BGS Assignment

নারীর প্রতি সহিংসতামুলক আচরণের কারণগুলো বর্ণনা কর। বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়

নিজ ঘরেই নারীরা সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন। ইউএনওডিসির গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে মোট ৮৭ হাজার নারীকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৮ শতাংশ খুন হয়েছেন একান্ত সঙ্গী অথবা পরিবারের সদস্যদের হাতে।

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ ও জেএনএনপিএফের গবেষণার তথ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার দুই-তৃতীয়াংশই হয় পারিবারিক পরিমণ্ডলে। আর সহিংসতার প্রায় ৯৭ শতাংশ ভুক্তভোগীর অভিযোগ আদালতে শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়।

নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, দেশে বিবাহিত নারীদের ৮০ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হন এবং তাঁরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন স্বামী দ্বারা ।

নারীর প্রতি সহিংসতামূলক আচরণের কারণগুলাে-

সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা বহুকারন রয়েছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিভিন্ন কাজে নারী সর্বদা অপারদর্শী অদক্ষ হিসেবে পরিগণিত হয়।

বাইরের বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত রাখা, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, ক্রমাগত কন্যাসন্তানের জন্ম ও এর ফলে পুত্র সন্তানের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠা প্রভৃতি সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলেছে।

অর্থনৈতিক দুরবস্থা আমাদের দেশের যৌতুক প্রথা কে প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করেছে। ক্রমে যৌতুকপ্রথা পরিণত হয়ে উঠেছে সহিংসতাযর হাতিয়ার রূপে। তাছাড়া নারীকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখা, মতলবি ফতোয়া, বিভিন্ন সামাজিক কুপ্রথা প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতার গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

পুরুষতান্ত্রিক অন্যান্য দৃষ্টিভঙ্গি যেমন-পুরুষ নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ, নারীরা স্বামীর সেবাদাসী, স্বামীর পদতলে স্ত্রীর বেহেশত প্রভৃতি মনোভাব থেকেই নারীর প্রতি সহিংসতার সৃষ্টি হয়।

আবার শৈশবের নিজ পরিবারে নারীর প্রতি সহিংসতা ও বঞ্চনার অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে একজন পুরুষকে সহিংস করে তুলতে পারে। কন্যা সন্তানকে শিক্ষাদানের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া, কন্যা সন্তানের প্রতি মা-বাবার উদাসীনতা, পুত্রসন্তানকে প্রাধান্য দেয়া, বিবাহের কন্যার ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করার মনোভাব প্রভৃতি নারীর প্রতি সহিংসতাকে আরো একধাপ বাড়িয়ে দেয়।

নারীর প্রতি সহিংসতা গুরুত্বপূর্ণ কারণ দারিদ্র্য ঘোচে কাজের খোঁজে এসে অনেক নারী সহিংসতার শিকার হয়।

আরও দেখুনঃ RAM ও ROM এর মধ্যে পার্থক্য কি?

এই ধরনের সহিংসতা রােধে তােমার নিজের পরিবার ও এলাকার দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়?

এ ধরনের সহিংসতা রোধে আমার নিজের পরিবার ও এলাকার দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়নের যে যে পদক্ষেপ নেয়া যায় তার তালিকা-

১. নারী শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ, বিধবা ভাতা প্রদান এবং নারীর জন্য ঋণদান কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি।
২. নির্যাতন, সহিংসতার ধরন ও প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইন প্রণয়ন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ।
৩. পরিবারের ছেলে মেয়ে উভয়েই পারিবারিক জীবনে নৈতিক মূল্যবোধ গঠন সম্পর্কিত শিক্ষা প্রদান।
৪. নারী অধিকার এবং অধিকার সংশ্লিষ্ট আইন বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি।
৫. নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহের কর্মতৎপরতার সম্প্রসারণ।
৬. নারী নির্যাতনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা।
৭. নারী নির্যাতন প্রতিরোধে প্রবর্তিত আইন, যেমন- এসিড অপরাধ দমন আইন, এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন, যৌতুক প্রতিরোধ আইন, পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, বাল্যবিবাহ অধ্যাদেশ, সন্ত্রাস দমন অধ্যাদেশ ইত্যাদির যথাযথ প্রয়োগ।
৮. সামাজিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা।
৯. নারীর বিরুদ্ধে সহিংস ঘটনার প্রভাব ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে জনমনে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
১০. নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট আইন এর বিষয়বস্তু সহজভাবে জনসম্মুখে উপস্থাপন ও প্রচার।

যে কোনাে একটি পদক্ষেপ বাস্তবায়নের জন্য একটি বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রণয়ন কর:

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে আরো অনেক গুলো বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

এক্ষেত্রে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়রোধ, অপসংস্কৃতিরোধ, নারী ও পুরুষের শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, সুস্থ পরিবার গঠন,শিক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আদর্শ অনুশীলন করা, নারীর ভুমিকা ও মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করা প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য।

এছাড়াও সামাজিক চাপ প্রয়োগ করা প্রতিষ্ঠানঃ-

গ্রাম আদালত, ইউনিয়ন পরিষদ প্রভৃতিকে অধিক সক্রিয় করতে হবে। নারীর প্রতি সহিংস ঘটনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অপরাধী কিংবা অপরাধীর পরিবারের তরফ থেকে ক্ষতিপূরন আদায়,অপরাধী কে সামাজিকভাবে বয়কট করে এক ঘরে করে রাখা প্রভৃতি চাপসংক্রান্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে সহিংস ঘটনা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। অপরাধীকে খূঁজে বের করার ক্ষেত্রেও অপরাধ প্রতিরোধে সামাজিক চাপ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.