accounting

৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীরা যথাযথভাবে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি আলোকে অধ্যায় সম্পন্ন করার পর এত কাজ সমাধান করে ১৩ জুলাই ২০২৪ তারিখের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ের বিষয় শিক্ষকের নিকট জমা প্রদান করবে।

৯ম শ্রেণি ৬ষ্ঠ সপ্তাহের এ্যাসাইনমেন্ট ২০২৪ হিসাব বিজ্ঞান

শিক্ষকের যথাযথ স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে ষষ্ঠ সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করে সাপ্তাহিক এ্যাসাইনমেন্ট বিতরণ, গ্রহণ ও মূল্যায়ন ছক ২০২৪ অনুসারে অ্যাসাইনমেন্ট বিতরণ ও মূল্যায়ন সংক্রান্ত তথ্য সংরক্ষণ করবেন।

“হিসাব বিজ্ঞান মানুষের মূল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।” এই সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন লেখ।

উত্তরঃ

তারিখঃ ০৭ জুন, ২০২৪

বরাবর, প্রধান শিক্ষক

বাউসী উচ্চ বিদ্যালয়

নেত্রকোনা

বিষয়ঃ মানুষের মূল্যবােধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাব বিজ্ঞানের ভূমিকা বিষয়ক প্রতিবেদন।

জনাব, বিনীত নিবেদন এই যে, আপনার আদেশ নং হা.আ.সা.উ.বি ০৬/২০২৪ তারিখঃ ০৭ জুন ২০২৪ অনুসারে “হিসাব বিজ্ঞান মানুষের মূল্যবােধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাব বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে” শীর্ষক প্রতিবেদনটি নিম্নে পেশ করছি ।

ভূমিকাঃ হিসাববিজ্ঞান শব্দটি “হিসাব” ও “বিজ্ঞান” শব্দ দুটির সম্মিলিত রূপ। আভিধানিক অর্থে হিসাব বলতে গণনা বুঝায়। পারিভাষিক অর্থে হিসাব বলতে অর্থের দ্বারা পরিমাপযােগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি, দায় ও আয়-ব্যয় সংক্রান্ত লেনদেনের বিবরণকে বুঝায়। অন্যদিকে বিজ্ঞান বলতে কোন বিষয়ে সুসংবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল জ্ঞানকে বুঝায়। সুতরাং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনগুলাে সুশৃঙ্খলভাবে লিপিবদ্ধকরন, সংরক্ষণ, আর্থিক ফলাফল ও অবস্থা নির্ণয় এবং বিশ্লেষণ করার সুসংবদ্ধ জ্ঞানকে হিসাববিজ্ঞান বলে।

হিসাব বিজ্ঞানের ধারণাঃ  হিসাববিজ্ঞান এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আর্থিক কার্যাবলি হিসাবের বইতে সুষ্ঠুভাবে লিপিবদ্ধ করা যায় এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে আর্থিক কার্যাবলির ফলাফল জানা যায় । অর্থাৎ হিসাববিজ্ঞানের জ্ঞান ব্যবহার করে হিসাবের বিভিন্ন বিবরণী ও প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা জানা যায়। এ কারণেই হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়।

A.W. Johnson এর মতে, “অর্থের মাপকাঠিতে পরিমাপযােগ্য ব্যবসায়িক লেনদেনসমূহের সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সুসংবদ্ধ লিপিবদ্ধকরণ, আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুতকরণ, বিশ্লেষণ ও বিশদ ব্যাখ্যাকরণকে হিসাববিজ্ঞান বলে”। এ সকল প্রতিবেদন থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ ব্যবসার পরিচালকগণকে ভবিষ্যত ব্যবসা পরিচালনা বিষয়ে নিদের্শ দিয়ে থাকে।

হিসাব বিজ্ঞানের উদ্দেশ্যঃ হিসাববিজ্ঞানের মূল কাজ হল ব্যয়-উপযােগিতা বিশ্লেষণ, নিরীক্ষণ এবং আর্থিক বিবরণী প্রকাশ । হিসাববিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য হল আর্থিক লেনদেনগুলাে হিসাবের বইতে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধকরণ তা হবে হিসাববিজ্ঞানের নীতি অনুসারে। যদি লিপিবদ্ধকরণ সঠিক না হয় তাহলে হিসাবের আর্থিক বিবরণী তার সঠিকতা হারাবে। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল ও অবস্থা নিরুপন করা হিসাববিজ্ঞানের আরাে একটি উদ্দেশ্য। কারণ হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়, লাভ-ক্ষতি, দেনা পাওনা ইত্যাদির হিসাব ছাড়াও প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় লেনদেনের হিসাব পাওয়া যায়।

