কাঠ বাদাম বা আলমন্ড (Almond) একটি জনপ্রিয় ও পুষ্টিকর বাদাম, যা বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের মধ্যে অত্যন্ত সমাদৃত। বাংলাদেশের বাজারেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই বাদাম খেতেও সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্য উপকারিতাও অসাধারণ। এই আর্টিকেলে আমরা জানবো ২০২৫ সালে কাঠ বাদামের দাম, পুষ্টিগুণ, উপকারিতা ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার।
কাঠ বাদামের দাম কত?
বর্তমান বাজারে যদি আপনি কাঠ বাদাম ক্রয় করতে চান তাহলে এক্ষেত্রে বিভিন্ন দর দাম পেতে পারেন। এর কারণ হিসেবে বলা যায় যে প্রথম কথা হল একেক সময়ে একেক সিজনে কাঠ বাদামের দাম কম বেশি উঠাবসা করে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের কাঠবাদাম উন্নত জাতের হলে সেসব কাঠবাদাম গুলোর দাম অন্যান্য বাদাম গুলো থেকে একটু বেশি রাখা হয়।
তাই সঠিক নামটি বলা সব সময় সবার পক্ষে সম্ভব হয় না। তবে কাঠবাদামের একটি নির্দিষ্ট দাম বা এভারেজ দাম কত হতে পারে এটা আমরা বলে দিতে পারি। যে দামটিতে আপনি কাঠবাদাম ক্রয় করতে পারেন। বর্তমানের বাজার দর অনুযায়ী এক কেজি কাঠ বাদামের দাম ৪০০ টাকা থেকে ৯০০০ টাকার মধ্যে।
যদি আপনি একটু উন্নত জাতের বার একটু বেশি দামি কাঠ বাদাম ক্রয় করতে চান তাহলে ক্ষেত্রে দাম টা আরো বাড়তে পারে। তবে এভারেজ দাম হিসেবে বলা যায় এক কেজি কাঠ বাদামের দাম ৬৫০ টাকার মতো। বাজারে গেলেই আপনি প্রকৃত কাঠ বাদামের দাম টা জানতে পারবেন। তবে সবসময় কাঠবাদাম অনলাইন থেকে না ক্রয় করে নিজে দেখে শুনে ভাল জাতের কাঠবাদাম দোকান থেকে করার চেষ্টা করবেন।
🛒 কাঠ বাদামের দাম (২০২৫)
২০২৫ সালে কাঠ বাদামের বাজারমূল্য কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে আমদানি খরচ, মুদ্রার মান ও মৌসুম অনুযায়ী। নিচে বিভিন্ন পরিমাণ অনুযায়ী দাম তুলে ধরা হলো:
পরিমাণ | দাম (বাংলাদেশি টাকা) |
---|---|
১০০ গ্রাম | ১৩০ – ১৮০ টাকা |
২৫০ গ্রাম | ৩২০ – ৪৫০ টাকা |
৫০০ গ্রাম | ৬০০ – ৮৫০ টাকা |
১ কেজি | ১২০০ – ১৬০০ টাকা |
নোট: দেশি ও বিদেশি (বিশেষ করে ক্যালিফোর্নিয়া, স্পেন, ইরান) আমদানি করা কাঠ বাদামের মধ্যে দামের ভিন্নতা থাকে।
জেনে নিনঃ চীনা বাদামের দাম ও উপকারীতা সমূহ
কাঠ বাদামের উপকারিতা সমূহ
বিভিন্ন ধরনের বাদাম এর মধ্যে কাঠ বাদাম একটি উন্নত জাতের বীজ জাতীয় ফল। কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর গুণাগুণ সম্পন্ন বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি গুনাগুন। কাঠবাদাম খেলে নিয়মিত আপনার শরীরে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে আপনার বিভিন্ন ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হবে।
এর কারণ হিসেবে বলা যায় যে, কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন বি-১, বি-৫ ইত্যাদি।। যেগুলো আপনার শরীর এবং মস্তিস্ক কে সব সময় সুস্থ রাখতে কাজ করে
আপনার হৃদপিণ্ড কে সব সময় শান্ত রাখতে কাঠবাদামের গুরুত্ব অপরিসীম বলা যায়। কেননা কাঠবাদামে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও প্রোটিন। এগুলো আপনার হৃদপিণ্ড কে সবসময় সচল রাখতে খুবই কার্যকরী বলা যায়।
