Geography

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত ৩য় সপ্তাহের এসাইনমেন্ট মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের নৈর্বাচনিক বিষয় ভূগোল দ্বিতীয় পত্র তৃতীয় এসাইনমেন্ট হিসেবে পাঠ্য বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায় জনসংখ্যার বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান, বৈশিষ্ট্য বন্টন বিশ্লেষণ সংক্রান্ত একটি অ্যাসাইনমেন্ট করতে দেয়া হয়েছে।

এখানে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তৃতীয় সপ্তাহের মানবিক বিভাগের ভূগোল ২য় পত্র অ্যাসাইনমেন্ট এবং সমাধান সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য উল্লেখ করা হলো। মানবিক বিভাগ থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা ভূগোল দ্বিতীয় পত্রের অ্যাসাইনমেন্ট যথাযথ নির্দেশনা অনুসরণ করে সম্পন্ন করার পর সংশ্লিষ্ট বিষয় শিক্ষকের নিকট জমা দিতে হবে।

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ তৃতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ভূগোল

সকল সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ভূগোল দ্বিতীয় পত্র দ্বিতীয় এসাইনমেন্ট নেয়া হয়েছে পাঠ্য বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ের জনসংখ্যা থেকে।

নিচের ছবিতে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মানবিক বিভাগের ভূগোল দ্বিতীয় পত্র দ্বিতীয় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।

https://i.imgur.com/ZtYGWvN.jpg

বিষয়ঃ ভূগোল ২য় পত্র, অ্যাসাইনমেন্ট নং-০২, অধ্যায় ও শিরোনামঃ দ্বিতীয় অধ্যায় (জনসংখ্যা)

অ্যাসাইনমেন্টঃ বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান, বৈশিষ্ট্য ও বন্টন বিশ্লেষণ

অ্যাসাইনমেন্ট লেখার নির্দেশনা (সংকেত/ধাপ/পরিধি):

১. জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদান;

২. জনসংখ্যা অভিগমনের কারণ,  ধরন ও প্রভাব;

৩. বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য;

৪. জনমিতিক ট্রানজিশনাল মডেল ও বাংলাদেশ;

এইচএসসি পরীক্ষা ২০২৪ তৃতীয় সপ্তাহের ভূগোল অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের তৃতীয় সপ্তাহের মানবিক বিভাগের নৈর্বাচনিক বিষয় ভূগোল দ্বিতীয় পত্র দ্বিতীয় এসাইনমেন্ট এ দেওয়া নির্দেশনায় প্রশ্নসমূহ ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন রুবিকস এর আলোকে সমাধান করে দেয়া হলো।

জনসংখ্যার জনমিতিক উপাদানঃ

জনসংখ্যার পরিবর্তন বলতে কোনাে দেশ বা অঞ্চলে জনসংখ্যার আকারগত পরিবর্তনকে বুঝানাে হয়ে থাকে। এই পরিবর্তন পর্যালােচনার মাধ্যমে জনমিতিক ভারসাম্য নিরীক্ষণ করা যায়। এতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ – বাস্তবায়ন সহজ হয়। জনসংখ্যা পরিবর্তনের মুখ্য নিয়ামক হলাে জন্ম, মৃত্যু এবং অভিগমন। জন্ম ও মৃত্যুহার পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলাে যথাক্রমে স্থূল জন্মহার এবং স্থূল মৃত্যুহার। জনসংখ্যার পরিবর্তন নির্ভর করে জন্মহার অভিগমনের ফলে। জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং মৃত্যু ও অভিগমনের ফলে জনসংখ্যার হ্রাসমূলক সংখ্যাত্মক পার্থক্যের উপর। জনসংখ্যার আকার প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। সাধারণ জনসংখ্যা পরিবর্তনের তিনটি নিয়ামক রয়েছে। এগুলো হলাে- ক. জন্মহার খ. মৃত্যুহার এবং গ. অভিবাসন।

ক. জন্মহার (Birth Rate) :

