HSC Civics Assignment

 

স্তর: এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪, বিভাগ: মানবিক, বিষয়ঃ পৌরনীতি ও সুশাসন, পত্র: প্রথম, বিষয় কোড-২৬৯, অ্যাসাইনমেন্ট নং-১

অধ্যায়ের শিরোনাম ও নম্বরঃ প্রথম অধ্যায়: পৌরনীতি ও সুশাসন পরিচিতি;

অ্যাসাইনমেন্টঃ “নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল প্রশ্ন সম্পর্কে যে শাস্ত্র আলােচনা করে তাই পৌরনীতি” ই. এম. হােয়াইটের এই সংজ্ঞার আলােকে পৌরনীতি ও সুশাসনের বিষয়বস্তু ও পরিধির ক্রমবিকাশ সম্পর্কে একটি নিবন্ধ রচনা কর।

শিখনফল/ বিষয়বস্তুঃ ক. পৌরনীতির ধারণা বর্ণনা করতে পারবে; খ. পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশ বর্ণনা করতে পারবে।

নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

  • ১. পৌরনীতি ও সুশাসনের ধারণা ও পরিধি;
  • ২. সুশাসনের বৈশিষ্ট্য;
  • ৩. পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশ;

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার পৌরনীতি ও সুশাসন প্রথম পত্র ১ম অ্যাসাইনমেন্ট

পৌরনিতি হলো নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। প্রাচীন গ্রীসে নাগরিক ও নগর রাষ্ট্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। ঐ সময় ছোট অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠত নগর-রাষ্ট্র। যারা নগর রাষ্ট্রীয় কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ করত, তাদের নাগরিক বলা হত। শুধুমাত্র পুরুষ শ্রেণী রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে বিধায় কেবলমাত্র তাদেরকে নাগরিক বলা হত। দাস, মহিলা ও বিদেশিদের এ সুযোগ ছিলনা।

নাগরিকের আচরণ, দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনাই হলো পৌরনীতির বিষয়বস্তু। রাষ্ট্র প্রদত্ত নাগরিকের মর্যাদাকে বলা হয় নাগরিকতা। আর রাষ্ট্রের সাথে জড়িত সবই পৌরনীতির বিষয়বস্তু।

পৌরনীতি হলো জ্ঞানের সেই মূল্যবান শাখা, যা নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানবতার সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে। বর্তমানে একদিকে নাগরিকের ধারণার পরিবর্তন ঘটেছে, অন্যদিকে নগর-রাষ্ট্রের স্থলে বৃহৎ আকারের জাতি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

পৌরনীতি ও সুশাসনের ধারণাঃ

বৃহৎ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পৌরনীতি হলো সামাজিক বিজ্ঞানের একটি অংশমাত্র। এর অর্থ যথাক্রমে নাগরিক (Citizen) ও নগররাষ্ট্র (City state)। প্রাচীন গ্রিসে নাগরিক ও নগররাষ্ট্র ছিল অবিচ্ছেদ্য। তখন রাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে নাগরিক জীবন আবর্তিত হতো। অন্যদিকে রাষ্ট্র ও এর কার্যাবলী সম্পর্কিত ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, বিবর্তনের দ্বিতীয় পর্যায় খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দে গ্রিসে নাগরিক কেন্দ্রিক সভ্যতার উদ্ভাবন হয়। গ্রিক দার্শনিক প্লেটো (Plato) তার বিখ্যাত গ্রন্থ `The Republic’ এ নাগরিক, নাগরিক এর শ্রেণীবিভাগ এবং সমাজ সম্পর্কে আলোচনায় পৌরনীতির আভাস লক্ষ্য করা যায়। অ্যারিস্টটল তার ‘The Politics’ গ্রন্থে পৌরনীতির বাস্তবভিত্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করেছেন।

