English domination in India

সুপ্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমরা যারা এইচএসসি ২০২৪ পরীক্ষার্থী আছো তারা নিশ্চয়ই এইচএসসি ২০২৪ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইতিহাস ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর খুঁজছো। তোমাদের এই অন্বেষণের কথা মাথায় রেখেই আজকের প্রতিবেদনটি তৈরি করেছি। আজকের আলোচনায় থাকছে এইচএসসি ২০২৪ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইতিহাস ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর- ভারতবর্ষে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনা।

আমরা এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ এর ইতিহাস ১ম পত্র এসাইনমেন্টের দেওয়া নির্দেশনা সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করে প্রশ্নে উল্লেখিত নির্দেশনাসমূহ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব যাতে তোমাদের অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে সুবিধা হয়।

এইচএসসি ২০২৪ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইতিহাস ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

https://i.imgur.com/4cacdDC.jpg

এইচএসসি ২০২৪ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইতিহাস ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্ট

অ্যাসাইনমেন্ট : ভারতবর্ষে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনা।

নির্দেশনা (সংকেত/পরিধি/ধাপ) :

  • ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন বর্ণনা ;
  • ভারতবর্ষে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রম ;
  • চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বক্সার যুদ্ধের তাৎপর্য বিশ্লেষণ ;
  • আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় দিওয়ানি ও দ্বৈত শাসন ;
  • চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ফলাফল বিশ্লেষণ।

এইচএসসি ২০২৪ ৬ষ্ঠ সপ্তাহের ইতিহাস ১ম পত্র অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর

ভারতে ইংরেজ আধিপত্য (অথবা কোম্পানি রাজ হিন্দিতে “রাজ” শব্দের অর্থ “শাসন”) বলতে বোঝায় ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব কোম্পানির হাতে পরাজিত হলে কার্যত এই শাসনের সূচনা ঘটে। ১৭৬৫ সালে কোম্পানি বাংলা ও বিহারের দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব সংগ্রহের অধিকার লাভ করে। ১৭৭২ সালে কোম্পানি কলকাতায় রাজধানী স্থাপন করে এবং প্রথম গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসকে নিযুক্ত করে প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে। ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত এই শাসন স্থায়ী হয়েছিল। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের পর ১৮৫৮ সালের ভারত শাসন আইন বলে ব্রিটিশ সরকার ভারতের প্রশাসনিক দায়দায়িত্ব স্বহস্তে তুলে নেয় এবং দেশে নতুন ব্রিটিশ রাজ প্রবর্তিত হয়।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আগমন বর্ণনা

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বলা হয় পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং প্রথম কর্পোরেশন কোম্পানি। শুরুতে এর নাম ছিল ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৬০০-১৭০৮)। পরবর্তীতে এর নাম বদলে করা হয় অনারেবল কোম্পানি অব মার্চেন্টস অব লন্ডন ট্রেডিং ইনটু দ্য ইস্ট ইন্ডিজ অথবা ইউনাইটেড কোম্পানি অব মার্চেন্টস অব ইংল্যান্ড ট্রেডিং টু দ্য ইস্ট ইন্ডিজ (১৭০৮-১৮৭৩)। তবে উপমহাদেশে সেটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামেই অধিক পরিচিত ছিল।

পূর্বে ইউরোপের মানুষের কাছে ভারতীয় উপমহাদেশ ‘ইস্ট ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত ছিল। সেই সময় ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল মশলা, কাপড় এবং দামি রত্নের জন্য বিখ্যাত এক স্থান। এসব উপকরণ ইউরোপে বেশ চড়া দামে বিক্রি হতো। কিন্তু সমুদ্রে শক্তিশালী নৌবাহিনী না থাকার দরুণ ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে আসতে ব্যর্থ হয়।

ভারতবর্ষে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনা

সেই সময়ে স্পেন এবং পর্তুগাল ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে মশলা ও কাপড় নিয়ে পূর্বের দূরবর্তী দেশ সমূহে বিক্রি করত। কিন্তু ব্রিটিশ বণিকরা উপমহাদেশে আসার জন্য মরিয়া হয়ে ছিলেন। অবশেষে ১৫৮৮ সালে ব্রিটিশরা পথের দিশা পায়৷ স্প্যানিশদের হারিয়ে তাদের নৌবহরের দখলে নেয় তারা। এই নৌবহর ব্রিটিশদের ভারতের আসার পথ তৈরি করে দেয়। এবং সেই সাথে তাদের নৌশক্তিকে বহুগুণ বেড়ে যায়।

