garments labor

শ্রেণি: ৯ম, এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজের ক্রমঃ এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজ-২, অধ্যায় ও অধ্যায়ের শিরােনামঃ প্রথম অধ্যায়: অর্থনীতি পরিচয়

পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত পাঠ নম্বর ও বিষয়বস্তুঃ ১.১ অর্থনীতির উৎপত্তি ও বিকাশ, ১.২ দুটি মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা : দুষ্প্রাপ্যতা ও অসীম অভাব।, ১.৩ অর্থনীতির ধারণা, ১.৪ অর্থনীতির দশটি নীতি ১.৫, আয়ের বৃত্তাকার প্রবাহ (দুটি খাত), ১.৬ বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা;

এ্যাসাইনমেন্ট বা নির্ধারিত কাজঃ ‘আমরা কি উৎপাদন করবাে? উৎপাদনে। কি প্রযুক্তি ব্যবহার করবাে? উৎপাদিত পণ্য কাদের জন্য প্রযােজ্য? – এই প্রশ্নগুলাের উত্তর প্রদানই হচ্ছে একেক দেশের, একেক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রধান কাজ।’ এ সম্পর্কে ৩০০ শব্দের মধ্যে একটি প্রবন্ধ লিখ।

সংকেত: ১. সূচনা, ২. বিভিন্ন অর্থব্যবস্থার বর্ণনা, ৩. বিভিন্ন অর্থব্যবস্থার মধ্যে তুলনা, ৪. উপসংহার;

https://i.imgur.com/tJ4tsV6.jpg

নির্দেশনাঃ পাঠ্যপুস্তক/ইন্টারনেট ও শিক্ষকের সহায়তায় বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা নিবে। সহপাঠী/শিক্ষক/ ও অভিভাবকের কাছ থেকে জেনে বিভিন্ন অর্থ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যর মধ্যেকার তুলনা করতে পারবে।

৯ম শ্রেণি ৮ম সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ২০২৪ অর্থনীতি উত্তর

অর্থনৈতিক পদ্ধতি হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে একটি সমাজ উৎপাদন, সম্পদের বন্টন ও বিনিময় এবং দ্রব্য ও সেবার ভোগ এসবের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে৷ অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে৷ এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেঃ

১. ধনতান্ত্রিক বা বাজার অর্থব্যবস্থা৷
২ .সমাজতান্ত্রিক বা নির্দেশমূলক অর্থব্যবস্থা৷
৩. মিশ্র অর্থব্যবস্থা৷
৪. ইসলামী অর্থব্যবস্থা৷

ধনতান্ত্রিক বা বাজার অর্থব্যবস্থা (Capitalistic or market economic system) :

যে অর্থব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা ফার্ম উৎপাদন, বন্টন ও ভোগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করে এবং বাজার ব্যবস্থা সরকারি হস্তক্ষেপমুক্ত থাকে, তাকে ধনতান্ত্রিক বা বাজার অর্থব্যবস্থা বলে৷ এ ধরনের বাজার ব্যবস্থায় প্রতিটি ব্যক্তি বা ফার্ম কোথায় বিনিয়োগ করবে, কি উৎপাদন করবে বা কি বিক্রয় করবে, কি দামে দ্রব্য বা সেবা বিনিময় করবে-এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকে৷ অর্থাৎ ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা দ্রব্য বা সেবার দাম বাজারে চাহিদা ও যোগান এর মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এখানে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকেনা। বর্তমানে পুরোপুরি ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার প্রায় কাছাকাছি অর্থ ব্যবস্থা বিদ্যমান।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য :

  • সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা : ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরণ ব্যক্তিমালিকানার উপর ন্যস্ত থাকে।
  • অবাধ প্রতিযোগিতা : সরকারের কোন ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুক্ত প্রতিযোগিতা বিদ্যমান থাকে।
  • ভোক্তার স্বাধীনতা : এখানে প্রত্যেকের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিদ্যমান। কি, কখন এবং কিভাবে উৎপাদন করা হবে সম্পদের মালিক সে সিদ্ধান্ত নেয়।
  • দাম ব্যবস্থা : চাহিদা ও যোগান ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা দ্রব্য ও সেবার দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারণ করে। চাহিদার স্থিত অবস্থায় যোগান বাড়লে দাম কমে। আবার যোগানের স্থিত অবস্থায় চাহিদা বাড়লে দাম বাড়ে ।
  • মুনাফা অর্জন : উৎপাদন থেকে প্রাপ্ত আয় ও উৎপাদন ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান কে মুনাফা বলে। উৎপাদক সর্বনিম্ন খরচে সর্বোচ্চ উৎপাদন করে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করে।
  • সমাজের শ্রেণীবিভাগ : ব্যক্তিমালিকানাধীন সম্পদের ভিত্তিতে সমাজের শ্রেণীবিভাগ করা যায়। তুলনামূলকভাবে উচ্চবিত্তের সম্পদের মালিকানা সবচেয়ে বেশি, নিম্নবিত্তের সবচেয়ে কম এবং মধ্যবিত্ত মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে। এই শ্রেণীবিভাগ থেকে সামাজিক বৈষম্যের চিত্র পাওয়া যায়।
  • অসম বন্টন : ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা আয় ও সম্পদ বন্টন অসমতা ও বৈষম্য দেখা যায়। সম্পদের ব্যক্তিমালিকানা থাকায় সম্পদের বন্টন অসম হয়। এক্ষেত্রে যার সম্পদ যত বেশি তার আয় তত বেশি।

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, বন্টন ও দাম প্রক্রিয়া এবং উৎপাদনের উপায়সমূহ সম্পূর্ণ ব্যক্তি মালিকানাধীন। এখানে সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে উৎপাদন কাজ পরিচালিত হয়। বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় স্বয়ংক্রিয় দাম ব্যবস্থার মাধ্যমে। এখানে ভোক্তা বা ফার্মের সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা থাকে। এ কারণে এ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যে দ্রব্য বা সেবার উৎপাদনে মুনাফা বেশি, ফার্মসমূহ সেই পণ্য উৎপাদন করে। এভাবে ‘কি’ প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায়। আবার যে প্রযুক্তিতে ব্যয় কম হবে বা উৎপাদন লাভজনক হবে সে পদ্ধতিতেই উৎপাদন হবে। যা ‘ কিভাবে’ প্রশ্নটির সমাধান করে। অন্যদিকে ভোক্তাদের সামর্থের উপর নির্ভর করে সামাজিক উৎপাদন তাদের মধ্যে বন্টিত হয়। এভাবে ’কার জন্য‘ প্রশ্নটির উত্তর পাওয়া যায়।

এধরনের অর্থব্যবস্থায় দাম প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় বাজার ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথের ভাষ্য অনুযায়ী ’অদৃশ্য হাত‘ দ্বারা বাজারব্যবস্থা পরিচালিত। এখানে চাহিদা যোগান এর চেয়ে বেশি হলে দাম বৃদ্ধি পাবে। ফলে চাহিদার পরিমাণ হ্রাস পাবে। আবার চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি হলে দাম হ্রাস পাবে। এতে চাহিদার পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এভাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দামের উঠানামাকে ’অদৃশ্য হাত‘ দ্বারা আখ্যায়িত করা হয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক বা নির্দেশনামূলক অর্থব্যবস্থা (Socialistic or Command Economic System) 

এই অর্থব্যবস্থা ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার ঠিক বিপরীত। যে অর্থব্যবস্থায় সম্পদ ও উৎপাদন উপকরণের মালিকানা রাষ্ট্রের এবং সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয় তাকে সমাজতান্ত্রিক বা নির্দেশনা মূলক অর্থব্যবস্থা বলে। এ অর্থব্যবস্থায় দ্রব্যের দাম নির্ধারণে স্বয়ংক্রিয় বাজার ব্যবস্থার কোন ভূমিকা থাকে না এবং উৎপাদিত দ্রব্য ভোগ ও বন্টনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকে।

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সমূহ নিচে আলোচনা করা হলো:

  • সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা : সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানা। এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় সম্পদ ও উৎপাদনের উপকরণ ব্যক্তিমালিকানায় থাকেনা। সকল সম্পদের মালিকানা রাষ্ট্রের হাতে ন্যস্ত।
  • অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত : অর্থনৈতিক সকল কর্মকান্ড, যথা- দ্রব্য বা সেবার দাম নির্ধারণ, শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ, উৎপাদন, বন্টন ও উন্নয়নের সকল পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকারের একচেটিয়া সিদ্ধান্তে পরিচালিত হয়।
  • সামাজিক কল্যাণ : সমাজতন্ত্রের মানুষের মৌলিক অধিকারসমূহ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার ক্ষেত্রে অসমতা দূর করে সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিত করা হয়।
  • ভোগ ও বন্টন ব্যবস্থা : এ অর্থ ব্যবস্থায় কোন দ্রব্য কতটুকু উৎপাদিত হবে, কে কতটুকু দ্রব্য ভোগ করবে তা রাষ্ট্রীয়ভাবেই নির্ধারিত হয়। এখানে সমাজে যে যতটুকু অবদান রাখবে সে অনুপাতে বন্টন করা হয়। ফলে এখানে জাতীয় আয় এর সুষম বন্টন নিশ্চিত হয়।
  • দাম ব্যবস্থা : এ অর্থব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্রব্যের দাম নির্ধারণ হয় না। অর্থাৎ দ্রব্য বা সেবার দাম স্বয়ংক্রিয় বাজার ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল নয়। এখানে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে দ্রব্য বা সেবার দাম নির্ধারিত হয়। এ কারণে সমাজতন্ত্রবাদ প্রতিযোগিতা অনুপস্থিত।

মিশ্র অর্থব্যবস্থা (Mixed Economic System)

ধনতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার সংমিশ্রণই হচ্ছে মিশ্র অর্থব্যবস্থা। অর্থাৎ মিশ্র অর্থব্যবস্থা এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদন, ভোগ ও বন্টন ইত্যাদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্বয়ংক্রিয় বাজার ব্যবস্থার সাথে সাথে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সংমিশ্রণ ঘটে। এ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অনেক অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ব্যক্তি বা ফার্ম বাজার ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ে থাকে। আবার সরকারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মিশ্র অর্থব্যবস্থা এর বৈশিষ্ট্য

  • সম্পদের মালিকানা : ও অর্থ ব্যবস্থার একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এখানে সম্পদের রাষ্ট্রীয় মালিকানার পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানা বিদ্যমান। আবার উৎপাদনের উপায়সমূহের ক্ষেত্রেও ব্যক্তিমালিকানার পাশাপাশি সরকারি মালিকানা স্বীকৃত।
  • ব্যক্তিগত ও সরকারি খাতের সহাবস্থান : মিশ্র অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত ও সরকারি খাত পাশাপাশি অবস্থান করে। এখানে ব্যক্তিগত ও সরকারি খাতের শিল্প-কারখানা একত্রে কাজ করে। এই অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত খাতে মুনাফা অর্জনই লক্ষ্য তবে সরকারি খাতে সামাজিক কল্যাণকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। অনেক সময় ব্যক্তিগত খাতের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
  • অর্থনৈতিক পরিকল্পনা : এখানে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনা কে রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার সাথে সমন্বয় করা হয়।
  • দাম ব্যবস্থা : এ অর্থব্যবস্থায় বাজার অর্থনীতির দাম ব্যবস্থাকে অনুসরণ করা হয়। অর্থাৎ এখানে দ্রব্য বা সেবার দাম স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। তবে সরকার রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে দাম ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
  • ব্যক্তি স্বাধীনতা : মিশ্র অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বাধীনতা রক্ষিত হয়। এখানে ব্যক্তি কি পরিমান ভোগ করবে এবং উৎপাদক কি দ্রব্য উৎপাদন করবে সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র খুব বেশি হস্তক্ষেপ করে না। তবে সমাজের স্বার্থে কোন কোন সময় ভোগ বা বিপণনের ক্ষেত্রে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করে।
  • বন্টন ব্যবস্থা : যেহেতু এ অর্থব্যবস্থায় ব্যক্তিমালিকানা বিদ্যমান, সেহেতু জাতীয় আয় এর সুষম বন্টন এখানে নিশ্চিত করা কঠিন।

ইসলামী অর্থব্যবস্থা (Islamic Economic System)

