Home শিক্ষা সংবাদ তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শোনা-বলা-পড়া ও লেখার ভিত্তিতেই মূল্যায়ন

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শোনা-বলা-পড়া ও লেখার ভিত্তিতেই মূল্যায়ন

0
শিক্ষা সংবাদ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের শোনা, বলা, পড়া ও লেখা- এ চারটি বিষয়ের ওপর মূল্যায়ন করে পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত করা হবে।

ধারাবাহিক মূল্যায়ন কার্যক্রম ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে করা হবে বলে জানা গেছে। এটি চূড়ান্ত করতে আগামীকাল বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সভা ডাকা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেয়া হবে না। তবে কোন পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হবে, তার একটি ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। এটি নিয়ে সভা ডাকা হয়েছে।

সভায় ন্যাশনাল কারিকুলাম অ্যান্ড টেক্সটবুক বোর্ডের (এনসিটিবি) কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানানো হয়েছে। মূল্যায়ন পদ্ধতি বাস্তবায়নে সভায় একটি টেকনিক্যাল কমিটি করে দেয়া হবে। তারা সারা দেশের অংশীজনের মতামতের মাধ্যমে মূল্যায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করবেন বলে সচিব জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এটি চালু করা হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষের মূল্যায়ন নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে পরবর্তীতে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক স্তরে অর্জন উপযোগী যোগ্যতা বা শিখনফলের ওপর ভিত্তি করে পাঠ্যবই রচনা করা হয়েছে। একইভাবে শিক্ষক নির্দেশিকা রচনা করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এসব যোগ্যতা ও শিখনফল অনুসারে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। যেভাবে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীরা এসব যোগ্যতা ও শিখন অর্জন করছে কি না- তা যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু ধারাবাহিক মূল্যায়নে সেটি সম্ভব হবে।

এ পদ্ধতি মূল্যায়নের মাধ্যমে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা যাবে। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করা সম্ভব হবে। ফিনল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বে এ ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু আছে বলে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান।

ধারাবাহিক মূল্যায়ন: শিখন-শেখানো কার্যক্রম পরিচালনার সময় প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের অর্জনের অগ্রগতি মূল্যায়নের কলাকৌশলই হলো ধারাবাহিক মূল্যায়ন। যে সকল শিক্ষার্থী শিখন-শেখানো কার্যক্রমে পিছিয়ে থাকে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের দুর্বলতা চিহ্নিত করা সম্ভব এবং তা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যোগ্যতাভিত্তিক কারিকুলামে ধারাবাহিক মূল্যায়ন শিখনফল ও বিষয়বস্তুর আলোকে হবে। ধারাবাহিক মূল্যায়ন চারভাবে করা হয়। এগুলো হলো- মৌখিক, লিখিত, পর্যবেক্ষণের মাধ্যম ও কাজ করতে দিয়ে (এসাইনমেন্ট)।

ধারাবাহিক মূল্যায়নের বিষয়ে ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, তিনভাবে ফলাফল সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো হলো- শিখনফল ভিত্তিক বা পাঠ শেষে, প্রান্তিক ভিত্তিক, মিশ্র (প্রথমে মাস ভিত্তিক রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। পরে শিক্ষকরা মূল্যায়ন পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলে শিখনফল ভিত্তিক রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে)।

ধারাবাহিক মূল্যায়নে প্রতিদিন শিক্ষার্থীর দক্ষতা যাচাই করতে হবে শিক্ষকদের। প্রতিনিয়ত ফলাবর্তন প্রদানের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থীকে একইমানে উন্নীত না করা পর্যন্ত এ মূল্যায়ন অব্যাহত রাখতে হবে। নম্বর প্রদানই মূল্যায়নের মূল উদ্দেশ্য নয়। সকল শিক্ষার্থীই প্রায় একই রকম নম্বর পাবে।

ধারাবাহিক মূল্যায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো- শিশুর পাঠের দুর্বল দিক চিহ্নিত করে সঠিক শিক্ষা দেয়া। চারটি দক্ষতা অর্জনেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। পাঠের প্রকৃতি অনুযায়ী একই সঙ্গে শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক মূল্যায়ন সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলে শিক্ষক পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিক মূল্যায়ন শেষ করবেন। প্রতি মাসে একবার করে অন্তত তিনবার ধারাবাহিক মূল্যায়ন রেকর্ড সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতি তিন মাসের প্রাপ্ত নম্বরকে গড় করে সামষ্টিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে যোগ করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে হবে।

বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন: প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ভাষা তথা বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে শোনা, বলা, পড়া ও লেখা- এ চারটি বিষয়ে মূল্যায়ন করা হবে। বিভিন্ন রকম ধ্বনি ও শব্দ শুনে আলাদা করতে পারা, মনোযোগ ও ধৈর্য ধরে শুনতে ও বুঝতে পারা। অর্থাৎ শোনার ক্ষেত্রে শিশুদের আদেশ বা নির্দেশ দিয়ে তা পালন করানো, গল্প বা গল্পের অংশ শুনিয়ে প্রশ্ন করে তার উত্তর বলতে ও লিখতে দিয়ে, নাটিকা ও নাট্যাংশ শুনিয়ে প্রশ্ন করে তার উত্তর বলতে ও লেখার মাধ্যমে, রেডিও, টিভি ও ক্যাসেট শুনিয়ে প্রশ্ন করে তার উত্তর বলতে ও লিখতে দিয়ে, কথোপকথন বা বক্তৃতা শুনিয়ে প্রশ্ন করে তার উত্তর বলতে ও লিখতে দিয়ে, কোনো কিছু শুনিয়ে তার ওপর কোনো কাজ করতে দিয়ে দক্ষতা মূল্যায়ন করতে হবে।

বলার ক্ষেত্রে শিশু শিক্ষার্থীদের স্পষ্টতা, শুদ্ধতা, প্রমিত উচ্চারণ, শ্রবণযোগ্যতা, সঠিক ছন্দে কথোপকথন, প্রশ্ন করা, অনুভূতি ব্যক্ত করা, বর্ণনা করা ও বাচনভঙ্গিও ওপর মূল্যায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন করতে ও উত্তর বলতে দিয়ে, ছবি বা চিত্রের বিষয়বস্তু বলতে বা প্রশ্ন করে উত্তর বলা, গল্প শুনে বলতে দিয়ে, গল্পভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর বলা, ছবি বা চিত্র সাজিয়ে গল্প বলা, ছবি বা চিত্র দেখে সংলাপ বলা, অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা, নির্দেশ বা অনুরোধ করা, ছড়া বা কবিতা আবৃত্তি করতে দিয়ে, নিজের সম্পর্কে বলার মাধ্যমে, ধারাবাহিক গল্প বলা, উপস্থিত নির্ধারিত বক্তৃতা উপস্থাপন করা ও খবর পাঠ করতে দিয়ে।

লেখার বিষয়ে ধারাবাহিক মূলায়নের ক্ষেত্রে এনকোডিং (সঙ্কেত অক্ষরে লেখা), স্পষ্ট ও সঠিক আকৃতিতে লেখা, শব্দভাণ্ডার (শুদ্ধ বানান, সঠিক শব্দ) ও ব্যাকরণ। কোনো শব্দ বা বাক্য লিখতে দিয়ে তা অনুশীলন করানো। কতগুলো নির্দিষ্ট শব্দ দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করতে দেয়া। সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে প্রশ্নোত্তর লিখতে দেয়া। এলোমেলো শব্দ বা বাক্য সাজিয়ে লিখতে দেয়া। সুন্দর লেখার অনুকরণে হাতের লেখা লিখতে দেয়ার মাধ্যমে মূল্যায়ন করতে হবে।

পড়ার ক্ষেত্রে কোনো বিষয়বস্তু পড়তে দিয়ে, পড়ার সময় উচ্চারণ, সাবলীলতা, গতি পরিমাপ করা, শুদ্ধতা, শ্রবণযোগ্যতা যাচাই, পড়ার বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর বলতে ও লিখতে দিয়ে, নির্দেশনামূলক পড়ার বিষয়বস্তু পড়ে তা সম্পাদন করতে দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে।

গণিত মূল্যায়ন: গণিত বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন কাঠামোতে মূল্যায়ন ক্ষেত্র, বিবেচ্য বিষয়, মূল্যায়ন পদ্ধতি (মৌখিক, লিখিত ও পর্যবেক্ষণ) ও মূল্যায়ন টুলস নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল্যায়ন ক্ষেত্র হিসেবে গাণিতিক ধারণা, প্রক্রিয়াগত ধারণা ও সমস্যা সমাধানের মূল্যায়ন করতে হবে।

বিবেচ্য বিষয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যার ধারণা, গাণিতিক সমস্যা সমাধানে কোনো ধরনের গাণিতিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে হবে তা বুঝতে পারা। যেমন : বেশি হওয়া-কম হওয়া, ছোট হওয়া-বড় হওয়া, দূরে-কাছে, অপরিবর্তিত থাকা, বস্তুর আলোকে পরিমাপের একক, জ্যামিতিক আকৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা দেয়া।

গাণিতিক সমস্যা সমাধানে কোন কোন গাণিতিক প্রক্রিয়া (যোগ, বিয়োগ, গুণ বা ভাগ) কেন ব্যবহার করতে হয় তা বুঝতে পারা। গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ধাপ সম্পর্কে জানা। ভিন্ন ভিন্ন গাণিতিক প্রক্রিয়া ব্যবহারের কৌশল জানা। যেমন- হাতে রেখে ও না রেখে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি। গাণিতিক কৌশল সম্পর্কে যৌক্তিক ব্যাখ্যা বুঝতে পারা।

অর্থাৎ ধারাবাহিকভাবে গাণিতিক সমস্যার সমাধানের কৌশল (কোনটি, কীভাবে করতে হবে তা) সম্পর্কে সম্যক ধারণা। গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারা। বাস্তব জীবনের সঙ্গে গাণিতিক সমস্যাকে মিল করতে পারা মূল্যায়ন করা হবে।

মূল্যায়ন পদ্ধতির (মৌখিক, লিখিত ও পর্যবেক্ষণ) ক্ষেত্রে শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে শিখন-শেখানোর কৌশল হিসেবে টুলস (প্রশ্নপত্র, চেকলিস্ট) তৈরি করবেন এবং পাঠ চলাকালীন ব্যবহার করবেন। ১ম শ্রেণির শিশুদের মৌখিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে- শিক্ষক বোর্ডে ১১ থেকে ২০ পর্যন্ত সংখ্যা এলোমেলোভাবে লিখবেন। ক্রম অনুযায়ী সাজাতে হলে কীভাবে তা করবে সে বিষয়ে শিক্ষাথীদের কাছে জানতে চাইবেন।

২য় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের লিখিত মূল্যায়নের ক্ষেত্রে উদহারণ হিসেবে বলা হয়েছে- শিক্ষার্থীদের একটি কাগজ সমান চার ভাগ করে একভাগ রঙ করতে এবং রঙ করা অংশটি ভগ্নাংশে লিখতে বলবেন শিক্ষক। তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক বোর্ডে ছবি এঁকে ছবিতে কী কী আকৃতি আছে, তা শনাক্ত করে খাতায় লিখতে বলবেন।

বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় মূল্যায়ন পদ্ধতি: এ বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষক পাঠদান চলাকালীন বা পাঠ শেষে শিক্ষার্থীর বিষয়জ্ঞান, সামাজিক দক্ষতা এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি মূল্যায়ন করবেন। শিক্ষার্থীর সমাজ ও পরিবেশ বিষয়ে জানা, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার বিষয়ে মূল্যায়ন করবেন। অর্থাৎ শিক্ষার্থী কোনো তথ্য বা অভিজ্ঞতা স্মরণ করা, অনুধাবন করা, কোনো ধারণাকে নতুন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা এবং সৃজনশীল হবে।

শিক্ষক সংশ্লিষ্ট পাঠ বা পাঠগুলোর শিখনফল অর্জনের লক্ষ্যে বিষয়জ্ঞান যাচাই করবেন। আগে শেখানো কোনো তথ্য বা অভিজ্ঞতা স্মরণের মানসিক ক্ষমতা। কোনো বিষয়ের অর্থ সঠিকভাবে অনুধাবন করা বা বুঝতে পারা। পূর্বে শেখানো কোনো ধারণা, নীতি, পদ্ধতি বাস্তবে নতুন ক্ষেত্রে ব্যবহারের সক্ষমতা। কোনো কিছু সংগঠিত করা এবং সামগ্রিক রূপ দেয়া। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী সৃজনশীল হবে। বিষয়ভিত্তিক পাঠদান শেষে শিক্ষকরা চেকলিস্ট ব্যবহার করে শিক্ষার্থীর বিষয়জ্ঞান যাচাই করবেন।

শিক্ষার্থীর সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ে দক্ষতা: সামাজিক দক্ষতার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আচরণিক পরিবর্তন হবে। অর্থাৎ তার চর্চার ক্ষেত্রসমূহ প্রসারিত হবে। শিক্ষার্থী তথ্য সংগঠন বিশ্লেষণ অনুসন্ধান ও গবেষণা করার দক্ষতা অর্জন করবে।

পরিবেশের উপাদানের গুরুত্ব, পরিবেশের প্রতি ভালোবাসা ও পরিবেশের যত্ন ও রক্ষা করা, শিক্ষার্থীর অধিকার, বাস্তবে এর যথাযথ ব্যবহার এবং পরিবার ও রাষ্ট্রের প্রতি নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য, মিলেমিশে থাকা, অন্যকে সাহায্য করা, ভালো-মন্দের পার্থক্য, দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, দেশের সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ করার বিষয়ে শিক্ষক শেখাবেন। এসব বিষয়ে শেখানোর সময় শিক্ষার্থীকে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করবেন শিক্ষক।

প্রাথমিক বিজ্ঞান মূল্যায়ন পদ্ধতি: এ বিষয়ে জানা, অনুধাবন, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা বিষয়ে ধারাবাহিক মূল্যায়ন করা হবে। আগে শেখানো কোনো বিশেষ তথ্য বা অভিজ্ঞতা স্মরণ করার মানসিক ক্ষমতা। যেমন- সংজ্ঞা দেয়া, পুনরাবৃত্তি, লিপিবদ্ধ করা, তালিকা মৌখিক ও লিখতে পারার ওপর মূল্যায়ন করা হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক কাগজ-কলমে বা লেখা বা চিত্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখাবেন। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে- শিক্ষক বায়ুর চার উপাদানের নাম জানতে চাইবেন।

পাঠদান শেষে শিক্ষার্থীর অনুধাবন মূল্যায়ন করা হবে। অর্থাৎ কোনো বিষয়ের অর্থ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারছে কিনা। যেমন- ব্যাখ্যা করা, শনাক্ত করা, চিহ্নিত করা, আলোচনা করা। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে- কীভাবে পানির অপচয় রোধ করা যায়।

শেখানো কোনো ধারণা, পদ্ধতি, নীতি, তত্ত্ব বা সূত্রকে বাস্তবে নতুন ক্ষেত্রে ব্যবহারের প্রয়োগ করার বিষয়ে শিক্ষার্থীর জ্ঞান মূল্যায়ন করা হবে। যেমন- ‘শিক্ষা প্রযুক্তি কীভাবে কাজে লাগাবে’ শিক্ষার্থীকে তা ব্যাখ্যা করতে বলবেন শিক্ষক।

উচ্চতর দক্ষতা বিষয়ে মূল্যায়ন অর্থাৎ কোনো সমগ্র অংশ পৃথক করা, পৃথককৃত অংশ একত্রিত করে সামগ্রিক রূপ দেয়া, কোনো কিছু সংগঠিত করা এবং কোনো কিছুর মূল্যমান বিচার করার বিষয়ে দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে। যেমন- পরিকল্পনা, পৃথক করা, গণনা করা, শ্রেণিবদ্ধ করা, পরিমাপ করা, গঠন, মূল্য নিরূপণ করা, নির্বাচন করা, বোঝাতে পারা, প্রকাশ করা ইত্যাদি।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীকে শেখানোর পরে শিক্ষক মূল্যায়ন করবেন। উদাহরণ স্বরূপ- যদি আমরা নিয়মিত দাঁত ব্রাশ না করি, তাহলে দাঁতের কী সমস্যা হতে পারে? শিক্ষক শিক্ষার্থীকে লিখিতভাবে মূল্যায়ন করবেন।

…………………………………………………………

  • প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ,
  • তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা থাকছে না,
  • প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর মেয়াদ দুই বছর হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীতে কোনো ধরনের পরীক্ষা থাকছে না। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই এই তিন শ্রেণীতে সব ধরনের পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এই তিন শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি, স্কুল থেকে দেয়া ডায়েরির রিপোর্টই মূল্যায়নের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হতে পারে। পরীক্ষার চাপ যেন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে বাধা হতে না পারে, সেজন্যই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করারও চিন্তাভাবনা চলছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেনের দৌরাত্ম্য কমিয়ে ৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়মুখী করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে কোনো ধরনের পরীক্ষা নেয়া হয় না।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণী থেকে তৃতীয় শ্রেণীর সব পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শিশুর ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমাতে ফিনল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের আদলে শিক্ষাব্যবস্থা সাজানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর করার চিন্তা করা হচ্ছে।