১৬০০ সালের ৩১ জুলাই, স্যার থমাস স্মাইথের নেতৃত্বে লন্ডনের একদল বণিক রাণী প্রথম এলিজাবেথের কাছে এক আর্জি নিয়ে হাজির হন৷ তারা রাণীর কাছে পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবসা করার জন্য রাণীর সম্মতি ও রাজসনদ প্রদানের জন্য অনুরোধ করেন। রাণী প্রথম এলিজাবেথ তাদের সম্মতি দেন। পরবর্তীতে ৭০ হাজার পাউন্ড পুঁজি নিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়।

ভারতবর্ষে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রম

রাণী এলিজাবেথ যখন লন্ডনের বণিকদের দেওয়া অনুমতিপত্রে স্বাক্ষর করেন, তখন ভারতের শাসনকর্তা ছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর। আকবরের অধীনে তখন প্রায় সাত লক্ষ ৫০ হাজার বর্গ মাইলের বিশাল এক দেশ। আকবরের শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্যের শক্তি ও সামর্থ্য দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছিল। সেই সময়ে মুঘল সম্রাটের যে পরিমাণ ধনসম্পদ ছিল, তার কাছে পুরো ইউরোপের সম্পদ বলতে গেলে নস্যি! বহু মূল্যবান রত্নের পাশাপাশি ভারত ছিল প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। যার ভাণ্ডারকে মনে করা হতো অশেষ।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি দল সর্বপ্রথম ১৬১৩ সালে মুঘল রাজদরবারে ব্যবসা করার জন্য অনুমতি দেওয়ার জন্য প্রার্থনা করেন। তখন মুঘল সাম্রাজ্যের অধিপতি ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর।

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসায়িক চিন্তাভাবনা ছিল বাণিজ্য কুঠি বা কারখানা ভিত্তিক। সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে তারা কুঠি নির্মাণ করার অনুমতিই চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতিতে ইস্ট কোম্পানি অধুনা গুজরাটের সুরাটে তাদের প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি শুরুতে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মশলার ব্যবসায় প্রভাব তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা সেখানে গিয়ে দেখেন তাদের আগেই সেসব ডাচদের দখলে চলে গেছে৷ ডাচদের শক্ত ভীতের কাছে টিকতে না পেরে তারা পুরোপুরি ভারতের দিকে মনোনিবেশ করে।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতির পর তারা পূর্ব ভারতে এবং পশ্চিম ভারতের সমুদ্রের উপকূলে ছোট ছোট কুঠি নির্মাণ করতে শুরু করে কোম্পানির বণিকদল। ১৬২৩ সালে আমবয়না গণহত্যার পর ডাচরা ভারত থেকে তাদের ব্যবসায়িক প্রতিনিধি প্রত্যাহার করে নেয়। উল্লেখ্য, ইন্দোনেশিয়ায় ডাচ ইস্ট কোম্পানি কর্তৃক ব্রিটিশ, জাপানিজ ও পর্তুগিজ ব্যবসায়ীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনাকে আমবয়না গণহত্যা বলা হয়। ফলে ভারতে ব্রিটিশদের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল পর্তুগিজরা। তাদেরকে হারিয়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে।

শুরুতে তারা মশলা নিয়ে ব্যবসা করলেও ধীরে ধীরে ক্যালিকো (সাদা সুতি কাপড়), রেশমী কাপড়, নীল, শোরা বা কার্বনেট অব পটাশ এবং চা নিয়ে ব্যবসা করা শুরু করে। ধীরে ধীরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবসার বিস্তৃতি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী দেশসমূহ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায় লাভ করার সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আকার ও প্রভাব বাড়তে থাকে। সপ্তদশ এবং অষ্টাদশ শতকে ব্রিটেনের অর্থনীতির বড় এক অংশ ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আয়। সেই সাথে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি লন্ডন, তথা ব্রিটেনের সবচেয়ে প্রভাবশালী কোম্পানিতে রূপ নেয়।

চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় বক্সার যুদ্ধের তাৎপর্য

ভারতবর্ষে তখন মোঘল সিংহাসনে আসীন ছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম। তিনি তার সাম্রাজ্যের শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে কয়েকটি প্রদেশকে একত্রিত করতে চাইলেন। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা প্রদেশ তখন ব্রিটিশদের আওতাধীন থাকায় সম্রাট তেমন সুবিধা করতে পারছিলেন না। তাই সুজা-উদ-দৌলা এবং মীর কাসিম সম্রাট শাহ আলমের সাথে জোট তৈরি করলেন। তাদের তিনজনের সাথে ইংরেজদের দ্বন্দ্বের সাধারণ কারণ ছিল বাংলার অধিকার। ইংরেজদের একচেটিয়া অধিকার রদ করে বাংলার সার্বভৌমত্ম ফিরিয়ে আনতে তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। যুদ্ধের দিন ঠিক করা হয় ২৩ অক্টোবর, ১৭৬৩ সাল।