তাছাড়া কাঠবাদামের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, b1, b6 রয়েছে। এগুলো আপনার মাথায় যে চুল গুলো হয় সেগুলোর জন্য খুবই উপকারী। একারণে বলা যায় যে, কাঠবাদামের বিভিন্ন গুনাগুন সম্পন্ন ভিটামিন গুলো আপনাকে নতুন চুল গজাতে এবং পুরনো চুলকে শক্তিশালী করতে খুবই কার্যকরী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
বর্তমানে আপনি বাজারে কাঠ বাদামের তেল কিনতে পাবেন। সেগুলো মাথায় দেওয়া হয় শুধুমাত্র চুল পড়া কমানোর জন্য চুলের পুষ্টি গুনাগুন বাড়ানোর জন্য। কাঠবাদাম চুলের সবচেয়ে উপকার করার কারন হল এর ভিতর যেসব ভিটামিন এবং পুষ্টি গুনাগুন গুলো রয়েছে এগুলো মূলত চুল কে সবসময় সতেজ রাখতে এবং ভালো রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও যদি আপনি কখন বদ হজম হয়ে থাকে বা হজমজনিত কোন সমস্যা থাকে। তাহলে আপনি যদি নিয়মিত কাঠ বাদাম খান তাহলে আপনার সমস্যাটি অচিরেই ঠিক হয়ে যাবে। কেননা কাঠবাদাম এর ভিতরে বিশেষ পুষ্টি গুনাগুণ থাকার কারণে এটা হজমজনিত যেকোনো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা গুলো সমাধান করে ভালো কাজ করতে পারে। তাই সবসময় হজম শক্তি কে শক্তিশালী করতে ও কাঠ বাদাম খেতে পারেন।
যদি আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হয় তাহলে কাঠ বাদাম খেয়ে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। নিয়মিত যদি সঠিকভাবে কাঠ বাদাম খেতে পারেন তাহলে আপনার যেকোন ধরনের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ অনায়াসে দূর হয়ে যাবে। এছাড়া যাদের অতিরিক্ত সুগার থাকে বা যাদের সুগারের সমস্যা থাকে। তারা যদি নিয়মিত কাঠবাদাম খায় তাহলে যাদের সুগার লেভেলটা সবসময় সঠিক থাকবে। কখনো কম হবে না আবার কখনো অতিরিক্ত বেড়ে ও যাবে না। সব সময় সুগার লেভেল একটা সাধারণ মাত্রায় থাকবে। তাই এই সব বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান থেকে মুক্তি পেতে অবশ্যই কাঠ বাদাম খেতে পারেন। কাঠবাদামে কিন্তু প্রচুর পুষ্টি ও গুনাগুণ রয়েছে।
🥜 কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ
কাঠ বাদাম একটি পুষ্টিতে ভরপুর বাদাম। এতে রয়েছে:
- প্রোটিন
- ভিটামিন ই
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফাইবার (আঁশ)
- মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস
এক মুঠো (প্রায় ৩০ গ্রাম) কাঠ বাদামে রয়েছে:
- ক্যালরি: ১৬০-১৭০ কিলোক্যালরি
- ফ্যাট: ১৪ গ্রাম (এর মধ্যে ভালো ফ্যাট ৯-১০ গ্রাম)
- প্রোটিন: ৬ গ্রাম
- ফাইবার: ৩.৫ গ্রাম
- ভিটামিন E: দৈনিক প্রয়োজনের ৩৭%
- ম্যাগনেসিয়াম: দৈনিক প্রয়োজনের ২০%
🌿 কাঠ বাদামের উপকারিতা
১. হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী
কাঠ বাদাম হৃদযন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ভালো ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমিয়ে দেয়, এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় কাঠ বাদাম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৩. চুল ও ত্বকের যত্নে কার্যকর
কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল ও কোমল রাখে। এটি বয়সের ছাপ কমায় ও ত্বকের কোষ পুনরুজ্জীবিত করে। চুলের বৃদ্ধি ও গোঁড়া শক্ত করতেও এটি উপকারী।
৪. স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্ক উন্নত করে
কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন বি২, L-carnitine এবং ম্যাগনেসিয়াম ব্রেইনের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। শিশুদের জন্য এটি বিশেষভাবে উপকারী।
৫. হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করে
এতে থাকা ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
৬. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
যদিও কাঠ বাদাম ক্যালরি সমৃদ্ধ, তবে এতে থাকা প্রোটিন ও আঁশ অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে, ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৭. গর্ভবতী নারীদের জন্য উপকারী
গর্ভাবস্থায় কাঠ বাদাম খেলে ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্র গঠন ভালো হয় এবং মায়ের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি বজায় থাকে।
৮. ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কাঠ বাদাম খান, তাদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
🍽️ কাঠ বাদামের ব্যবহার
- সরাসরি খাওয়া: ভেজানো বাদাম সকালে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
- দুধে ভিজিয়ে খাওয়া: রাতে ৫-৬টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলে মস্তিষ্ক, ত্বক ও চোখের উপকারে আসে।
- পেস্ট করে খাওয়া: কাঠ বাদামের পেস্ট করে তা রুটি বা টোস্টের সঙ্গে খাওয়া যায়।
- রান্নায় ব্যবহার: পোলাও, কোরমা, মিষ্টান্ন, খিচুড়ি ও হালুয়াতে কাঠ বাদাম ব্যবহার করলে স্বাদ ও পুষ্টি বাড়ে।
- দুধে মিশিয়ে খাওয়া: কাঠ বাদাম ব্লেন্ড করে দুধে মিশিয়ে দিলে তা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ড্রিঙ্ক হিসেবে খাওয়া যায়।
⚠️ কিছু সতর্কতা
- অতিরিক্ত খাওয়া: বেশি কাঠ বাদাম খাওয়া পেটে গ্যাস বা অম্লতা সৃষ্টি করতে পারে।
- অ্যালার্জি: কিছু মানুষের শরীরে বাদামে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরি।
- চিনিযুক্ত বা লবণযুক্ত বাদাম: প্রক্রিয়াজাত (processed) বাদামে অতিরিক্ত লবণ বা চিনি থাকা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই খাঁটি ও অপ্রক্রিয়াজাত বাদাম বেছে নেওয়া উত্তম।
✅ উপসংহার
কাঠ বাদাম শুধু একটি বাদাম নয়, এটি একটি সুপারফুড। এর প্রতিটি উপাদান শরীরের জন্য উপকারী এবং রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কাঠ বাদাম অন্তর্ভুক্ত করলে শরীর সুস্থ, সুন্দর ও সজীব থাকে। তবে সবসময় মনে রাখতে হবে – পরিমাণমতো খাওয়াই হলো স্বাস্থ্যকর খাবারের মূল চাবিকাঠি।
আশাকরি, কাঠ বাদামের দাম কত? এবং কাঠবাদাম কি? এগুলো সম্পর্কে খুব সুন্দর ভাবে আপনাদের জানাতে পেরেছি। এছাড়া আরও আপনাদের জানানোর চেষ্টা করেছি যে, কাঠ বাদাম কিভাবে আমাদের বিভিন্ন ভাবে উপকার করে। এখন আপনি হয়ত ভাল ভাবে জানতে এবং বুঝতে পারলেন। এরপর ও যদি আপনার কাঠ বাদাম সম্পর্কে কোন কিছু জানতে বা বুঝতে অসুবিধা হয় তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে আপনার সমস্যাটির সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করব। যাতে করে আপনি কাঠবাদাম সম্পর্কে আর ও বিভিন্ন তথ্য খুব সুন্দর ভাবে জানতে এবং বুঝতে পারেন। দেখা হবে আবার নতুন কোন আর্টিকেলে নতুন কোন বিষয় নিয়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত আশা করি সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।