতি মূল মনোযোগ দেয়া হত। আধুনিক স্কুলের সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে সাথে মক্তবের সংখ্যা কমে গিয়েছে।

কোত্তাব অর্থ লেখক।Kuttāb, বহুবচনে কাতিব। (كتاتيب) এর উৎস বহু প্রাচীন। আধুনিক আরবিতে মক্তব (আরবি: مكتب‎‎) ইংরেজি অফিস বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে মাকতাবিহ (আরবি: مكتبة‎‎) দ্বারা গ্রন্থাগার বা পাঠের স্থান বোঝানো হয়। আল কোত্তাব (আরবি: الكتَّاب‎‎) দ্বারা বইয়ের বই অর্থও বোঝানো হয়।

মক্তবের কার্যাবলী

মক্তব এর কার্যাবালিসমূহ :

  • কায়দা।
  • আমপারা।
  • চল্লিশটির মত হাদিস পাঠদান।
  • নজরানা।
  • মাসনুন দোয়া।
  • মাসআলা মাসায়েল।
  • তাজবীদ।
  • আক্বীদা বিষয়ক প্রথমিক পাঠদান।

মক্তব এর প্রয়োজনীয়তা

ইবনে সিনা লিখেছেন যে শিশুদেরকে ৬ বছর বয়সে মক্তবে পাঠানো উচিত। তার মতে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা দিতে হবে এবং এ সময়ের মধ্যে তাদের কুরআন, ইসলামী অধিবিদ্যা, ভাষা, সাহিত্য, ইসলামী নীতিবিদ্যা ও অন্যান্য দক্ষতা, যেমন বিভিন্ন ব্যবহারিক জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হবে।

১. আদর্শ শিক্ষালয় : একটি শিশুর শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক গুণাবলির উন্নয়নই শিক্ষার উদ্দেশ্য। মক্তবে শিশুর মনে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপিত হয়। প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবেএ ধারণাটি দেওয়া হয়। মক্তবে পড়ুয়া শিশু বড় হয়ে আল্লাহকে অস্বীকার করে না এবং অন্যায়, অবাধ্য ও সমাজবিরোধী কাজে লিপ্ত হয় না। যে শিক্ষা আখিরাতের চেতনা সৃষ্টি করে না, নৈতিকতার প্রশ্ন নেই, তা অপ্রয়োজনীয় এবং অর্থহীন।

২. প্রাথমিক শিক্ষায়তন : শিশুদের মন শৈশবে কাদামাটির মতো কোমল থাকে। এ সময় তাদের যেমন খুশি তেমন করে গড়ে তোলা যায়। আর শৈশবের শিক্ষাই স্থায়ী হয়ে থাকে। একজন মনীষী বলেছেন : ‘শৈশবের শিক্ষা পাথরে খোদাই করা চিত্রাঙ্কনের মতো স্থায়ী।’ শিশুরা সহজে এবং আনন্দের সঙ্গে মক্তবেই তাদের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে।

৩. কোরআন-হাদিস শিক্ষা কেন্দ্র : মক্তবে শিশুরা কোরআন-হাদিসের প্রাথমিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পায়। তাদের এর উপকারিতা এবং কল্যাণ সম্পর্কেও জ্ঞান দেওয়া হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে নিজে কোরআন শিখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়।’

৪. ইমান শিক্ষা : ইমান ছাড়া সব ভালো কাজই অর্থহীন। আল্লাহ, ফেরেশতা, নবী-রাসুল, আসমানি কিতাব, পরকাল, হাশর-নাশর ইত্যাদি সম্পর্কে শিশুদের মনে বিশ্বাসের ভিত মজবুত করা হয়।

৫. মাসয়ালা শিক্ষা : মুসলিমজীবনে কিভাবে চলতে হবে, ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, হালাল, হারাম, মাকরূহ, মুবাহ ইত্যাদি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা দিয়ে থাকে মক্তব।

৬. পরিচ্ছন্নতার প্রাথমিক জ্ঞান : মক্তবে শিশু অজু-গোসল, পাক-পবিত্রতার নিয়ম-কানুন শেখার পাশাপাশি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করে। এতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস গড়ে ওঠে। শরীর এবং পোশাক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতেও যত্নবান হয়।