আধুনিককালে পৌরনীতি আলাদা বিষয় হিসাবে পরিচিতি পেতে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা বিশ্বাস করতেন শুধু রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সুসংগঠিত করেই গণতন্ত্রকে কার্যকর করা সম্ভব নয়।
বিশেষ করে মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক দেশের সফলতা নির্ভর করে নাগরিকের জ্ঞান, দক্ষতা এবং মূল্যবোধের উপর। এজন্য তারা উত্তম নাগরিকতা শিক্ষাদানের জন্য এবং উত্তম নাগরিক গড়ে তোলার জন্য স্কুল কারুকলামে পৌরনীতি বিষয়টি যুক্ত করছেন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পৌরনীতি এর গুরুত্ব অপরিসীম।

সুশাসন (Good governance গুড গভার্নেন্স) বলতে সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলি কীভাবে একটি পছন্দনীয় উপায়ে সরকারী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে ও সরকারী সম্পদসমূহের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে, সেই ব্যাপারগুলি পরিমাপ সম্পর্কিত একটি ধারণাকে বোঝায়। শাসন বলতে “সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া এবং কোন্‌ প্রক্রিয়াতে সিদ্ধান্তগুলি বাস্তবায়িত হয় (বা হয় না)”, সেই ব্যাপারটিকে বোঝায়। এই প্রেক্ষিতে শাসন কথাটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, জাতীয়, আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় শাসনের পাশাপাশি সমাজের অন্যান্য খাতগুলির মধ্যকার আন্তঃক্রিয়ার সাথেও সম্পর্কিত হতে পারে।

সুশাসন প্রত্যয়টির ব্যবহার খুব বেশিদিনের নয়। সুশাসনের ধারণা প্লেটোর লেখনীতে পাওয়া যায়। সুশাসন বিষয়টির ধারণা অ্যারিস্টটলের লেখা থেকে পাওয়া যায়। অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, সর্বোৎকৃষ্ট কল্যাণ সাধন রাষ্ট্রের লক্ষ্য। তিনি আরও বলেছিলেন, প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক উপায়ে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে । কিন্তু রাষ্ট্র টিকে আছে উন্নত জীবন অব্যাহত রাখার জন্য। অ্যারিস্টটল তার সংবিধানের আলোচনার মাধ্যমেও সুশাসনের বিষয়টি তুলে ধরেন। সুশাসন বলতে আইনের শাসন, জনবান্ধব, প্রশাসন, যৌক্তিক ও ন্যায়ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দুর্নীতিযুক্ত প্রশাসনকে বুঝিয়েছেন। পরবর্তীতে টমাস হবস্ Thomas Hobbes, জন লেক John Lack ও জ্যঁ জ্যাঁক রুশোর রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত চুক্তি মতবাদে সুশাসনের প্রতিফলন দেখা যায়।

পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি :

পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি ব্যাপক। পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-