জনসংখ্যা পরিবর্তনের প্রধান নিয়ামক হলাে জন্মহার । মানুষের মরণশীলতার কারণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তা সন্তান জন্মের মাধ্যমে পূরণ হয়। কোনাে নির্দিষ্ট একটি বছরে প্রতি হাজার নারীর সন্তান জন্মদানের মােট সংখ্যাকে জন্মহার বলে। সাধারণত ১ থেকে ৪৫ বা ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়স পর্যন্ত নারীদের প্রজনন ক্ষমতা(Fertility) থাকে। এটি নির্ণয় করা হয় নিম্নোক্তভাবে-

তবে প্রজননশীলতা পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি স্থূল জন্মহার বা Crude Birth Rate (CBR)। এ পদ্ধতিতে কোনাে বছরে জন্মিত সন্তানের মােট সংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মােট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করে নির্ণয় করা হয়। স্থূল জন্মহার নির্ণয়ের জন্য কোনাে দেশ বা অঞ্চলের মােট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে জন্মিত সন্তান সংখ্যা জানা থাকা প্রয়ােজন। তবে প্রজননশীলতা পরিমাপের বহুল প্রচলিত পদ্ধতি স্থূল জন্মহার বা Crude Birth Rate (CBR)। এ পদ্ধতিতে কোনাে বছরে জন্মিত সন্তানের মােট সংখ্যানে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মােট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ কর নির্ণয় করা হয়। স্থূল জন্মহার নির্ণয় করা হয় নিম্নোক্তভাবে-

খ. মৃত্যুহার (Death Rate) :

মরণশীলতাই মানুষে স্বাভাবিক ধর্ম। কিন্তু জন্মহার অপেক্ষা মৃত্যুহার কম হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। আর মরণশীলতা পরিমাপের বহুর প্রচলিত পদ্ধতি স্থূল মৃত্যুহার বা Crude Death Rat (CDR)। নির্দিষ্ট কোনাে বছরে মৃত্যুবরণকারীদের মােট জনসংখ্যাকে উক্ত বছরের মধ্যকালীন মােট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে স্থূল মৃত্যুহার পাওয়া যায়। স্থূল মৃত্যুহার নির্ণয়ের জন্য কোনাে দেশ বা অঞ্চলের মােট জনসংখ্যা এবং ঐ বছরে মৃতের সংখ্যা জানা থাকা প্রয়ােজন। স্থূল মৃত্যুহার নির্ণয় কর হয় নিম্নোক্তভাবে-

গ. অভিগমন (Migration) :

স্থায়ীভাবে বসবাস করা জন্য উৎসস্থল থেকে গন্তব্যস্থলে যাওয়াকে অভিগমন বলে। বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় জনসংখ্যা পরিবর্তনে অভিগমনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কোনাে দেশ বা অঞ্চল থেকে ব্যাপকহারে লােক গমন বা আগমন করলে জনসংখ্যার পরিবর্তন হয়। এক্ষেত্রে যখন একই দেশের অভ্যন্তরে অভিগমন করে তখন দেশের অভ্যন্তরে জনসংখ্যার পরিবর্তন হয়। আবার যখন একদেশ থেকে অন্যদেশে গমন করে, তখন আন্তর্জাতিকক্ষেত্রে জনসংখ্যার পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ বহির্গমনের ক্ষেত্রে জনসংখ্যা হ্রাস পায় এবং বহিরাগমণে ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সাধারণত অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে উন্নত দেশসমূহে অভিগমনের প্রবণতা দেখf যায়। বর্তমানে যােগাযােগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় অভিগমন অত্যন্ত সহজ হয়েছে।

জনসংখ্যা অভিগমনের কারণ, ধরন ও প্রভাবঃ

অভিগমন ও প্রকারভেদ:

আমাদের চারপাশের অসংখ্য মানুষ প্রয়ােজনের তাগিদে প্রতিনিয়ত একস্থান থেকে অন্যস্থানে, একদেশ থেকে অন্যদেশে গমন করছে। যেমন- কর্মসূত্রে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন, জীবিকানির্বাহের জন্য গমন, ব্যবসা, বাণিজ্যের জন্য গমন প্রভৃতি। মানুষের এই গমন কখনাে স্থায়ী আবার কখনাে বা অস্থায়ী হয়ে থাকে। এ সকল যাওয়া-আসার ক্ষেত্রে অনেক সময় মানুষ নিজের বাসস্থল পরিবর্তন করে অন্যত্র সুবিধাজনক স্থানে বসবাস করে। মানুষের এরূপ স্থায়ী বা অস্থায়ী আবাসের পরিবর্তনই হলাে অভিগমন।