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। ইহা মানব জীবন ও সমাজের প্রতিটি ধাপে প্রয়োজনীয় বিধিবিধান ও পথ নির্দেশনা প্রদান করে । ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা শরীয়াহ এর আলোকে প্রতিষ্ঠিত। শরিয়াহ এর মূল ভিত্তি হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ। যে অর্থব্যবস্থায় আল্লাহর বিধান অনুযায়ী অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালিত হয় এবং কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা হয় তাকে ইসলামী অর্থব্যবস্থা বলে। এ ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মানুষ জাতি ও সমাজের কল্যাণ সাধনে সীমিত সম্পদের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মানুষের আচরণ বিশ্লেষণ করা হয়।

ইসলামী অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

  • সম্পদের মালিকানা : ইসলামী অর্থব্যবস্থার মূল কথা হচ্ছে, আকাশ ও যমীনে যা কিছু আছে তার মালিক হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ তাআলা। মানুষ কেবল আল্লাহর নির্দেশে তার প্রতিনিধি হিসেবে সম্পদের যথাযথ ব্যবহার এবং হেফাজত করবে।
  • হালাল ও হারামের বিধান : এ অর্থব্যবস্থায় উৎপাদন, ভোগ ও বিনিময়ের ক্ষেত্রে হালাল ও হারাম বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামী বিধান অনুযায়ী হালাল পথে উপার্জন করতে হবে এবং হারাম পথে উপার্জন বর্জন করতে হবে।
  • সম্পদের বন্টন : ইসলামী অর্থনীতিতে বন্টন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এখানে ধনীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করে তা দরিদ্র জনগণের মধ্যে বন্টন এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বণ্টনের উদ্দেশ্যে যে সকল হাতিয়ার ব্যবহার হয় তার মধ্যে রয়েছে যাকাত, ওশর, সাদকাহ, খারাজ ইত্যাদি ।
  • সামাজিক নিরাপত্তা : সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এ ধরনের অর্থনীতিতে সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদ, কালোবাজারি ইত্যাদি অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এখানে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। কর্মক্ষেত্রে নিয়োগের ক্ষেত্রে ও প্রত্যেককে সমান সুযোগ দেয়া হয়। এ ধরনের অর্থব্যবস্থায় সরকারকর্তৃক সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেছেন, “ তারা প্রকৃত কল্যাণকর কাজ করলো, যারা আল্লাহ, পরকাল, কিতাব, ফেরেশতা ও নবীদের প্রতি ঈমান আনল এবং তাদের ধন-সম্পদ আল্লাহর ভালোবাসায় নিকটাত্মীয়, এতিম, মিসকিন, নিঃস্ব, পথিক, দরিদ্র ও ক্রীতদাস মুক্তির জন্য দান করিল।” [২:১৭৭]
  • শ্রমের মর্যাদা : ইসলামী অর্থ ব্যবস্থায় শ্রমিক শোষণ নিষিদ্ধ। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,“ শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর পূর্বে তার মজুরি পরিশোধ করো।”
  • দাম ব্যবস্থা : এ ধরনের অর্থ ব্যবস্থায় সরকার বা অন্য কোন একক পক্ষ দাম নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। বাজারে অসংখ্য ক্রেতা-বিক্রেতার চাহিদা ও যোগানের পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম নির্ধারিত হয়।

অর্থব্যবস্থা সমূহের তুলনামূলক যৌক্তিক আলোচনা

বর্তমান সময়ে মিশ্র অর্থব্যবস্থা বেশি জনপ্রিয়। ধণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অর্থব্যবস্থার সংমিশ্রণে মিশ্র অর্থব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ধণতন্ত্র ব্যক্তিমালিকানার প্রভাব ও সমাজতন্ত্র মালিকানার প্রভাব থাকে যাকে আমরা মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ বলতে পারি। এইসব অর্থব্যবস্থা বাদে ইসলামী অর্থব্যবস্থা আলাদা বৈশিষ্ট্য বহন করে। তবে কোন দেশ কি উৎপাদন করা হবে উৎপাদনে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে এবং উৎপাদিত পণ্য কাদের জন্য প্রযোজ্য হবে তার উপর নির্ভর করে এসব অর্থব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়।

উপসংহার : এভাবে ইসলামিক, ধনতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থা বৈশিষ্ট্যগত কারণে একে অপরের চেয়ে পৃথক। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত। আবার সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি তা খুবই সংকীর্ণ। ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা একটি তথ্য অর্থব্যবস্থা অর্থনীতিকে কাম্যস্তরে সীমিত করে।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.