  • নাগরিকতা বিষয়ক : পৌরনীতি ও সুশাসন মূলত নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। নাগরিকের উত্তম ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন প্রতিষ্ঠা করা পৌরনীতি ও সুশাসনের প্রধান লক্ষ্য। পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য, সচেতনতা, সুনাগরিকতা, নাগরিকতা অর্জন ও বিলোপ, নাগরিকতার অর্থ ও প্রকৃতি, সুনাগরিকের গুণাবলি প্রভৃতি সম্পর্কে আলোচনা করে।
  • মৌলিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত : মানব সভ্যতার ইতিহাসে পরিবার হল আদি ও অকৃত্রিম প্রতিষ্ঠান। কালের বিবর্তন ধারায় পরিবারের সম্প্রসারণ হয়েছে এবং গড়ে উঠেছে রাষ্ট্র ও অন্যান্য বহুবিধ সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। পৌরনীতি ও সুশাসন পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও বিকাশ, রাষ্ট্রের কার্যাবলি প্রভৃতি মৌলিক প্রতিষ্ঠান পৌরনীতি ও সুশাসনের অন্তর্ভূক্ত।
  • রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলোচনা : পৌরনীতি ও সুশাসনের সাথে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ওৎপ্রোতভাবে জড়িত। রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের ধারণা, রাষ্ট্রের উৎপত্তি, রাষ্ট্রের কার্যাবলি, রাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ, রাষ্ট্রের উপাদান, সংবিধান, সংবিধানের শ্রেণিবিভাগ, সংবিধানের বৈশিষ্ট্য, সরকার, সরকারের শ্রেণিবিভাগ, সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ, জনমত, জনমতের বাহন, নির্বাচকমন্ডলী, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন প্রভৃতি পৌরনীতি ও সুশাসনের আলোচনার অন্তর্ভূক্ত।
  • সামাজিক ও রাজনৈতিক বিমূর্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন বিমূর্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। আইন, আইনের উৎস ও প্রকৃতি, আইন ও নৈতিকতা, স্বাধীনতা, স্বাধীনতার প্রকৃতি, স্বাধীনতার রক্ষাকবচ, সাম্য ও স্বাধীনতা, সাম্যের প্রকারভেদ প্রভৃতি সম্পর্কে পৌরনীতি ও সুশাসন আলোচনা করে।
  • রাজনৈতিক ঘটনাবলি : পৌরনীতি ও সুশাসন রাজনৈতিক বিভিন্ন ঘটনাবলি নিয়ে আলোচনা করে। যেমন- বাংলাদেশে পৌরনীতি ও সুশাসন পলাশীর যুদ্ধ, সিপাহী বিদ্রোহ, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক অভ্যূত্থান ইত্যাদি রাজনৈতিক পর্যায় সম্পর্কে আলোচনা করে।
  • সুশাসন সম্পর্কে আলোচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন রাষ্ট্রের সুশাসনের বহুমাত্রিক ধারণা সম্পর্কে আলোচনা করে। সুশাসনের উপাদান, সুশাসনের সমস্যা, সুশাসনের সমস্যার সমাধান, সুশাসনের সমস্যা সমাধানে সরকার ও জনগণের ভূমিকা সম্পর্কে পৌরনীতি ও সুশাসন আলোচনা করে।
  • নাগরিকের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের বর্তমান স্বরূপ সম্পর্কে আলোচনা করে এবং এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনের আদর্শ ও স্বরূপের ইঙ্গিত প্রদান করে।
  • নাগরিকের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিক নিয়ে আলোচনা : পৌরনীতি ও সুশাসন নাগরিকের সামাজিক ও রাজনৈতিক কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয় সংস্থার (যেমন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি) গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে। নাগরিকের জাতীয় বিষয় (যেমন, স্বাধীনতা আন্দোলনের পটভূমি, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন জাতীয় নেতার অবদান, দেশ রক্ষায় নাগরিকের ভূমিকা, জাতীয় রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাসমূহ) সম্পর্কে আলোচনা করে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠন এবং বিভিন্ন ঘটনাবলি সম্পর্কেও পৌরনীতি ও সুশাসন আলোচনা করে।
  • নাগরিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি : পৌরনীতি ও সুশাসন আধুনিক নাগরিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করে। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানও পাওয়া যায় এর মাধ্যমে। যেমন- ইভটিজিং, দুর্নীতি, ইলেকট্রনিক গভর্নেন্স (ই-গভর্নেন্স), দারিদ্র বিমোচনের মত বিষয়গুলির আলোচনা পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধিকে সমৃদ্ধ করেছে।
  • সুশাসন ও ই-গভর্নেন্স : পৌরনীতি ও সুশাসন বর্তমান সময়ে সুশাসন ও ই-গভর্নেন্স নিয়ে আলোচনা করে। সরকার কিভাবে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষ নির্বাচন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ, দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে পারে সে বিষয়ে পৌরনীতি ও সুশাসন আলোচনা করে। পরিশেষে বলা যায় যে, পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধি ও বিষয়বস্তু ব্যাপক ও বিস্তৃত। নাগরিকের জীবন ও কার্যাবলি যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত পৌরনীতি ও সুশাসনের পরিধিও ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত।