বক্সার বর্তমান বিহার রাজ্যের একটি জেলা শহর হিসেবে পরিচিত। ভারতের গঙ্গা নদীর দক্ষিণে অবস্থিত এই শহরটিতে ভারতবর্ষের ইতিহাসে দুটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এদের একটি ছিল বক্সারের যুদ্ধ। বক্সার এলাকা থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কাটকাউলি ময়দানে সেই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। আরেকটি চসুয়ার যুদ্ধ।

হিন্দু ধর্মানুসারীদের নিকট বক্সার বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান। মোঘল এবং নবাব বাহিনী মিলে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধার একটি দল ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল। ওদিকে মেজর হেক্টর মুনরো নামক এক ইংরেজ সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রায় ১০ হাজার সৈনিকের ছোট দল নিয়ে হাজির হয় ইংরেজরা। এদের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার সৈনিক পূর্বে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিল। ক্ষুদ্র বাহিনী হলেও ব্রিটিশদের অস্ত্রশস্ত্র নবাব বাহিনীর তুলনায় আধুনিক এবং উন্নত ছিল। ইংরেজ গোলন্দাজ বাহিনী বেশ দূর থেকে অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম ছিল। নির্দিষ্ট দিনে দু’দল যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লো।

মির্জা নাজাফ খানের নেতৃত্বে নবাব ও মোঘল বাহিনী ডানদিক থেকে আক্রমণ করা শুরু করে। ব্রিটিশরা যুদ্ধের শুরুতে আক্রমণের তীব্রতায় সামান্য পিছু হটতে বাধ্য হয়। মোঘল-নবাব বাহিনী একটি গ্রামের দখল নিয়ে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলে। হেক্টর মুনরো ইংরেজদের তিন ভাগে বিভক্ত করলেন। ডানদিকে মেজর স্টিবার্ট, বামদিকে মেজর চ্যাম্পিয়ন এবং মধ্যভাগে চার কোম্পানির অশ্বারোহী দল নিয়ে সাজানো ইংরেজরা সেই গ্রামে আক্রমণ করে বসে। তিনদিক থেকে আসা আক্রমণে জোট বাহিনী গ্রামের অধিকার হারিয়ে ফেলে। বিশৃঙ্খল জোট বাহিনীকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে মেজর স্টিবার্টের পদাতিক সেনারা।

মীর কাসিম ৩০ লক্ষ রুপি এবং কিছু সৈনিক নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হন। ওদিকে মির্জা নাজাফ খান এবং সম্রাট শাহ আলম ইংরেজদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। যুদ্ধে ইংরেজদের ৮০০ সৈনিকের বিপরীতে প্রায় ২০০০ বাঙালি সৈনিক নিহত হয়।

স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর মীর কাসিম যুদ্ধের পরাজয় মেনে নিতে পারলেন না। তিনি যুদ্ধের পর পরই আত্মহত্যা করেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার যুদ্ধে বাংলার রাজনৈতিক দৃশ্যপটে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন আসে। ওদিকে সুজা-উদ-দৌলা বক্সারের যুদ্ধের পরাজয় ঘুচাতে পুনরায় ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, কিন্তু তিনি বার বার পরাজিত হন। পরবর্তীতে তিনি রোহিলাখন্দ পালিয়ে যান। এর মাধ্যমে বাংলার বুকে স্বাধীনচেতা নবাবদের রাজত্ব শেষ হয়ে যায়।

বক্সারের যুদ্ধ পুরো ভারতবর্ষের ইতিহাসে অন্যতম প্রধান যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হয়। এর মাধ্যমে ভারতের বুকে ইংরেজদের আধিপত্য বিস্তার হয়। যা পরবর্তীতে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের ভিত্তি স্থাপন করে। একই সাথে তা মোঘলদের রাজনৈতিক অদূরদর্শীতা এবং প্রশাসনিক দূর্বলতার দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়। এই পরাজয়ের প্রভাব থেকে ভারতবর্ষের জেগে উঠতে আরো একশত বছর পেরিয়ে যায়।

চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় দিওয়ানি ও দ্বৈত শাসন

বক্সারের যুদ্ধের পর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে এলাহাবাদের দ্বিতীয় স্বাক্ষর করে। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মুঘল সম্রাট কে কারা ও এলাহাবাদ অঞ্চল এবং বার্ষিক ২৬ লাখ টাকা প্রদানের অঙ্গীকার করে। দ্বিতীয় শাহ আলম ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলা বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানী অধিকার প্রদান করেন। বাংলা তথা ভারতের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বৈধতা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে উন্নত হয়। এছাড়াও দ্বৈত শাসনের সূচনা হয়।

কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলার দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল। এই ব্যবস্থায় নবাবের হাতে ছিল নিজামত বা রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব। আর কোম্পানির হাতে ছিল দেওয়ানী বা রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত অধিকার। বাস্তবে নবাবের ছিল ক্ষমতাহীন দায়িত্ব, অপরপক্ষে কোম্পানির হাতে ছিল দায়িত্বহীন ক্ষমতা। বাংলায় কোম্পানির আর্থিক শাসন চরম আকার ধারণ করে রাজস্ব আদায় হয়েছিল। ১৭৬৪-৬৫ খ্রিস্টাব্দে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা এবং ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর কোম্পানি আদায় করেছিল দুই লক্ষ টাকা। শেষ পর্যন্ত বাংলার গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংস খ্রিস্টাব্দে দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়েছিলেন।

চূড়ান্ত আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ফলাফল

প্রাচীন ও মধ্যযুগে বাংলার অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল আর এই সমৃদ্ধির মূলে ছিল বাংলার কৃষি ব্যবস্থা। নদীমাতৃক বাংলার ভূমি চিরদিনই প্রকৃতির অকৃপণ আশীর্বাদে পরিপুষ্ট। এখানকার কৃষিভূমি অস্বাভাবিক উর্বর। প্রাক-ব্রিটিশ আমলে বাংলায় উৎপন্ন ফসলের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল ধান, গম তুলা ইক্ষু , পাট, আদা, জোয়ার, তেল, শিম সরিষা ও ডাল। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে পান, সুপারি ও নারকেল উৎপন্ন হত। বাংলার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানী করে প্রচুর অর্থ আয় করা হত। প্রাক-ব্রিটিশ আমলের কৃষি সাফল্যের উপর নির্ভর করে বাংলায় বস্ত্রশিল্প, চিনি শিল্প এবং নৌকা নির্মাণ শিল্প বিকাশিত হতে থাকে। কিন্তু ব্রিটিশ আমলে কোম্পানির সিদ্ধান্তে বাংলার ঐতিহ্যবাহী কৃষিপণ্য (খাদ্য শস্য) বাদ দিয়ে শুরু হয় নীলচাষ।

ফলে বাংলার কৃষি নির্ভর অর্থনীতি ধ্বংস হতে শুরু করে এবং বাংলায় এক পর্যায়ে চরম খাদ্যাভাব দেখা দেয়। বাংলাদেশে নীলচাষ শুরু হয় আঠারাে শতকের সত্তুরের দশকে। নীলচাষের জন্য নীলকরগণ কৃষকের সর্বোকৃষ্ট জমি বেছে নিত। কৃষকের নীলচাষের জন্য অগ্রিম অর্থ গ্রহণে (দাদন) বাধ্য করত। বাংলাদেশে নীল ব্যবসা ছিল একচেটিয়া ইংরেজ বণিকদের নিয়ন্ত্রণে। প্রথম দিকে নীলকরেরা চাষিদের বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করলেও পরের দিকে তাও বন্ধ করে দেয়। ফলে ক্রমাগত নীলচাষ চাষিদের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তারা নীলচাষে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। এমতাবস্থায় নীলকর সাহেবরা বাংলার গ্রামাঞ্চলে শুধু ব্যবসায়ী রূপে নয় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এক অভিনব অত্যাচারী জমিদার রূপেও আত্মপ্রকাশ করে।

তারা এতটাই নিষ্ঠুর আর বেপরােয়া হয়ে উঠেছিল যে অবাধ্য নীলচাষিদের হত্যা করতেও দ্বিধা করেনি। এই বিবরণ থেকে ব্রিটিশ আমলে বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। ব্রিটিশ শাসনের ফলে দেশীয় শিল্প বাণিজ্য, কৃষি প্রভৃতি চরম বিপর্যয়ের মুখে এসে দাড়ায়। ইংরেজরা ভারতকে শােষণ করত এবং সব কিছু লুণ্ঠন করে নিয়ে যেত নিজ দেশের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে সুদৃঢ় করার জন্যে। বাংলার লুষ্ঠিত সম্পদই গ্রেট ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লবের পথ সুগম করেছিল। কিন্তু ইংরেজরা নিজেদের দেশে শিল্পায়নের কাজে বিশেষ মনযােগী হলেও ভারতে বিপরীত নীতি অনুসরণ করত। ফলে কৃষির উপর চাপ বাড়তে থাকল এবং বেকারত্ব সমাজে নতুন সমস্যা সৃষ্টি করল। দাদাভাই নওরােজী ভারতীয়দের চরম দারিদ্রের কারণ হিসেবে ইংরেজদের চরম বল্লাহীন অথনৈতিক লুণ্ঠন নীতিকে দায়ী করেন।

ভারতবর্ষে ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্যক্রম পর্যালোচনা

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.