৭. আদব-কায়দা শিক্ষা : সমাজে বাবা-মা, ভাইবোন, ছোট বড়, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীকার সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, সহপাঠীদের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করতে হয়, মক্তবে এসব আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া হয়।

৮. মমত্ববোধ : মক্তবে বিভিন্ন পরিবারের ছেলেমেয়েরা একত্রে মিলেমিশে থাকে। তাই তাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি মমত্ব ও সহমর্মিতা গড়ে ওঠে। তারা সমাজের সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলতে অভ্যস্ত হয়।

৯. নিরক্ষরতা দূরীকরণ : মক্তবভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থায় একদিকে যেমন কোনো শিশুই নিরক্ষর ও শিক্ষাবঞ্চিত থাকে না, তেমনি অবসর সময়ে স্বল্প ব্যয়ে সফলভাবে বয়স্ক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজ থেকে নিরক্ষরতার অভিশাপ দূর করা যায়।

১০. দেশপ্রেমিক নাগরিক তৈরি : মক্তবে শিশুদের দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। এখানে নবী-রাসুল, সাহাবি এবং মনীষীদের দেশপ্রেমের বিষয়টিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে পেশ করে তাদের দেশের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলার চেষ্টা করা হয়।

বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে মক্তব শিক্ষার সুবিধা

কোরআনে কারিম আল্লাহতায়ালার কিতাব। এটা মানবতার জন্য দিকনির্দেশনা ও আলোকবর্তিকা। কিয়ামত পর্যন্ত মানবজাতি যত সমস্যার সম্মুখীন হবে, তাদের যা যা প্রয়োজন হবে সব বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে কোরআনে কারিমে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন,

‘এবং আমি আপনার প্রতি এমন কিতাব নাজিল করেছি, যা প্রত্যেক বস্তুর সুস্পষ্ট বর্ণনা। হেদায়েত, রহমত এবং মুসলমানদের জন্য সুসংবাদ।’ সুরা নাহল : ৮৯

কোরআনে কারিমের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো, যে ব্যক্তি এটি বোঝার ও অনুধাবন করার চেষ্টা করে, সে তাকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে, হৃদয়ে নাড়া দেয়। অন্তরকে মার্জিত ও পরিশীলিত করে। আত্মাকে করে সংশোধিত। মানুষকে নেক আমলের প্রতি উৎসাহী করে তোলে। তার প্রভাব শুধু মানবকুল পর্যন্তই সীমিত নয়; বরং একে যদি খুব মজবুত ও শক্ত পাহাড়ে অবতীর্ণ করানো হতো তাহলে অবশ্যই সেটি কেঁপে উঠত। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন,

‘যদি আমি এ কোরআন পাহাড়ের ওপর অবতীর্ণ করতাম, তবে আপনি দেখতে পেতেন যে, পাহাড় বিনীত হয়ে আল্লাহতায়ালার ভয়ে বিদীর্ণ হয়ে গেছে, আমি এসব দৃষ্টান্ত মানুষের জন্য বর্ণনা করি, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।’ সুরা হাশর : ২১

মক্তবে কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষা দেয়া হয় আদব-ক্বায়দা! মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন মুরুব্বীদের দেখলে সালাম দেওয়া, সুন্দর ভাষায় কথা বলা, সম্মান দেয়া ইত্যাদি। যখন একজন কুরআন শরিফ পড়তে পারে তখন মোটামুটি সে মক্তব পাশ করে। শেখা হয় চলমান জীবনের প্রয়োজনীয় দ্বীনি শিক্ষা। আদব কায়দা তথা নীতি নৈতিকতা, কিভাবে বড়দের দেখলে সালাম দিতে হয়, সম্মান দিতে হয়। মক্তবে শেখানো হয় সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা। অন্যজনের জিনিস বিনা অনুমতিতে না ধরা, শুনানো হয় বিভিন্ন শিক্ষা মূলক গল্প।

