প্রাথমিক শিক্ষা নিয়োগের এবারের বিজ্ঞপ্তি এ যাবত কালের সব চাইতে বড় এবং বৃহৎ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, যেখানে আবেদনকারীর সংখ্যা ১৩ লাখেরও বেশি। যার মধ্যে সব চাইতে বেশি আবেদনকারীই ঢাকা বিভাগে, যাদের সংখ্যা প্রায় ২.৫ (আড়াই) লাখ। এরপরেই থাকছে রাজশাহী ২ লাখ ১০ হাজার এবং তারপর খুলনা ১ লাখ ৭৮ হাজার।
তবে প্রাথমিকের ইতিহাসের এই এতো বড় নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি সেই ২০২০ সালের ২০ অক্টোবরে প্রকাশিত হলেও এখনোও অব্দি এর জন্য পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গুজব এবং ভুল ভ্রান্তি যুক্ত তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন ফেইক অ্যাকাউন্ট, পেইজ এবং গ্রুপ থেকে। ১৬ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ও কেন্দ্র নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও গুজব থেকে চাকরী প্রত্যাশী প্রার্থীদের সতর্ক থাকতে আহ্বান জানিয়েছে। পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলে গণমাধ্যম ও তাদের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা কবে
তবে যতদূর জানা যায়, এপ্রিলের মধ্যেই এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। ১৫ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমের সই করা পরীক্ষার কেন্দ্র নির্বাচন সংক্রান্ত একটা চিঠি থেকে এই তথ্য জানা যায়। এতে বলা হয়েছে, “সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাক নিয়োগ-২০২০ এর লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮, ১৫ ও ২২ এপ্রিল, এবং ১৩ মে বিকাল ৩ টায় গ্রহনের জন্য আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে।
এতে আরোও বলা হয়, “উল্লেখিত তারিখ সমূহে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহনের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রদানের অনুরোধ করা হলো।”
পরীক্ষা নেওয়ার পর উর্ত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের জুলাই মাসের মধ্যে নিয়োগের কথা রয়েছে।
পরীক্ষা শুরুর ৫ দিন আগে টেলিটকের ওয়েবসাইটে প্রবেশপত্র ডাউনলোড এর জন্য উন্মুক্ত করা হবে। প্রতি ধাপের পরীক্ষার আগে প্রবেশপত্র একইভাবে দেওয়া হবে।
শিক্ষকদের জন্য পদ প্রায় ৪৫ হাজার। কারন তৎকালীন সময়ে ২০২০ সালে যখন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, তখন ৩২,৫৭৭ টি শূণ্য পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়। কিন্তু এর পরবর্তীতে করোনা মহামারীর কারনে সেই পরীক্ষা আর যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হয় নাই। যার ফলে মাঝখান থেকে অবসর জনিত কারনে আরোও প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি পদে শূণ্যতা দেখা দেয় । এতে এখন স্কুলগুলোতে শিক্ষক শূণ্যতা দেখা দিয়েছে প্রকট ভাবে।
এজন্য এ সমস্য নিরসনে প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রণালয় আগের বিজ্ঞপ্তির শূণ্য পদ ও বিজ্ঞপ্তির পরের শূন্য পদ মিলিয়ে একসাথে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
প্রাথমিকের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সব থেকে বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি যেখানে ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২৫ অক্টোবর থেকে অনলাইনে টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ শুরু করে মন্ত্রণালয়। এ পর্যন্ত আবেদন করেছেন ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন প্রার্থী।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার পাস নম্বর
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মানবন্টন নিশ্চয়ই আপনার জানা রয়েছে। তারপরও, আপনাকে আরেকবার মনে করিয়ে দিতে চাই যে-
- বাংলা বিষয়ের জন্য থাকছে ২০ মার্কস, যার মধ্যে ব্যাকরন ১৭ মার্কস্ আর বাকি ৩ মার্কস্ বাংলা সাহিত্য থেকে প্রশ্নোত্তর থাকবে।
- গণিত বিষয়ের জন্যেও ২০ নম্বর বরাদ্দ থাকবে। যেখানে পাটিগণিত ৮-৯ নম্বর, বীজগণিত ৫-৬ নম্বর, আর জ্যামিতি বিষয়ে ৫ নম্বর থাকবে।
- সাধারন জ্ঞান বিষয়েও থাকছে আরোও ২০ মার্কস্। এখানে ৩ টি টপিকে প্রশ্ন থাকবে। বাংলাদেশ বিষয়াবলী থেকে ৭-৮ মার্কস্, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে ৫-৬ মার্কস্, আর সাম্প্রতিক বিষয়াবলিতে ৫-৬ মার্কস্ বরাদ্দা থাকবে।
- ইংরেজী পরীক্ষাও অ্যটেন্ড করতে হবে আপনাকে, যেখান ২০ মাকর্স বরাদ্দ থাকবে।
- আর সবশেষে মৌখিক পরীক্ষার জন্য থাকবে বাকি ২০ নম্বর, আর এ নিয়ে মোট ১০০ মার্কসের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রাথমিক ও গনশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে শহরে গ্রকমে সবখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব সকল প্রাইমারি স্কুলে নতুন শিক্ষকদের আগমন ঘটবে। যা কিনা নতুন শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহযোগীতা করবে। একই সাথে এইযে দীর্ঘদিন যাবত লেখাপড়া থেকে শিক্ষার্থীদের বিচ্যুতি দূর করে লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণে কাজ করতে পারবেন শিক্ষকেরা।
শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরন এবং নতুন তরুণ উদ্যোমী শিক্ষক শিক্ষিকাদের নতুন দিনের ভাবনা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাথে মিলেমিশে যেতে পারবেন সহজেই।