জাতিসংঘের মতে, এক বা একাধিক বছরের জন্য বাসস্থানের পরিবর্তনকে অভিগমন বলে। Brain Goodall এর মতে, “Migration is the permanent or semi permanent change of a person’s place of residence”. E.S. Lee অভিগমন সম্পর্কে বলেন, “বাসস্থানের স্থায়ী বা অস্থায়ী পরিবর্তনই হলাে অভিগমন। অভিগমনকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ক. প্রকৃতি অনুযায়ী অভিগমন এবং খ. স্থানভেদে অভিগমন।

ক. প্রকৃতি অনুযায়ী অভিগমন : অনেক সময়ে মানুষ নিজে ইচ্ছায় একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে থাকে। আবার অনেক সময় নিজ বাসস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এ ধরনের অভিগমনকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা- ১. অবাধ অভিগমন এবং ২. বলপূর্বক অভিগমন।

খ. স্থানভেদে অভিগমন : স্থানভেদে অভিগমনকে প্রধানত দু ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- অন্ত:রাষ্ট্রীয় অভিগমন এব আন্তর্জাতিক অভিগমন।

১. অন্ত:রাষ্ট্রীয় অভিগমন (Intra-state Migration) :

অন্ত:রাষ্ট্রীয়, অর্থাৎ একটি রাষ্ট্রের ভৌগােলিক সীমানার অভ্যন্তরে কোনাে ব্যক্তি যখন আবাসস্থান পরিবর্তন করে তখন তাকে অন্ত:রাষ্ট্রীয় অভিগমন বলে। এ ধরনের অভিগমন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সংঘটিত হয়। যেমন- ঠাকুরগাঁও থেকে কেউ যদি বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এসে বসবাস করে তখন তাকে অন্ত:রাষ্ট্রীয় অভিগমন বলে।

২. আন্তর্জাতিক অভিগমন (International Migration) :

কোনাে দেশের মানুষ যখন নিজ দেশের ভৌগােলিক সীমানা অতিক্রম করে অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করে, তখন তাকে আন্তর্জাতিক অভিগমন বলে। অর্থাৎ ‘আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে নিজ দেশের ভৌগােলিক সীমানা অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে। তবে ইচ্ছা করলেই আন্তর্জাতিক অভিগমন করা যায় না। এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধত রয়েছে। কারণ আন্তর্জাতিক অভিগমনের উৎস এবং গন্তব্যস্থান উভয়ের নিজস্ব নীতিমালা রয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অভিগমন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে উত্তর আমেরিকা ইউরােপ, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, চীন, জাপান প্রভৃতি রাষ্ট্র অঞ্চলের মধ্যে।

অভিগমনের কারণ:

মানুষ সাধারণত প্রয়ােজনের তাগিদে নতুবা বাধ্য হয়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে থাকে। আদিকাল থেকেই মানুষের এই গমন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তখনকার দিনে মানুষ খাবার ও নিরাপত্তার প্রয়ােজনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়াতাে। কালক্রমে মানুষের চাহিদার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় অভিগমনের কারণও বহুমাত্রিক রূপ লাভ করেছে। অভিগমন প্রক্রিয়ায় একদিকে প্রভাব বিস্তারকারী উপাদান হিসেবে গন্তব্যস্থলের সুযােগ-সুবিধা, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ইত্যাদি আকর্ষণ করে।

১. অর্থনৈতিক : মানুষ তার অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণের জন্য একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে থাকে। অর্থের প্রয়ােজনে দেশের অভ্যন্তরে অথবা দেশের বাইরেও অভিগমন করতে পারে। বাংলাদেশ সাধারণত অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশ । এ অঞ্চলের মানুষ অধিক অভিগমন করে থাকে।

২. জীবিকার সন্ধান : জীবিকার সন্ধানে মানুষ প্রতিনিয়ত একস্থান থেকে অন্যস্থানে ছুটে চলেছে। যেমন-বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের ক্ষেত্রে গ্রামীণ এলাকা থেকে ঢাকা চট্টগ্রাম, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর প্রভৃতি শহরে জীবিকা সন্ধানে মানুষ ছুটছে। আবার আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরােপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জীবিকার সন্ধানে অভিগমন করছে।

৩. চাকুরি : সরকারি-বেসরকারিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত লােকজন একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে যা অভিগমনের একটি অন্যতম কারণ। বর্তমানে বহুমুখী চাকুরির সুযােগ সৃষ্টি হওয়ায় এটি অভিগমনে বিশেষ ভূমিক রাখছে।

৪. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন : গ্রামের তুলনায় শহরে, ছােট শহরের তুলনায় বড় শহরে, অনুন্নত দেশের তুলনায় উন্নত দেশে জীবনযাত্রার মান ভালাে হওয়ায় মানুষ এ সকল স্থানের প্রতি অধিক আকৃষ্ট হয় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের চেষ্টা করে।

৫. বিশ্বায়ন : অভিগমনের একটি অন্যতম কারণ বিশ্বায়ন। বিশ্বায়নের ফলে মানুষের কাছে সবকিছুই সহজ হয়েছে। মার্শাল ম্যাকলুহান পৃথিবীকে ‘গ্লোবাল ভিলেজ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

৬. নগরায়ন ও শিল্পায়ন : নগরায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত বৃদ্ধি পেতে গ্রামীণ এলাকা থেকে মানুষ নগরে এসে বসবাস শুরু করে। সাধারণত সুযােগ-সুবিধা অধিক থাকায় মানুষ শহরমুখী হতে থাকে। যা নগর এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। নগর এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, অফিস-আদালত প্রভৃতির আধিক্য থাকায় তা সহজেই মানুষকে অভিগমনে আকৃষ্ট করে থাকে। নগর এলাকায় শিল্প ও বাণিজ্য কেন্দ্রের আশেপাশে মানুষের ঘনত্ব বেশি হয়ে থাকে এবং শ্রমজীবি মানুষের একটি বড় অংশ বস্তিতে নিম্নতর জীবনযাপন করে।

অভিগমনের প্রভাব :

অভিগমনের ফলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বহুবিধ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে অভিগমনে উল্লেখযােগ্য প্রভাবসমূহ বর্ণনা করা হলাে-

১. জনসংখ্যার পরিবর্তন :

অভিগমনে উৎস ও গন্তব্যস্থলের জনসংখ্যা পরিবর্তিত হয়। এর ফলে যত লােক উৎসস্থল ত্যাগ করে তত সংখ্যক লােক গন্তব্যস্থলে যুক্ত হয়। এর ফলে উৎসস্থলে লােক কমে গিয়ে গন্তব্যস্থলে বৃদ্ধি পায়। যেমন- বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের লােক রাজধানী ঢাকার দিকে গমন করছে এবং ধারণ ক্ষমতায় অতিরিক্ত জনসংখ্যা বহাল হচ্ছে।

২. কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন :

সাধারণত কর্মের সন্ধানে অধিকাংশ মানুষ একস্থান থেকে অন্যস্থানে গমন করে। গন্তব্যস্থলে যে কোনাে ধরনের কর্ম হােক না কেনাে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। এতে অভিগমনকারীর জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তন হয়। এতে বস্তি এলাকায় বসবাসকারী অভিবাসীদের জীবনযাত্রার মানে তেমন কোনাে পরিবর্তন হয় না। আবার আন্তর্জাতিক অভিগমনের ক্ষেত্রে অভিগমনকারী পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয় এবং অভিবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত হয়।

৩. শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধি :

যেসব শহরে অধিক হারে অভিগমনকারী আগমন করে সেসব শহরে বেকারত্ব বৃদ্ধি পTয়। কারণ অধিক সংখ্যক লােকের কর্মসংস্থান অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না।

৪. অর্থনৈতিক গতিশীলতা :

অভিগমনের ফলে অভিগমনকারীর পরিবারে অর্থনৈতিক গতিশীলতা দেখা যTয়। যেমন- কোনাে ব্যক্তি গ্রাম থেকে শহরে গমন করলে শহর থেকে গ্রামে অর্থ প্রেরণ করে অথবা বিদেশে অভিগমন করলে দেশে বসবাসরত পরিবারের জন্য অর্থ প্রেরণ করে। এতে গ্রামীণ বা শহুরে পরিবারটি অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল হয়।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্যঃ