সুশাসনের বৈশিষ্ট্যঃ

শাসনের ধারণাটি থেকে স্বাভাবিকভাবেই সুশাসন নামের একটি ধারণার উদয় হয়, যা অকার্যকর অর্থনীতি বা রাজনৈতিক সংগঠনগুলির সাথে টেকসই অর্থনীতি ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলিকে তুলনা করার একটি প্রতিমান বা মডেল হিসেবে কাজ করে। সুশাসন ধারণাটির কেন্দ্রে রয়েছে সমাজের নির্দিষ্ট কিছু পছন্দের গোষ্ঠীর পরিবর্তে সাধারণ জনগণের চাহিদা মেটাতে সরকার ও প্রশাসনিক সংস্থাগুলির দায়িত্বের ব্যাপারটি। যেহেতু উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে কেন্দ্রীভূত এবং উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে প্রায়শই “সবচেয়ে সফল” হিসেবে বর্ণনা করা হয়, তাই সুশাসনের আদর্শ বা মানদণ্ডগুলিতে প্রায়শই ঐসব রাষ্ট্রের সাথে অন্যান্য রাষ্ট্রগুলিকে মাপা হয়। সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা এবং উন্নত দেশের কর্তৃপক্ষগুলি প্রায়শই “সুশাসন” কথাটি দিয়ে কিছু নির্দিষ্ট অবশ্যপালনীয় কাজের উপর জোর দেন যা ঐ সংস্থার কার্যক্রমের সাথে খাপ খায়, তাই “সুশাসন” বলতে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ভিন্ন ভিন্ন জিনিস বোঝাতে পারে। সুশাসনের বিপরীত ধারণাটি হল কুশাসন (bad governance)।

সুশাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ-

  • জবাবদিহিতা : দায়বদ্ধতা সুশাসনের মৌলিক দাবী। স্থানীয় সরকার, রিপোর্ট ব্যাখ্যা এবং সিদ্ধান্ত সব কিছুর জন্য জবাবদিহি করতে একটি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
  • স্বচ্ছতা : মানুষ অনুসরণ করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া বুঝতে সক্ষম হওয়া উচিত। এর মানে হল এই যে, তারা স্পষ্ট দেখতে কিভাবে এবং কেন একটি সিদ্ধান্ত সক্ষম হবে তথ্য, পরামর্শ এবং পরামর্শ পরিষদ বিবেচিত হতে হবে, এবং সব কিছু বিধানিক কাউন্সিল হতে অনুসৃত হবে(প্রাসঙ্গিক যখন)।
  • আইনের শাসন অনুসরণ : এর অর্থ এই যে সিদ্ধান্ত প্রাসঙ্গিক আইন বা প্রচলিত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং পরিষদের ক্ষমতার মধ্যে হয়। স্থানীয় সরকারের ক্ষেত্রে, প্রাসঙ্গিক আইন রয়েছে স্থানীয় সরকার আইন ১৯৮৯ এবং যেমন অন্যান্য আইন জনস্বাস্থ্য অ্যাক্ট ২০০৮, এবং সমান সুযোগ আইন ২০১০।
  • প্রতিক্রিয়াশীল : স্থানীয় সরকার সবসময় যখন একটি সময়মত উপযুক্ত এবং প্রতিক্রিয়াশীল পদ্ধতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থ, সমগ্র সম্প্রদায়ের চাহিদা অনুযায়ী পরিবেশন করার চেষ্টা করবে।
  • ন্যায়সঙ্গত : রাষ্ট্র তার সদস্যদের স্বার্থে সব কমিউনিটির কল্যাণে ফলাফল লব্ধ সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় কাউন্সিল দ্বারা বিবেচনা করবে। এর অর্থ এই যে সব গ্রুপ, বিশেষ করে সবচেয়ে প্রধান, প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে।
  • সুশাসন কার্যকর ও দক্ষতা : স্থানীয় সরকার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং কার্যকর প্রক্রিয়ায় যে তাদের সম্প্রদায়ের জন্য সম্ভাব্য সর্বোত্তম ফলাফল নিশ্চিত করার জন্য পাওয়া মানুষ, সম্পদ এবং সময় সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত ভাবে অনুসরণ করবে।
  • অংশগ্রহণমূলক হওয়া : একটা সিদ্ধান্তে আগ্রহী দ্বারা প্রভাবিত করার লক্ষে যে কারো যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত। এটা বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে – সম্প্রদায়ের সদস্যদের, কিছু ক্ষেত্রে সুপারিশ বা, প্রকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার অংশ হতে সুযোগ দেওয়া তথ্য, তাদের মতামত প্রদান করা হতে পারে।

