human life History

“মানব জীবনে ইতিহাস” শীর্ষক প্রবন্ধ লিখো (৩০০ শব্দের মধ্যে)

স্তরঃ এস.এস.সি পরীক্ষা ২০২৫, বিভাগঃ মানবিক, বিষয়ঃ বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা, বিষয় কোডঃ ১৫৩, মোট নম্বরঃ ১৬, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর-০১

প্রথম অধ্যায়: ইতিহাস পরিচিতি

অ্যাসাইনমেন্টঃ “মানব জীবনে ইতিহাস” শীর্ষক প্রবন্ধ (৩০০ শব্দের মধ্যে)

শিখনফল/ বিষয়বস্তুঃ

  • ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারণা, স্বরূপ ও পরিসর ব্যাখ্যা করতে পারবে;
  • ইতিহাসের উপাদান ও প্রকারভেদ বর্ণনা করতে পারবে;
  • ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহী হবে;

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি): ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ব্যাখ্যা ইতিহাস রচনার উপকরণ (লিখিত ও অলিখিত), প্রকারভেদ ব্যাখ্যা ইতিহাসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা; মানবজীবনে ইতিহাস চর্চার প্রয়ােজনীয়তা বিশ্লেষণ;

এসএসসি পরীক্ষা ২০২৫ বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা ১ম এ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারণাঃ

ইতিহাস শব্দটির উৎপত্তি ‘ইতিহ’ শব্দ থেকে। যার অর্থ ঐতিহ্য।ঐতিহ্য হচ্ছে অতীতের অভ্যাস, শিক্ষা, ভাষা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি যা ভবিষ্যতে জন্য সংরক্ষিত থাকে।

এই ঐতিহ্যকে এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয় ইতিহাস।
ই.এইচ. কার -এর ভাষায় বলা যায়ঃ- ইতিহাস হলো বর্তমান ও অতীতের মধ্যে এক অন্তহীন সংলাপ।

বর্তমানের সকল বিষয়ে অতীতের পরিবর্তন ও অতীত ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আর অতীতের ক্রমবিবর্তন ও ঐতিহ্যের বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ হলই ইতিহাস। তবে এখন বর্তমান সময়েরও ইতিহাস লেখা হয়,যাকে বলে সাম্প্রতিক ইতিহাস। সুতরাং ইতিহাসের পরিসর সুদূর অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিস্তৃত। গ্রিক শব্দ ‘হিস্টোরিয়া’ থেকে ইংরেজি হিস্টরি শব্দটির উৎপত্তি, যার বাংলা প্রতিশব্দ ইতিহাস। হিস্টোরিয়া শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাস (খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতক) তিনি ‘ইতিহাসের জনক’ হিসেবে খ্যাত। তিনিই সর্বপ্রথম তার গবেষণা কর্মের নামকরণে এ শব্দটি ব্যবহার করেন, যার আভিধানিক অর্থ হল সত্যানুসন্ধান বা গবেষণা। তিনি বিশ্বাস করতেন ইতিহাস হল- যার সত্যিকার অর্থে ছিল বা সংঘটিত হয়েছিল তা অনুসন্ধান করা ও লেখা।

ইতিহাসের উপাদানঃ

যেসব তথ্য প্রমাণের উপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক সত্যকেও প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব,তাকেই ইতিহাসের উপাদান বলা হয়।ইতিহাসের উপাদান কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা -১।লিখিত উপাদান ও ২।অলিখিত উপাদান।

  • লিখিত উপাদানঃ

ইতিহাস রচনার লিখিত উপাদানের মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, বৈদেশিক বিবরণ, দলিলপত্র ইত্যাদি।বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাহিত্যকর্মে ও তৎকালীন সময়ের কিছু তথ্য পাওয়া যায়। যেমন-বেদ, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, কলহনের রাজতরঙ্গিনী, মিনহাজ উস সিরাজের তবকান্ত-ই-নাসিরী, আবুল ফজলের ‘আইন ই আকবরী’ ইত্যাদি। বিদেশি পর্যটকদের বিবরণ সবসময় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচিত হয়েছে। যেমন- পঞ্চম থেকে সপ্তম শতকে বাংলায় আগত চৈনিক পরিব্রাজক যথাক্রমে ফা-হিয়েন ,হিউয়েন সাং ও ইৎসিং এর বর্ণনা। পরবর্তী সময়ে আফ্রিকান পরিব্রাজক ইবনে বতুতা সহ অন্যদের লেখাতেও এই অঞ্চল সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া গেয়েছে। এসব বর্ণনা থেকে তৎকালীন সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, ধর্ম আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়।

  • অলিখিত বা প্রত্নতত্ত্ব উপাদানঃ

যেসব বস্তু বা উপাদান থেকে আমরা বিশেষ সময়, স্থান বা ব্যক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক তথ্য পায়, সেই বস্তু বা উপাদানই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন। প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন সমূহ মূলত অলিখিত উপাদান। যেমন- মুদ্রা, শিলালিপি, তাম্রলিপি, ইমারত ইত্যাদি।এর সমস্ত প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং বিশ্লেষণ এর ফলে সেসময়ের অধিবাসীদের রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ধারণা করা সম্ভব প্রাচীন অধিবাসীদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।ধারণা করা সম্ভব প্রাচীন অধিবাসীদের সভ্যতা, ধর্ম, জীবনযাত্রা, নগরায়ন,নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা, কৃষি উপকরণ ইত্যাদি সম্পর্কে। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়- সিন্ধু সভ্যতা, বাংলাদেশের মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, ময়নামতি ইত্যাদি স্থানে প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন এর কথা।

