ফেসবুক হ্যাক হওয়া এড়ানোর নিয়ম ২০২৬

আপনি কি জানেন আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়ার প্লাটফর্ম কোনটি। হ্যাঁ হয়তো আপনি কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছেন যে আমাদের দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হল ফেসবুক। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফেসবুক একাউন্ট ক্রিয়েট হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ থেকে। আর আমরা অনেকেই ফেসবুক ব্যবহার করে থাকি।

ফেসবুক ব্যবহার করার মাধ্যমে আমরা আমাদের বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের সাথে খুব সহজে কানেক্টেড থাকতে পারি। তাদের সম্পর্কে বিভিন্ন অনুভূতিগুলো জানতে পারি ও তাদের সাথে শেয়ার করতে পারি। এছাড়াও আমাদের ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়গুলো ফেসবুকে সংরক্ষণ করা থাকে।

কিন্তু কখনো যদি প্রিয় শখের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়ে যায় তাহলে অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে হতে পারে আপনার ফেসবুক আইডিটি হ্যাক হওয়ার পর ওই আইডি থেকে আপনার পরিচিত বিভিন্ন ফ্রেন্ড সার্কেল ও আত্মীয়-স্বজনের সাথে খারাপ বিহেব করা। তাদের সাথে বিভিন্ন বিভিন্ন লেনদেন সংক্রান্ত কাজও সম্পন্ন হতে পারে।

আর যেগুলো আপনার অজান্তেই হচ্ছে কিন্তু আপনি জানতে পারছেন না। এছাড়াও আপনার জন্য ব্যক্তিগত তথ্য ও ফাইল ফটো ভিডিও আকারে হাতে চলে যেতে পারে। আর তাই হ্যাক হওয়ার হাত থেকে এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক কে আপনার নিরাপদ রাখতে হবে। যদি আপনি নিরাপদ না রাখেন কোন একটি ভুলের কারণে হয়তো এই ফেসবুক আইডিটি হ্যাক হয়ে যেতে পারে।

আরো দেখুনঃ ফোন ভিজে গেলে করনীয়

ফিশিং অ্যাটাক

আমরা এর আগে ফিশিং কি, এর ক্ষতিকর দিকগুলো সমূহ এবং ফিশিং থেকে নিরাপদ থাকার উপায় গুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনি চাইলে আমাদের সেই আর্টিকেলটি দেখে আসতে পারেন। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বেশি অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে থাকে ফিশিং এর মাধ্যমে। ফিসিং হলো এমন একটি জনপ্রিয় হ্যাকিং মেথড।

এর সাহায্যে আপনাকে লোভ দেওয়ার মাধ্যমে পাসওয়ার্ড নিয়ে হ্যাকারেরা আপনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইনফর্মেশন হাতে নিয়ে ফেসবুক হ্যাক করে থাকে। এছাড়া হ্যাকারেরা ফেসবুকের মত হুবহু একটি অ্যাপ, সফটওয়্যার অথবা ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে আপনাকে লগইন করতে বলবে। যখন আপনি লগইন করবেন।

তখন সাথে সাথে আপনার লগইন এর ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড হ্যাকার এর কাছে চলে যাবে। আর হ্যাকার আপনার এসব তথ্য গুলো নিয়ে খুব সহজেই আপনার ফেসবুক হ্যাক করে ফেলবে। আর আপনি যদি এই ফিশিং গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত থাকতে পারেন। তাহলে হয়তো আপনার ফেসবুক হ্যাক হওয়া এড়াতে পারবেন।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার

আপনি কি জানেন বর্তমান সময়ে অনেকেই পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে তাদের বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ার পাস ও আইডি লগইন সংরক্ষণ করে রাখে। যদি আপনি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক হ্যাক হওয়া এড়াতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকে বারে বারে পাসওয়ার্ড দিয়ে ফেসবুকে প্রবেশ না করে।

পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে খুব সহজেই ফেসবুকে লগইন করতে পারেন। এতে করে আপনাকে বারেবারে পাসওয়ার্ড দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ঠিক তেমনি আপনার অনেক সময় সেভ হবে। আর যে কারণে কখনও ফিশিং ফেসবুক সাইটে আপনি যদি প্রবেশ করেন। সেখানে পাসওয়ার্ড চাইলে যেন বুঝতে পারেন যেটা একটি ফিশিং ওয়েবসাইট।

আর এতে করে আপনি আপনার ফেসবুক হ্যাক হওয়া এতে পারবেন। আপনি উপরের বিভিন্ন সাবধানতাগুলো অবলম্বন করার মাধ্যমে ফেসবুক হ্যাক হওয়া এড়াতে অনেকাংশে নিরাপদ রাখতে পারবে। যদি আপনি এইসব ছোট ছোট সমস্যাগুলো সাথে সাথেই ঠিক না করেন। তাহলে ফেসবুক হ্যাক হওয়ার এড়াতে পারবেন না।

আপনি যদি ধরনের স্পাম লিংকে ক্লিক করেন, পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার না করেন, সাকিং কী- লগিং এর মত জটিল বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে না পারতেন। অথবা ভালোভাবে অবগত হতে না পারেন তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া এড়াতে পারবেন না।

ফেসবুক হ্যাক হওয়া এড়ানোর নিয়ম ২০২৬

অনলাইনে হ্যাকিং পদ্ধতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই Facebook 2026 অনেক নতুন সিকিউরিটি ফিচার যুক্ত করেছে। আপনার অ্যাকাউন্ট সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখতে নিচের নিয়মগুলো ফলো করুন।

🔐 ১. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন (২০২৬ স্ট্যান্ডার্ড)

ফেসবুকে পাসওয়ার্ড হওয়া উচিত—

  • অন্তত ১২–১৬ অক্ষরের
  • বড় অক্ষর + ছোট অক্ষর + সংখ্যা + চিহ্ন
  • যেমন: Jm&92@Fb_2026!

