সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন। তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি দেওয়া হবে। নিয়োগ যোগ্যতা উন্নীত হওয়ায় আগামী বছরের ১৯ মার্চের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সবার বেতন গ্রেডও উন্নীতকরণ করা হবে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে (ডিপিই) প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নেতৃবৃন্দর সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এফ এম মনজুর কাদির ও ১৯ জন শিক্ষক নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে সচিব বলেন, সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড সমস্যা সমাধানের আগে নতুন করে আর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে না। আগামী দিন থেকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সব দায়িত্ব প্রাথমিকের মাধ্যমে হবে, পিএসসি দ্বারা নয়। যেহেতু সামনে মুজিব বর্ষ, তাই ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ মুজিব বর্ষের আগেই সব দাবি মানা হবে।
এ সময় বৈঠকে উপস্থিত শিক্ষক নেতাদের মাধ্যমে সকল সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করার আহ্বান জানান তিনি।
সচিব বলেন, শুধুমাত্র তাই নয়, আপনারা (সহকারী শিক্ষকরা) যাতে প্রধান শিক্ষক পদের উপরের পদেও যেতে পারেন -সেই ব্যবস্থা রাখা হবে। আপনারা যাতে সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার বা শিক্ষা অফিসার কিংবা তার চেয়ে বড় পদে যেতে পারেন -সেই ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন কতো ও সুযোগ-সুবিধা কেমন
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলে আপনি হবেন সরকারি রাজস্বভুক্ত চাকরিজীবী। শুরুতেই বেতন ১৩তম গ্রেডে (১১,০০০-২৬,৫৯০ টাকা)। মূল বেতন ১১ হাজার টাকা। এলাকাভেদে বাড়িভাড়ায় কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৬০ শতাংশ। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকার জন্য মূল বেতনের ৫০ শতাংশ বাড়িভাড়া। অন্যান্য স্থানের জন্য বাড়িভাড়া মূল বেতনের ৪৫ শতাংশ।
সহকারী শিক্ষকদের চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৫০০ টাকা। টিফিন ভাতা ২০০ টাকা। যাতায়াত ভাতা ৩০০ টাকা। সব মিলিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট বেতন ১৯ হাজার ৫০০ টাকা। চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌর এলাকায় মোট বেতন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যান্য স্থানে মোট বেতন ১৭ হাজার ৯৫০ টাকা। এই বেতন থেকে কল্যাণ তহবিলের জন্য সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা এবং ডাকটিকিটের জন্য ১০ টাকা কেটে নেওয়া হয়।
প্রতিবছর মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে বেতনবৃদ্ধি হবে। অর্থাৎ ৫৫০ টাকা করে বৃদ্ধি হবে। প্রতিবছর মূল বেতনের সমপরিমাণ দুটি উৎসব ভাতা। অর্থাৎ ১১ হাজার টাকা করে উৎসব ভাতা। প্রতিবছর মূল বেতনের ২০ শতাংশ বৈশাখী ভাতা অর্থাৎ ২ হাজার ২০০ টাকা। চাকরি তিন বছর পূর্ণ হলে মূল বেতনের সমপরিমাণ শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পাওয়া যায়। চাকরিজীবনে পাবেন দুটি টাইম স্কেল।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের চূড়ান্ত ফল
বৈঠক উপস্থিত শিক্ষক নেতারা জানান, প্রাথমিকে শুধু সহকারী শিক্ষকের নিয়োগ হবে। ১৯৮৫ সালের নিয়োগ বিধি পরিবর্তন করে নতুন বিধি হবে। এছাড়া সব পদে পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগসহ সব বৈষম্য দূর করা হবে। আগামী বছরের মার্চের মধ্যে দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছেন গণশিক্ষা সচিব। এছাড়া বেতন বৈষম্যও আর থাকবে না।
উপস্থিত একাধিক শিক্ষক নেতা জানান, সচিব মহোদয়ের সঙ্গে সফল বৈঠক হয়েছে। তিনি আমাদের সব দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তার প্রেক্ষিতেই পরবর্তী কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ১১তম গ্রেডে বেতন প্রদান ও বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। সচিবের আশ্বাসে নেই আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।