বর্তমানে আইনের লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের নাগরিক দ্বারা নির্বাচিত সরকার, প্রশাসনের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা চিহ্নিতকরণসহ আরো অনেক বিষয় সুশাসনের মূল বক্তব্য।

পৌরনীতি ও সুশাসনের ক্রমবিকাশ :

পৃথিবীর যেকোনো দেশের সরকার সব সময়ই প্রত্যাশা করেন যে, তাদের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হোক। উন্নত শাসন সংক্রান্ত চিন্তার বিবর্তনের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বর্তমানের সুশাসন সংক্রান্ত ধারণা। এক কথায় বলা যায়, বর্তমানে সুশাসনের ধারণাটি সময়ের বিবর্তনে গড়ে উঠা একটি বিষয়। পৌরনীতিতে নাগরিক জীবনের সামগ্রিক দিক ফুটে ওঠে। আর সুশাসন পৌরনীতির একটি অংশ, যাতে নাগরিক শাসন সম্পর্কিত দিক তুলে ধরা হয়। এই দিক থেকে পৌরনীতি ও সুশাসন একই সূত্রে গাঁথা বলা যায়। পৌরনীতির উদ্দেশ্য হলো নাগরিককে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং উত্তম নাগরিক জীবনের দিক নির্দেশনা দেওয়া। আর সুশাসনের উদ্দেশ্য হলো শাসন প্রক্রিয়াকে উন্নত ও কল্যাণমুখী করে গড়ে তোলা এবং নাগরিকদের উত্তম জীবন নিশ্চিত করা। পৌরনীতি ও সুশাসনের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন।

পৌরনীতি ও সুশাসন একে অপরের সহযোগী। উভয়ে একই লক্ষ্যার্জনের জন্য পরিচালিত হয়। পৌরনীতি ও সুশাসন উভয়ের প্রধান লক্ষ্য হলো নাগরিক জীবন ও রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নয়ন।

কতগুলো অভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে পৌরনীতি ও সুশাসন। নাগরিকের অধিকার, দায়িত্ব, কর্তব্য, রাষ্ট্র, সরকার, আইন, আইনের শাসন, সাম্য, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, আমলাতন্ত্র ইত্যাদি পৌরনীতি ও সুশাসন উভয়েরই আলোচ্য বিষয়। পৌরনীতি ও সুশাসন একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বলা যায়, একটি ছাড়া অপরটি অপূর্ণ। কেননা সুশাসনের জন্য যেমন পৌরনীতির জ্ঞান অপরিহার্য, তেমনি পৌরনীতির অগাধ জ্ঞান নিয়েও সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারলেও সেটি পূর্ণতা পায় না। সুশাসন ও পৌরনীতি একে অপরের দ্বারা প্রভাবিত হয়। কারণ পৌরনীতির জ্ঞান সুনাগরিক তৈরি করে। আর এই সুনাগরিক ব্যতীত সুশাসন সম্ভব নয়। সুতরাং পৌরনীতি ও সুশাসন এর মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে তা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই।

সুতরাং বলা যায়, ই. এম. হােয়াইট যথার্থই বলেছেন “নাগরিকতার সাথে জড়িত সকল প্রশ্ন সম্পর্কে যে শাস্ত্র আলােচনা করে তাই পৌরনীতি”।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.