মক্তবে কোরআন ও হাদিসের পাঠদানের পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগি, অজু, গোসল, নামাজ, রোজাসহ বিভিন্ন বিষয়েও শিক্ষা দেওয়া হয়। মক্তবের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবহারিক জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মক্তবে আদব-কায়দা, শিষ্টাচার, সভ্যতা, ভদ্রতা, সৌজন্যতা, নম্রতা বড়দের শ্রদ্ধা ও ছোটদের স্নেহ করার শিক্ষা দেওয়া হয়। তাছাড়া হালাল-হারাম, পাক-পবিত্রতাসহ প্রয়োজনীয় বিষয়াদি সম্পর্কে জীবনঘনিষ্ঠ শিক্ষা খুব সহজে দেওয়া হয়।

মক্তব শিক্ষার অসুবিধা উত্তোরণের উপায়

একটা সময় ছিল, শিশুশিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তিই ছিল মক্তব শিক্ষা। শিশুরা শৈশবে পিতা-মাতার কাছ থেকে শিক্ষার হাতেখড়ি নিয়ে মক্তবে চলে যেত। এর মাধ্যমে তাদের প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হতো। মক্তব শিক্ষা মসজিদকেন্দ্রিক হওয়ায় নিজ ঘর ছাড়া আল্লাহর ঘরে নির্ভয়ে ও নিঃসংকোচে প্রবেশ করার সুযোগ রয়েছে। কারণ মসজিদে প্রবেশের জন্য কোনো সময়ই কারও অনুমতির প্রয়োজন হয় না।

মক্তবে শিশুরা নৈতিকতা শিক্ষার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা লাভ করে। যেগুলো পরবর্তী জীবনে পালন করা বেশ সহজ হয়। বলতে দ্বিধা নেই, শিক্ষাজীবনের শুরুতে মানসিক ও নৈতিক গুণাবলির জীবনে যতটা প্রভাব সৃষ্টি করে, তা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর হয়ে ওঠে না। এ কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় আদর্শ ও নৈতিকতার বিষয়টি বারবার আলোচনা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতা চর্চা বাড়ানোর জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হচ্ছে। অথচ এটা গঠনের সময় ছিল, শিশুকালে। তখনকার এই ঘাটতির মারাত্মক পরিণতি এখন আমরা প্রতিনিয়ত অবলোকন করছি। শিক্ষাজীবনের শুরুতে মন ও মস্তিষ্কে স্থান করে নেওয়া নৈতিক শিক্ষাগুলো মানুষ সাময়িক পালন না করলেও তা সব সময় মানুষের বিবেককে তাড়া করে। ফলে কর্মজীবনে কেউ সাময়িক বিচ্যুতির পথে হাঁটলেও একসময় না একসময় সে সঠিক পথ খুঁজে পায়।

বিশুদ্ধভাবে কোরআন শিক্ষা, ইবাদত-বন্দেগির নিয়ম, প্রয়োজনীয় দোয়া-দরুদ শিক্ষার ক্ষেত্রে মক্তবের ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়। কোরআন শিক্ষার বিষয়ে নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন,

‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে নিজে কোরআন শেখে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়।’

নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন,

‘কোরআন শরিফ তেলাওয়াত সর্বোত্তম ইবাদত।’

মক্তব জনশিক্ষার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলেও বর্তমানে মসজিদকেন্দ্রিক এই শিক্ষা বিলুপ্তির পথে। এর অন্যতম কারণ হলো, দিন দিন ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া। তাছাড়া শহরকেন্দ্রিক মানুষ সকালে শিশু-কিশোরদের নানা কারণে আগের মতো মক্তবে পাঠায় না। ফলে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা থেকে পিছিয়ে পড়ছে সমাজ।

তাই আমাদের কর্তব্য হলো, ব্যক্তি থেকে শুরু করে সামাজিক পর্যায়ে মক্তব শিক্ষার বিষয়ে জোর দেওয়া, মক্তব শিক্ষাকে গণমুখী ও আকর্ষণীয় করে উপস্থাপন করা। এ শিক্ষার ক্ষেত্রে যতটুকু দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো কাটিয়ে উঠতে বাস্তবতার নিরিখে পদক্ষেপ নেওয়া। প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা দেওয়া, মক্তবকে সুসংগঠিত করা এবং এর কার্যক্রমকে বেগবান করা।

About Author

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.