Hindu marriage

তৎকালীন সংস্কৃত শাস্ত্রের বিরাট পণ্ডিত হয়েও পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণে দ্বিধা করেননি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি ছিলেন নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রবল সমর্থক। হিন্দু বিধবাদের অসহনীয় দুঃখ, তাদের প্রতি পরিবারবর্গের অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার গভীরভাবে ব্যথিত করেছিল তাকে। এই বিধবাদের মুক্তির জন্য তিনি আজীবন সর্বস্ব পণ করে সংগ্রাম করেছেন। আপনি হিন্দু বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করেন কে জানার জন্য অনুগ্রহ করে এই অধ্যায়টি সম্পূর্ণ পড়ুন।

বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহ আন্দোলনের সূচনা

ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর জানতেন যে, বিধবা বিবাহের মতো একটি সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে সবার আগে প্রয়োজন এ বিষয়ে “জনসচেতনতা ও জনমত” প্রতিষ্ঠা করা। তার থেকেও বড়ো বিষয়, বিধবা বিবাহ যে “শাস্ত্র সম্মত” একটি বিষয় সে সম্পর্কে প্রচলিত এই সমাজের যাবতীয় দ্বিধা ও সংশয়ের অবসান ঘটানো। সে কারণে তিনি তার এই আন্দোলনকে ধাপে ধাপে নিম্নলিখিতভাবে এগিয়ে নিয়ে যান:

প্রথম পর্যায়ের আন্দোলন:

১৮৫০ সাল হতে ১৮৫৪ পর্যন্ত আন্দোলনের জন্য তিনি যে কাজ গুলি করেন:

  1. বাল্যবিবাহের দোষ নামক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, যার প্রকাশকাল ছিল ১৮৫০ খ্রিঃ।
  2. তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রবন্ধ প্রকাশ করেন, প্রকাশিত হওয়ার সময় ১৮৫৪ খ্রিঃ।
  3. কালীকৃষ্ণ মিত্রের সমর্থন ও আলোড়ন সৃষ্টি যার উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ, পত্রিকাতে বিদ্যাসাগরের প্রবন্ধগুলি প্রকাশ হওয়ার পর শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে প্রবল জাগরণের সৃষ্টি হওয়ায় কৃষ্ণনগরের এক সভায় কালীকৃষ্ণ মিত্র বিধবা বিবাহের সমর্থনে বিদ্যাসাগরের শাস্ত্রীয় যুক্তি গুলির প্রচারের পাশাপাশি তার বৈধতা প্রমাণ করেন।

দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলন:

১৮৫৫ সালের জানুয়ারি হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আন্দোলনের অগ্রগতির জন্য তিনি যে কাজ গুলি করেন:

১. পুস্তিকা প্রকাশ ও জনমত গঠন করা, ১৮৫৫ খ্রিঃ ২২ জানুয়ারি “বিধবা বিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিৎ কিনা এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব” এর স্বপক্ষে ২২ পাতার একটি পুস্তিকা তিনি প্রকাশ করেছিলেন।

২. রক্ষণশীলদের প্রতিক্রিয়া, কলকাতার শিক্ষিত মহল বিদ্যাসাগরের যুক্তি গুলিকে খণ্ডন করে পাল্টা ৩০ টি পুস্তিকা প্রকাশ করে। বিদ্যাসাগর রক্ষণশীলদের যুক্তি খণ্ডন করে বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে ১৮৫৫ খ্রিঃ তার দ্বিতীয় গ্রন্থ “বিধবা বিবাহ বিষয়ক দ্বিতীয় পুস্তক” প্রকাশ করেন।

আরও দেখুনঃ মামুন নামের অর্থ কি?

তৃতীয় পর্যায়ের আন্দোলন:

১৮৫৫ খ্রিঃ, অক্টোবর এবং ১৮৫৬ খ্রিঃ জুলাই পর্যন্ত আন্দোলনের অগ্রগতির জন্য তিনি যে কাজ গুলি করে:

১. ১,০০০ হাজার ব্যক্তির স্বাক্ষর করা একটি আবেদনপত্র ভারত সরকারের কাছে পাঠান ১৮৫৫ খ্রিঃ ০৪ অক্টোবর।

২. বিধবা বিবাহের আইন প্রণয়ন, ১৮৫৫ খ্রিঃ ১৮ নভেম্বর Legislative Council এর সদস্য JP Grant প্রথম বিধবা বিবাহ আইনের খসড়া উত্থাপন করেন। স্যার জেমন কলভিল এটিকে সমর্থন করেন।

৩. পরস্পর বিরোধী শিবিরের মাধ্যমে বিধবা বিবাহের পক্ষে ও বিপক্ষে গন স্বাক্ষর করা একাধিক আবেদনপত্র সরকারের দপ্তরে জমা হয়।

চতুর্থ পর্যায়ের আন্দোলন:

সে সময়ে আন্দোলনের অগ্রগতির জন্য তিনি যে কাজ গুলি করেন:

১. বিদ্যাসাগর জানতেন, শুধুমাত্র জনসচেতনতা, প্রচার বা আইন তৈরি করলেই সমাজে বিধবা বিবাহ প্রতিষ্ঠিত হবে না।

২. ১৮৫৬ খ্রিঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের উদ্যোগে বিধবা বিবাহ আইন সরকারি অনুমোদন লাভ করে ।

৩. ১৮৫৬ খ্রিঃ হতে ১৮৬৭ খ্রিঃ পর্যন্ত প্রায় ৬০ জন বিধবা বিবাহের আয়োজন করেন নিজস্ব অর্থায়নে যেখানে বিদ্যাসাগরের তৎকালীন প্রায় ৮০,০০০ হাজার টাকা ব্যয় হয়।

৪. ১৮৭০ খ্রিঃ বিদ্যাসাগর তার নিজ পুত্র নারায়ন চন্দ্রের সাথে একটি বিধবা কন্যার বিবাহের মাধ্যমে সমাজে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।

বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় সমাজে বিধবা বিবাহের আন্দোলনটি এভাবে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়।

কার প্রচেষ্টায় হিন্দু বিধবা বিবাহ সমাজে প্রবর্তিত হয়

১৮৫৬ খ্রিঃ ৭ ডিসেম্বর কলকাতায় শ্রীশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সাথে কালীমতি দেবীর বিবাহের মাধ্যমে প্রথম “বিধবা বিবাহ” কাজটি সম্পন্ন হয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রচেষ্টায় এবং তিনি প্রবর্তিত বিধবা বিবাহ আইন সামাজিক ক্ষেত্রে প্রচলন করেন।

সারসংক্ষেপ:

উপরোক্ত আলোচনা হতে আমরা জানতে পারলাম যে, হিন্দু বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করেন কে বা কার মাধ্যমে প্রবর্তিত হয়েছে এবং সে সম্পর্কে আরও অনেক বিস্তারিত বিষয়। আমাদের পোস্টটি পড়ে যদি ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই, আমাদের বাকি পোস্ট গুলো ভিজিট করতে ভুলবেন না!

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.