ইতিহাসের প্রকারভেদঃ

মানব সমাজ সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন বিষয় ইতিহাস লেখা হচ্ছে। ফলে সম্প্রসারিত হচ্ছে ইতিহাসের পরিসর।তাছাড়া ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে মানুষ, মানুষের সমাজ, সভ্যতা ও জীবনধারা পরস্পর সম্পৃক্ত এবং পরিপূরক। তারপরও গঠন-পাঠন, আলোচনা ও গবেষণা কর্মের সুবিধার্থে ইতিহাসকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১। ভৌগোলিক অবস্থানগত ও

২। অবস্তুগত ইতিহাস।

  • ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক বা ইতিহাসঃ যে বিষয়টি ইতিহাসে স্থান পেয়েছে তা কোন প্রেক্ষাপটে রচিত- স্থানীয়, জাতীয়,আন্তর্জাতিক অবস্থা বোঝার সুবিধার্থে ইতিহাসকে আবারো তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ১স্থানীয় বা আঞ্চলিক ইতিহাস,২। জাতীয় ইতিহাস ও ৩।আন্তর্জাতিক ইতিহাস।

মানব জীবনে ইতিহাস

  • বিষয়বস্তুগত ইতিহাসঃ কোন বিশেষ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে যে ইতিহাস রচিত হয়, তাকে বিষয়বস্তুগত ইতিহাস বলা হয়। ইতিহাসের বিষয়বস্তুর পরিসর ব্যাপক। সাধারণভাবে একে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
  1. রাজনৈতিক ইতিহাস,
  2. সামাজিক ইতিহাস,
  3. অর্থনৈতিক ইতিহাস,
  4. সংস্কৃতি ইতিহাস,
  5. সাম্প্রতিক ইতিহাস।

ইতিহাসের গুরুত্বঃ

ইতিহাস হল মানব সভ্যতা ও মানব সমাজের অগ্রগতি ধারাবাহিক সত্যনির্ভর বিবরণ। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর উত্থান-পতনের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা ইতিহাসের বিষয়বস্তু। গ্রিক পন্ডিত হেরোডোটাস সর্বপ্রথম বিজ্ঞানসম্মতভাবে মানুষের অতীতের কাহিনী ধারাবাহিকভাবে রচনার চেষ্টা করেছিলেন বলে তাকে ইতিহাসের জনক বলা হয়।ইতিহাস পাঠ করে আমরা অতীতে অবস্থা জানতে পারে। আবার অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতেও গড়তে পারি।সর্বোপরি ইতিহাস পাঠ মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম আত্মমর্যাদাবোধ এবং জাতীয়তাবোধের জন্ম দেয়। সেক্ষেত্রে ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ একটি শাস্ত্র বা বিষয়।

মানবজীবনে ইতিহাস চর্চার প্রয়োজনীয়তাঃ

মানব সমাজ ও সভ্যতার বিবর্তনে সত্যনির্ভর বিবরণ হচ্ছে ইতিহাস। এ কারণে জ্ঞানচর্চার শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব অপরিসীম। ইতিহাস পাঠ মানুষকে অতীতের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান অবস্থা বুঝতে, ভবিষ্যৎ অনুমান করতে সাহায্য করে। ইতিহাস পাঠের ফলে মানুষের পক্ষে নিজেও নিজ দেশ সম্পর্কে মঙ্গল-অমঙ্গল এর পূর্বাভাস পাওয়া সম্ভব সুতরাং দেশ ও জাতির স্বার্থে এবং ব্যক্তি প্রয়োজন ইতিহাস অত্যন্ত জরুরী।

জ্ঞান ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করেঃ

অতীতের সত্যনিষ্ঠ বর্ণনা মানুষের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। আর এ বিবরণ যদি হয় নিজ দেশ- জাতির সফল সংগ্রাম ও গৌরবময় ঐতিহ্যের,তাহলে তা মানুষকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।একই সঙ্গে আত্মপ্রত্যয়ী আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। সেক্ষেত্রে জাতীয়তাবোধ, জাতীয় সংহতি সুদৃঢ়করণে ইতিহাস পাঠের বিকল্প নেই।
সচেতনতা বৃদ্ধি করেঃ ইতিহাস জ্ঞান মানুষকে সচেতন করে তুলে উথান পতন এবং সভ্যতার বিকাশ ও পতনের কারণগুলো জানতে পারলে মানুষ ভালো-মন্দ পার্থক্যটা সহজে বুঝতে পারে ফলে সে তার কর্মের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন থাকে।
দৃষ্টান্তের সাহায্যে শিক্ষা দেয়ঃ

দৃষ্টান্তের সাহায্যে শিক্ষা দেয়ঃ

ইতিহাস এর ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষ ইতিহাস পাঠ করে অতীত ঘটনাবলী দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নিতে পারে।। ইতিহাসের শিক্ষা বর্তমানের প্রয়োজনে কাজে লাগানো যেতে পারে। ইতিহাস দৃষ্টান্তের মাধ্যমে শিক্ষা দেয় বলে ইতিবাচক বলা হয় শিক্ষনীয় দর্পণ। ইতিহাস পাঠ করলে বিচার-বিশ্লেষণের ক্ষমতা বাড়ে যা দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে সাহায্য করে ফলে জ্ঞান চর্চা প্রতি আগ্রহ জন্মে।

About Author

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.