এছাড়া আগামী বছর থেকে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে বর্ধিত করে দুই বছর মেয়াদ করার চিন্তাভাবনা চলছে। একই সঙ্গে স্কুলকে আকর্ষণীয় করতে প্রতিটি স্কুলে ‘কাব স্কাউট’ গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

১৩ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৪ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুকে পড়াশোনার জন্য অতিরিক্ত চাপ না দিতে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমি এটুকুই বলব, কোনোমতেই যেন কোমলমতি শিশুকে কোনো অতিরিক্ত চাপ না দেয়া হয়। তা হলেই দেখবেন তারা ভেতরে একটা আলাদা শক্তি পাবে।

আর তাদের শিক্ষার ভিতটা শক্তভাবে তৈরি হবে। কোমলমতি বয়সে লেখাপড়ার কঠোর শৃঙ্খলে আবদ্ধ করাকে তিনি ‘একধরনের মানসিক অত্যাচার’ বলে অভিহিত করে বলেন, শিশু প্রথমে স্কুলে যাবে এবং হাসি-খেলার মধ্য দিয়ে লেখাপড়া করবে।

তারা তো আগে থেকেই পড়ে আসবে না, পড়ালেখা শিখতেই তো সে স্কুলে যাবে। প্রধানমন্ত্রী শিশুর পাঠদান সম্পর্কে নিজস্ব অভিব্যক্তি সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে গিয়ে আরও বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই ৭ বছরের আগে শিশুকে স্কুলে পাঠায় না।

আমাদের দেশে অনেক ছোটবেলা থেকেই বাচ্চারা স্কুলে যায়। কিন্তু তারা যেন হাসতে, খেলতে, মজা করতে করতে পড়াশোনাটাকে নিজের মতো করে করতে পারে, সেই ব্যবস্থাটাই করা উচিত।

সেখানে অনবরত ‘পড়’, ‘পড়’, ‘পড়’ বলাটা বা ধমক দেয়াটা বা আরও বেশি চাপ দিলে শিক্ষার ওপর তাদের আগ্রহ কমে যাবে, একটি ভীতির সৃষ্টি হবে। শিক্ষার প্রতি সেই ভীতিটা যেন সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আমি আমাদের শিক্ষক এবং অভিভাবকদের অনুরোধ করব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় আমরা দেখি প্রতিযোগিতাটা শিশুর মধ্যে না হলেও বাবা-মায়ের মধ্যে একটু বেশি হয়ে যায়। এটাকেও আমি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা বলে মনে করি।

তিনি বলেন, সব শিক্ষার্থীর সমান মেধা থাকবে না এবং সবাই সবকিছু একরকম করায়াত্ত করতে পারবে না। যার যেটি যেভাবে সহজাতভাবে আসবে, তাকে সেটি গ্রহণ করার সুযোগ দেয়া, যেন শিক্ষাকে সে আপন করে নিয়ে শিখতে পারে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণশিক্ষা সচিবকে আগামী বছর থেকে প্রাথমিক স্তরের প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর সব পরীক্ষা তুলে দেয়ার নির্দেশ দেন।

ফিনল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওইসব দেশে বাচ্চাদের কোনো পরীক্ষা নেই। তারা কীভাবে শিশুর মেধার মূল্যায়ন করে, সেসব বিষয় খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনে কমিটি গঠন করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্লাসের পরীক্ষা যেন শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য কোনো ধরনের বাধা হতে না পারে, সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন তিনি।

২০১৪ সাল থেকে সারা দেশে চালু হওয়া প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শিশু এরই মধ্যে সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে জানিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম আল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তাদের পাসের হারও ভালো।

২০২৪ সালে যেখানে তাদের পাসের হার ছিল ৯৫.১৮ শতাংশ, সেখানে ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৯ শতাংশে। প্রায় আড়াই শতাংশ বেড়েছে। কমেছে ড্রপ আউটের হারও। এই সফলতা ধরে রাখতে প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দুই বছর করা হচ্ছে।

এজন্য চলতি বছর ১৭ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার। পাশাপাশি আগামী ৫ বছরে আরও প্রায় ৭০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুকে স্কুলে আনতে এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পলিসি পেপার তৈরি করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকার পিটিআইতে এ সংক্রান্ত কর্মশালা হবে। কর্মশালার বক্তাদের মতামতের ভিত্তিতে তৈরি করা প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে তা বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার কথা বলা হয়েছে।