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাের (বিবিএস) উপাত্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের জনসংখ্যা ৬ কোটি ৫৭ লাখ। এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলােমিটারে প্রায় ১১১৬ জন, যা সারা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট্র বাদে)। এখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৩%। বাংলাদেশে পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০.২:১০০। দেশে অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সী (০-২৫ বছর বয়সীর মােট জনসংখ্যার ৬০%, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা মা ৬%)। এখানকার পুরুষ ও মহিলাদের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর। জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮% মানুষ বাঙালি। বাকি ২% মানুষ বিহারী বংশদ্ভুত, অথবা বিভিন্ন উপজাতির সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩টি উপজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান।

পার্বত্য চট্টগ্রামে বাইরের উপজাতিগুলাের মধ্যে গারাে ও সাঁওতাল উল্লেখযােগ্য। দেশের ৯৮% মানুষের মাতৃভাষা বাংলা, যা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। সরকারী কাজ কর্মে ইংরেজিও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ১৯৮৭ সাল হতে কেবল বৈদেশিক যােগাযােগ ছাড়া অন্যান্য সরকারি কর্মকান্ডে বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দেয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের জনগােষ্ঠীর প্রধান ধর্মবিশ্বাস ইসলাম (৯০.৪%)। এরপরেই রযেছে হিন্দু ধর্ম(৮.৫%), বৌদ্ধ(০.৬%), খ্রীস্টান (০.৩%) এব অন্যান্য (০.১%)। মােট জনগােষ্ঠীর ২১.৪% শহরে বাস করে, বাকি ৭৮.৬% গ্রামাঞ্চলের অধিবাসী। বাংলাদেশের ‘জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ দারিদ্র সীমার নিচে, বাস করে। মােট জনগােষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকে দৈনিক মাত্র ১ মার্কিন ডলার আয় করে (২০০৫)। ২০০৫ সালের হিসাবে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার প্রায় ৪১%। ইউনিসেফের ২০০৪ সালের হিসাবে পুরুষদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৫০% এবং নারীদের মধ্যে ৩১%।

জনমিতিক ট্রানজিশনাল মডেল ও বাংলাদেশঃ

জনমিতিক ট্রানজিশন মডেল ও বাংলাদেশ: জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশসমূহের মধ্যে এদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের সাথে জনসংখ্যার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জনমিতিক ট্রানজিশন মডেলের আলােকে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ জনসংখ্যা উত্তরণের কোন পর্যায়ে রয়েছে তা স্পষ্ট বুঝা যায়। সারণি-তে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ও এর বৃদ্ধির হার দেখানাে হলাে।

সারণি পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে, ১৯১১ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থান ছিল প্রথম পর্যায়ের। এ সময় জন্ম ও মৃত্যুহার উচ্চ ছিল বলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম ছিল। ১৯৫১ সালের পর থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি থাকায় মােট জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ৪8.২ মিলিয়ন যা ১৯৯১ সালে দ্বিগুণের বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে ১১১.৫ মিলিয়ন। বিশ শতকের ৬০ থেকে ৯০ এর দশকে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে উন্নত হতে থাকে। এসময় মৃত্যুহার হ্রাস পেতে থাকলেও এ তুলনায় জন্মহার হ্রাস পায়নি। ফলে এ সময়ে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

আবার ১৯৯১ সালের পর থেকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে যা ২০১১ সালে ১.৪৭% এ দাঁড়ায়। এ সময় জন্ম ও মৃত্যুহার ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেতে থাকে। সুতরাং বলা যায় যে, বাংলাদেশ জনমিতিক ট্রানজিশন মডেলের দ্বিতীয় পর্যায়ের শেষ প্রান্তে এবং তৃতীয় পর্যায়ে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ দ্রুত আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করছে। শিল্পক্ষেত্রেও অগ্রগতি লাভ করছে এবং নতুন নতুন শিল্প স্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ চিকিৎসা ক্ষেত্রেও অনেক দূর এগিয়েছে এবং মৃত্যুহার কমেছে। মানুষের মধ্যে জন্মহার নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা শুরু হয়েছে এবং গড় আয়ু বেড়েছে। এতে জন্ম ও মৃত্যুহার নিম্নমুখী হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ দ্রুতই জনমিতিক ট্রানজিশন মডেলের তৃতীয় পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করা যায়।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.