হিসাব বিজ্ঞানের উৎপত্তি আধুনিক হিসাব বিজ্ঞানের উৎপত্তি ইতালিতে। ১৪৯৪ সালে ইতালিয়ান গনিতবিদ লুকা প্যাসিওলি গণিতশাস্ত্রের (সুম্মা ডি এরিথিমেটিকা, জিওমেট্রিকা, প্রপােরসােনিযেট, প্রােপােরসনালিটা) উপর একটি বই লেখেন। এই বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ে তিনি হিসাববিজ্ঞানের মূল ভিত্তি দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে আলােচনা করেন।

সমাজ ও পরিবেশের সাথে হিসাব বিজ্ঞানের সম্পর্কঃ হিসাববিজ্ঞান শুধু মুনাফা নির্নয়ে ব্যবহার হয় না। মুনাফা নির্ণয়ের পাশাপাশি ব্যবসার প্রতিষ্ঠা কর্তৃক সমাজ এবং পরিবেশেরও যাতে কোনাে রকম ক্ষতি না হয়, হিসাববিজ্ঞান সেদিকটিতেও অবদান রাখে । যেমনজলবায়ুদূষণ রােধে প্রতিষ্ঠান কিছু অর্থ খরচ করবে এবং হিসাবরক্ষক তার হিসাব রাখবে এবং সে হিসাব থেকে বুঝা যাবে ব্যবসার মালিক সমাজ এবং পরিবেশ সম্পর্কে কতটুকু সজাগ। বিশেষ করে তেল কোম্পানিগুলাে বায়ুদূষণ রােধে অনেক ব্যয় করে থাকে। অথবা শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া অশপাশের পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। ব্যবসায়ের মালিক ও হিসাবরক্ষককে এর প্রতিরােধে অর্থ খরচ করতে হয়, হিসাব রাখতে হয় এবং এ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতিকে অনুসরন করে চলতে হয় ।

হিসাব বিজ্ঞান ও মূল্যবােধঃ হিসাব বিজ্ঞান সমাজ ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য উপাদান হচ্ছে মূল্যবােধ। যে সকল ধারণা; বিশ্বাস, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য মানুষের আচার আচরণকে এবং কার্যাবলীকে পরােক্ষ ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে সে গুলােকে একত্রে মূল্যবােধ বলে। মূল্যবােধ হলাে ব্যক্তি ও সমাজের চিন্তা চেতনা বিশ্বাস ধ্যান-ধারণা প্রভৃতি সমন্বয়ে দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা মানদন্ড যার দ্বারা মানুষ কোন বিষয়ে ভালাে মন্দ বিচার করে থাকে। মূল্যবােধ সৃষ্টিতে হিসাব বিজ্ঞানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

যেমনঃ

(ক) সততা ও দায়িত্ববােধ বিকাশ

(খ) ঋণ পরিশােধে সচেতনতা ।

(গ) সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ববােধ সৃষ্টি।

(ঘ) জালিয়াতি ও প্রতারনা প্রতিরােধ করে তখন জ্ঞান মূল্যবােধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

হিসাব বিজ্ঞান ও জবাবদিহিতাঃ  কোন ব্যক্তির উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব ও বন্টিত কাজ সঠিক ভাবে সম্পূর্ন করে ও তার ফলাফল কারােকাছে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে জবাবদিহিতা বলে। সমাজে বসবাসকারী সকল মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ ভাবে কারাে কাছে জবাবদিহি করে থাকে। জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাববিজ্ঞানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যেমনঃ

১। প্রতিটি দায়িত্বের কেন্দ্রে নিয়ােজিত ব্যক্তিদের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব বন্টন করে দেওয়ার ফলে প্রতিষ্ঠানে অপচয়, অপব্যয়, তহবিল চুরি ও জালিয়াতি কমে যায়।

২। প্রতিটি আর্থিক কর্মকান্ডে হিসাব ব্যবস্থার প্রতিফলিত হয়। এ জন্য প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয় ।

৩। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের মধ্যে দায়িত্ব বন্টন ও উক্ত দায়িত্ব পালনের জন্যে প্রয়ােজনীয় ক্ষমতা প্রদান করা হলে, তারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে নিজের লক্ষ্য হিসাবে গণ্য করে দেবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় মূল লক্ষ্যে পৌঁছায়।

৪। অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ দায়িত্ব পালনে সচেতন হবে ।

উপসংহার: হিসাববিজ্ঞান যেমন সঠিক ভাবে আর্থিক ফলাফল তৈরি করার মাধ্যমে মানুষকে ন্যায় ও অমূল্য চারিত্রিক গঠনে ভূমিকা রাখে। তেমনি হিসাববিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমে হিসাব সচেতনতা বৃদ্ধি পায়, যা একজন মানুষকে তার অর্জিত আয় হতে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে শেখায়। পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, মানুষের মূল্যবােধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টিতে হিসাববিজ্ঞান অনেক অবদান রাখে।

I hope you are enjoying this article. Thanks for visiting this website.