⚠️ ভুল করবেন না

  • নিজের নাম, জন্মতারিখ
  • 123456, 112233
  • ফোন নম্বর

এসব ব্যবহার করবেন না।

২. Two-Factor Authentication (2FA) চালু রাখুন (অবশ্যই)

২০২৬ সালে সবচেয়ে নিরাপদ হলো Authentication App ব্যবহার করা।

ব্যবহার করুন—

  • Google Authenticator
  • Microsoft Authenticator
  • Authy

কারণ SMS কোড এখন সহজেই হ্যাক করা যায়।

৩. Login Alerts চালু রাখুন

এতে আপনার অ্যাকাউন্টে কেউ লগইন করলে সাথে সাথে নোটিফিকেশন পাবেন।

  • Settings → Security & Login → Get Alerts About Unrecognized Login

৪. Unknown Device থেকে কখনো লগইন না করা

কখনো সাইবার ক্যাফে, দোকান বা বন্ধুর ফোন/কম্পিউটার থেকে লগইন করবেন না।
কারণ:

  • Keylogger
  • Saved Password
  • Screen Recording

এর মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট সহজে হ্যাক হয়ে যায়।

৫. পুরনো লগইন ডিভাইস রিমুভ করুন

প্রতি মাসে একবার নিচে যান:
Settings → Security & Login → Where you’re logged in
অপরিচিত ডিভাইস → Log Out

৬. সন্দেহজনক লিংক একদম ক্লিক করবেন না

ফিশিং লিংক দিয়ে সবচেয়ে বেশি হ্যাক হয়।
এগুলো আসে—

  • ইনবক্সে
  • কমেন্টে
  • ফ্রি লাইক/ফলোয়ার ওয়েবসাইটে
  • বিজ্ঞাপনে

⚠️ যেখানে লগইন চাইবে সেখানে কখনো ID/Password দেবেন না।

৭. Trusted Contacts সেট করুন

যাতে অ্যাকাউন্ট লক বা হ্যাক হলে বন্ধুর মাধ্যমে দ্রুত রিকভারি করা যায়।
Settings → Security → Choosing 3–5 Trusted Friends

৮. Privacy Settings শক্ত করুন

২০২৬ এর নতুন অপশনগুলো অন করে রাখুন:

  • Profile Lock
  • Friends List Hide
  • Who can look you up? → Friends
  • Who can tag you? → Only Me (or Friends)
  • Who can see your phone/email? → Only Me

এগুলো হ্যাকারদের তথ্য সংগ্রহ করতে বাঁধা দেয়।

৯. Face Recognition Off রাখুন (নতুন হ্যাক প্রতিরোধ)

Settings → Face Recognition → Off
হ্যাকাররা Deepfake ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট রিকভারি করতে পারে।

১০. ফেসবুক অ্যাপ আপডেট রাখুন

নতুন আপডেটে সিকিউরিটি Bug ফিক্স করা থাকে।

১১. সিম কার্ড ও ইমেইল অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখুন

কারণ—
Phone Number = Facebook Recovery
Email = Facebook Recovery

তাই:

  • ইমেইলে 2FA
  • সিমে PIN
  • ইমেইল পাসওয়ার্ড আলাদা

অজানা অ্যাপ বা গেমে “Facebook Login” ব্যবহার করবেন না

Free Coins / Free Likes / Free Followers
এসব অ্যাপ হ্যাকিংয়ের মূল জায়গা।

ব্রাউজারে Saved Password Off রাখুন

Chrome / Firefox–এ
Never Save Password সিলেক্ট করুন।

Security Checkup ব্যবহার করুন (২০২৬ Update)

Facebook-এর নতুন Automatic Security Tool:
👉 https://www.facebook.com/security/checkup

এটি সমস্যা খুঁজে নিজে থেকেই ঠিক করে দেয়।

Messenger থেকে পাওয়া “You violated rules” ধরনের লিংক খুলবেন না

এগুলো ২০২৬ সালের সবচেয়ে বিপজ্জনক ফিশিং লিংক—
যেখানে বলা হয়:

  • আপনার পেজ বন্ধ করে দেওয়া হবে
  • আপনার অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন দরকার

এগুলো হ্যাকিং প্রচেষ্টা।

পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করবেন না

হ্যাকাররা একই ওয়াইফাইতে থেকে ডাটা ক্যাপচার করতে পারে (MITM Attack)।
প্রয়োজনে → VPN ব্যবহার করুন।

অটো-জেনারেটেড কোড সংরক্ষণ করুন

Facebook Recovery Codes (১০টি কোড) আগেই সংরক্ষণ করে রাখুন।
হ্যাক হলে এগুলো দিয়ে সহজে ফিরে পাবেন।

আশা করি আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন যে কি করলে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার হাত থেকে নিরাপদ রাখতে পারবেন। এখন হয়তো আপনি আপনার একাউন্ট নিরাপদ রাখার জন্য যেসব বিষয় গুলো করা উচিত। অথবা যা যা করা উচিত নয় সেই সব বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত আছেন। এখন হয়তো আপনি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে খুবই নিরাপদ রাখতে পারবেন। এরপর যদি আপনি ফেসবুকে নিরাপদ রাখার জন্য কি কি করতে হবে এই সম্পর্কে না জানতে পারেন অথবা বুঝতে পারেন।

About Author

Srabon Mahamud
জানতে ও জানাতে চাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *